২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ১২:১১:১৬ পূর্বাহ্ন
ইজারার মাধ্যমে ফের চালু হচ্ছে খুলনার দুই পাটকল
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৯-২০২৩
ইজারার মাধ্যমে ফের চালু হচ্ছে খুলনার দুই পাটকল

খুলনা অঞ্চলের বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের মধ্যে দুটি জেজেআই ও দৌলতপুর জুট মিল ইজারার মাধ্যমে আবার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে পাটকল দুটি হস্তান্তর করা হয়েছে ইজারাগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের কাছে। তারা আগামী মাসের মাঝামাঝি কারখানা দুটি চালুর প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে জানা গেছে। তবে নতুন ব্যবস্থাপনায় আস্থা পাচ্ছেন না চাকরিহারা উভয় পাটকলের শ্রমিকরা। তাদের দাবি, ইজারার পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় আবার পাটকল দুটি চালু হোক।


বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের সমন্বয়কারী গোলাম রব্বানী জানান, খালিশপুর শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত দৌলতপুর জুট মিল ফরচুন গ্রুপকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর কারখানাটি হস্তান্তর করা হয়। ফরচুন গ্রুপ কারখানা চালুর জন্য এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। তাদের মাসিক ভাড়া সাড়ে ৯ লাখ টাকা। এরই মধ্যে ফরচুন দুই বছরের ভাড়া অগ্রিম দিয়েছে বিজেএমসিকে। এ ছাড়া প্রায় দেড় মাস আগে যশোরের রাজঘাট এলাকার জেজেআই জুট মিল ইজারাগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপকে হস্তান্তর করা হয়। তারাও আগামী মাসে কারখানাটি চালু করতে পারে। চুক্তি অনুযায়ী, ৩০ মাসের মধ্যে পাটকলগুলো চালু করতে হবে।


বিজেএমসি সূত্রে জানা গেছে, খুলনার ক্রিসেন্ট, খালিশপুর, ইস্টার্ন এবং যশোরের কার্পেটিং জুট মিলও ইজারার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। মাসখানেকের মধ্যে অনুমোদন মিলতে পারে। খুলনার স্টার ও প্লাটিনাম জুট মিল ইজারা দেওয়ার জন্য আবারও দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে। তবে আলীম জুট মিলের মালিকানা নিয়ে মামলা থাকায় ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করা যায়নি। আঞ্চলিক সমন্বয়কারী গোলাম রব্বানী জানান, আগে পাটকলগুলোতে যেসব পণ্য উৎপাদন হতো, ইজারাগ্রহীতারা এখনও একই পণ্য উৎপাদন করবেন। আগে যেসব শ্রমিক কারখানাগুলোতে কাজ করতেন, তাদের মধ্যে যারা কর্মক্ষম, তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে। কারণ তাদের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। যদিও নিয়োগের ক্ষেত্রে ইজারাগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা রয়েছে।


বন্ধ মিল চালু হলে শ্রমিক নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে ফরচুন গ্রুপ ও আকিজ গ্রুপের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে রাজি হননি। তবে দৌলতপুর জুট মিল কারখানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, মিল বন্ধের পর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সব শ্রমিকের বকেয়া টাকা এখনও পরিশোধ করা হয়নি। আমাদের দাবি ছিল, মিলগুলো আধুনিকায়ন করে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় চালু করা হোক। কিন্তু আমাদের দাবি উপেক্ষা করে মিল ইজারা দেওয়া হয়েছে।


পাটকল রক্ষায় গঠিত সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, শ্রমিকদের দাবি ইজারার মাধ্যমে নয়, রাষ্ট্রীয় মালিকানায় রেখে মিলগুলো আবার চালু করা হোক। এ দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে গত ৪ সেপ্টেম্বর শ্রমিকরা সভাও করেন।


প্লাটিনাম জুট মিল সিবিএর সাবেক সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, ইজারার মাধ্যমে মিল চালুর পর আগের শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়া হবে কিনা এবং বেতন কাঠামো কী হবে, তা আমরা জানি না। আমাদের দাবি, শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে যেন আগে কর্মরতদের অগ্রাধিকবার দেওয়া হয়। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত থাকাকালে যে বেতন কাঠামো ছিল, তা বহাল রাখার দাবি জানান তিনি।


বিজেএমসি সূত্রে জানা গেছে, বন্ধ ৯টি মিলের কাছে ২১৪ জন শ্রমিক নগদ ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং ১ হাজার ৩১৫ জন শ্রমিকের ৭৭ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র পাওনা রয়েছে। কিছুসংখ্যক শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা, নামের ভুলসহ বিভিন্ন প্রকার জটিলতা থাকায় তারা এখনও সব টাকা পাননি।


লোকসানের কারণ দেখিয়ে ২০২০ সালের ২ জুলাই রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকল বন্ধ করে দিয়েছিল সরকার। এর ফলে বেকার হয়ে পড়েন প্রায় ৪১ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। তখন ইজারার মাধ্যমে আধুনিকায়ন করে তিন মাসের মধ্যে মিলগুলো আবার চালু করার ঘোষণা দিয়েছিল বিজেএমসি।


শেয়ার করুন