২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৬:১০:১৩ অপরাহ্ন
বিমানবন্দর কাস্টমের গুদামের সোনা গায়েব, হিসাব মিলছে না এখনো
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৯-২০২৩
বিমানবন্দর কাস্টমের গুদামের সোনা গায়েব, হিসাব মিলছে না এখনো

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢাকা কাস্টম হাউসের গুদাম থেকে গায়েব করা ৫৫ কেজি ৫১ গ্রাম সোনার হিসাব এখনো মিলছে না। গুদামে থাকা বিভিন্ন সোনায় একই ডিএম (আটক রসিদ) নম্বর বসিয়ে বাইরে বের করা হয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, ওই সোনা চুরির সঙ্গে অন্তত ১৪ জন কাস্টমস কর্মকর্তা জড়িত। গ্রেপ্তার আটজনের মধ্যে তাঁদের চারজন রয়েছেন। গুদাম থেকে উদ্ধার করা ৯৪ ভরি সোনা চুরি ধামাচাপা দিতে বাইরে থেকে কিনে আনা হয়েছিল।

সোনা চুরির মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ২০২০ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধাপে ধাপে ওই সোনা গুদাম থেকে সরানো হয়েছে। একই ডিএম নম্বর ব্যবহার করায় সহজেই গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিতে পেরেছে।

সোনা চুরির বিষয়টি জানাজানি হলে ৩ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দর থানায় চুরির মামলা হয়। এই মামলায় চার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম, মো. সাইদুল ইসলাম সাহেদ, আকরাম শেখ ও মো. মাসুম রানা এবং চার সিপাহি মো. মোজাম্মেল হক, নিয়ামত হাওলাদার, মো. রেজাউল করিম ও মো. আফজাল হোসেন গত বুধবার থেকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। তাঁদের শুরুতে হেফাজতে নেওয়া হলেও বুধবার গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়। 

ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, একই ডিএম নম্বর বারবার বসিয়ে একই কাগজ দিয়ে সোনা বের করা হয়েছে। জড়িত ব্যক্তিরা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সামনে দিয়ে একই কাগজ দেখিয়ে কয়েক দফায় সোনা বের করেছেন। 

জানতে চাইলে ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার এ কে এম নুরুল হুদা আজাদ গতকাল বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে আটজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। তদন্তে যাঁরাই এই সোনা চুরির সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণিত হবেন, আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেব।’ তিনি বলেন, গুদামের সোনা গণনা শুরু হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কী পরিমাণ সোনা চুরি হয়েছে, তা দ্রুতই বোঝা যাবে।

ঢাকা কাস্টম হাউসের সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ আগস্ট গুদাম থেকে ছয়টি ডিএম নম্বরের সোনা চুরির তথ্য পান কাস্টমসের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তখন গুদামের দায়িত্বে থাকা চার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাকে যেকোনো মূল্যে সোনা মিলিয়ে রাখার নির্দেশ দেন তাঁরা। তখন তাঁরা বাইরে থেকে সোনা এনে গুদামে রাখেন এবং যে ছয়টি ডিএম নম্বরের সোনা চুরি হয়েছে, ওই সোনায় সেই নম্বর লিখে রাখেন। কিন্তু পরে গুদামের সোনা গণনা করতে গিয়ে দেখা যায় ৫৫ কেজি ৫১ গ্রাম সোনা কম। এরপরই বিষয়টি পুলিশকে জানায় কাস্টমস। 

গুদাম থেকে ডিবির উদ্ধার করা ৯৪ ভরি সোনার বিষয়ে কাস্টমসের এক কর্মকর্তা বলেন, এগুলো চোরাই সোনা নয়, বাইরে থেকে কিনে আনা। প্রথম পর্যায়ে যে ছয়টি ডিএম নম্বরের সোনা পাওয়া যাচ্ছিল না, পরে সেগুলো খুঁজে পাওয়া যায়। ফলে বাইরে থেকে এনে গুদামে মিলিয়ে রাখা সোনার ডিএম নম্বর এবং পরে খুঁজে পাওয়া সোনার ডিএম নম্বর দ্বৈত হয়ে যায়।  

ডিবি উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) বদরুজ্জামান জিল্লু বলেন, বাইরে থেকে সোনা কিনে গুদামে রাখা এবং একই ডিএম নম্বর বসানো হলে এটা আরও বড় অন্যায়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। 

শেয়ার করুন