নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার জাগলার চরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অন্তত ৮ থেকে ১০ জন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে হাতিয়া উপজেলার সুখচর ইউনিয়নের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সীমান্তবর্তী জাগলার চর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে একজন নিহতের পরিচয় নিশ্চিত করেছে। তিনি হলেন আলাউদ্দিন (৪০)। তিনি সুখচর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চর আমান উল্যাহ গ্রামের ছেরাং বাড়ির মহিউদ্দিনের ছেলে। অপর চারজন নিহতের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
হাতিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জাগলার চরের জমি এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কাউকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি। এ সুযোগে গত ৫ আগস্টের পর জাহাজমারা ইউনিয়নের কোপা সামছু বাহিনী ওই চরের একাধিক জমি বিক্রি করে। পরে সুখচর ইউনিয়নের আলাউদ্দিন বাহিনী ওই জমির দখল নিতে তৎপর হয়ে ওঠে এবং আরও বেশি দামে জমি বিক্রি করে বলে অভিযোগ রয়েছে। একপর্যায়ে উভয় পক্ষ আলাদাভাবে চরের জমি বিক্রির চেষ্টা চালালে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে।
অভিযোগ রয়েছে, চর দখলের সঙ্গে যুক্ত ডাকাত আলাউদ্দিনের সঙ্গে সুখচর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি বেলায়েত হোসেন সেলিম, আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম মেম্বার ও বিএনপি নেতা নবীর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তাদের সহযোগিতায় কোপা সামছু বাহিনীকে চর থেকে বিতাড়িত করতে আলাউদ্দিন বাহিনীর সঙ্গে আঁতাত করা হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিকবার উত্তেজনা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার সকালে জমি দখলকে কেন্দ্র করে কোপা সামছু ও আলাউদ্দিন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে গোলাগুলিতে জড়িয়ে পড়ে। এতে আলাউদ্দিনসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় আলাউদ্দিনকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর চারজনের মরদেহ ঘটনাস্থলেই পড়ে ছিল।
স্থানীয়দের ধারণা, সংঘর্ষে তিনটি বাহিনী— ফরিদ কমান্ডার, শামসু বাহিনী ও আলাউদ্দিন বাহিনী— জড়িয়ে পড়ে। এতে শামসু বাহিনীর প্রধান সামসুদ্দিন ও আলাউদ্দিন বাহিনীর প্রধান আলাউদ্দিন নিহত হয়েছেন। তবে ফরিদ ডাকাত তার বাহিনী নিয়ে পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে জাগলার চর এলাকায় চরম উশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। সংঘর্ষের সময় বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে এবং বাহিনীগুলো চর থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা হাছান উদ্দিন বলেন, চর দখলকে কেন্দ্র করে তিন বাহিনীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল, যার জেরে এই ভয়াবহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সুখচর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি বেলায়েত হোসেন সেলিমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
হাতিয়া থানার ওসি মো. সাইফুল আলম বলেন, “নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে একটি মরদেহ রাখা আছে এবং ঘটনাস্থল থেকে চারটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় পুলিশ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সক্ষম হয়। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।”

