চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকৃত৬ কর্মকর্তাসহ আরও ৬টি অনুষদের ৬জন ডিনকে বাদ হলো। এ নিয়ে ধারাবাহিক কয়েকটি সংবাদ প্রকাশের পর গতকাল শনিবার মোট ১২ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এক অফিস আদেশ জারি করে রেজিষ্ট্রার আনোয়ারুল কাদেরকে দিয়ে অব্যাহতি পত্র প্রদান করা হয়। যদিও রেজিস্ট্রার আনোয়ারুল কাদের নিজেও একজন চুক্তিভিত্তিকে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা। ৬ জনের নিয়োগ বাতিল করা হলেও রেজিস্ট্রার আনোয়ারুল কাদেরসহ আরও চারজন কর্মকর্তা থাকলেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া। আনোয়ারুলকে কাদের মোট চার বার নিয়োগ দেওয়া হয়।
এদিকে, ১২ জনকে অব্যাহতি দেওয়ার পাশাপাশি একই সঙ্গে রামেবির ১৩টি পদের জন্য ১৩ জন কর্মকর্তাকে স্থায়ী নিয়োগের জন্য গতকাল পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় পত্রিকায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আনোয়ারুল কাদের স্বাক্ষরিত এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করা হয়।
রামেবি সূত্র মতে, গতকাল শনিবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা ৬ কর্মকর্তা হলেন, উপ-রেজিস্টার ডা. আমিন আহমেদ, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ডাক্তার সারওয়ার জাহান, সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ডাক্তার আমির হোসেন, সহকারী পরিচালক পরিকল্পনা উন্নয়ন মোঃ আশরাফ, উপ-পরিচালক অর্থ হিসাব মোঃ আখতার হোসেন ও সরকারি পরিচালক অর্থ হিসাব মোঃ মফিজউদ্দিন। তবে এই ছয়টি বিভাগে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া ৬জন এখনো বহাল রয়েছেন। যাঁদের মধ্যে অনেকেই নানা অনিয়ম-দূর্নীতিতে জড়িত।
বিশেষ করে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক প্রকৌশলী ও বর্তমানে রামেবি’র পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের পরিচালক সিরাজুম মনিরের বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যাপক অভিযোগ। রামেবি স্থাপন প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী জমি অধিগ্রহণের পরে ডিজাইন কন্সালটেশনসহ অন্যান্য পদে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ করতে হবে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ না হতেই গত প্রায় দুই বছর ধরে রামেবিতে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তিনজনকে। এর মধ্যে দুজনকে বাদ দেওয়া হয়। তবে এখনো বহাল থাকলেন সিরাজুম মনির।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ৮টি অনুষদের জন্য অবৈধ ভাবে ৮জন ডিন নিয়োগ দেওয়া হয় অস্থায়ী ভাবে। যাঁদের প্রত্যেককে মাসিক সম্মানি দেওয়া হতো। তাঁদের মধ্যে গতকাল ৬ জনকে বাতিল করা হয়। এই ছয়টি অনুষদের অনুমোদন ও ছিল না। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দ্বারা ডিন নিযুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও সেটিও হয়নি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকই নিয়োগ হয়নি।
তার পরেও এখনো দুটি অনুষদে দুজন ডিনকে অবৈধভাবে রাখা হলো। বাদ পড়া ৬টি অনুষদের ডিনরা হলেন, মেডিসিন বিভাগের ডিন ও বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ডা. হোসেন, নার্সিং অনুষদের ডিন ও নীলফামারী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. রবিউল ইসলাম, ডেন্টাল অনুষদের ডিন ও নওগাঁ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক বুলবুল হাসান, প্যারা ক্লিনিক্যাল ডিন ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান খান বাদশা, একই মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ডা. আসাফুদৌলা (শ্যামল) ও অধ্যাপক ডা. জাওয়াদুল হক।
যে দু’টি অনুষদের ডিন এখনো থাকলেন-তাঁরা হলেন, মেডিসিন অনুষদে ডিন ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক নওসাদ আলী এবং সার্জারি অনুষদের ডিন ও একই মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ হাবিবুল্লাহ সরকার।
জানতে চাইলে রামেবির ভিসি এ.জেড.এম মোস্তাক হোসেন বলেন, ‘ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া ৬জনসহ ১২ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আরও একজনকে বাদ দেওয়া হবে। একেবারে যাঁরা না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন চালানো কঠিন হবে, কেবল সেসব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া কয়েকজনকে রাখা হয়েছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এসব পদেও স্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি রামেবি’তে ১৩ কর্মকর্তার অবৈধ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগসহ বেশকয়েকটি অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশিত হলে প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ও বিশ্ববিদ্যালয়টি অভিযানে যায় দুর্নীতি দমন কমিশনরে একটি দল। দুদকের দলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নথিপত্র সংগ্রহ করে। এখনো অনুসন্ধান অব্যাহত রেখেছে।