২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৩:১৪:৩৯ অপরাহ্ন
নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে সংলাপ নিয়ে দূরত্ব
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৯-২০২৩
নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে সংলাপ নিয়ে দূরত্ব

জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে গত সপ্তাহে দেশের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপ এবং সংলাপ-পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। সংলাপের পরপরই জামালপুরের ডিসিকে প্রত্যাহারে নির্বাচন কমিশন যে চিঠি পাঠিয়েছে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে কোনো কোনো কমিশনারের। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও দুইজন কমিশনারের সইয়ে ওই চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। তবে কমিশনারদের বড় অংশ মনে করছে, সাম্প্রতিক এ সংলাপের ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে চলমান সংকট নিরসনে নির্বাচন কমিশন ও রাজনীতিকদের কার কী দায়িত্ব ও এখতিয়ার, তা আবারও আলোচনায় এসেছে। রাজনৈতিক সংকট সমাধানের দায়িত্ব রাজনীতিকদেরও রয়েছে-এ বার্তা দিতে পেরেছে কমিশন। তারা এ ধরনের আরও সংলাপ করার পক্ষে। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।


সূত্র আরও জানায়, সংলাপের পর থেকে নির্বাচন কমিশনাররা বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলছেন না। রোববার একাধিক কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও এসব বিষয়ে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল আজ সাংবাদিকদের ব্রিফ করার কথা রয়েছে। 


এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের আগেভাগেই প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। চলতি মাসের শেষ বা আগামী মাসের শুরু থেকে ধাপে ধাপে বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, ডিসি, পুলিশ সুপার ও ইউএনওদের এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বিষয়টি জানিয়ে এবং ওইসব কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জননিরাপত্তা বিভাগকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠাতে যাচ্ছে কমিশন।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ যুগান্তরকে বলেন, আরপিওতে কিছু সংশোধনী এসেছে, নির্বাচনব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন আছে এবং এবার নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে উৎসাহিত করা হবে। এসব বিষয়ে ব্রিফিং দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রশিক্ষণ কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। 


সংলাপ নিয়ে দূরত্ব : রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে বুধবার ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন : প্রত্যাশা ও বাস্তবতা’ শীর্ষক সংলাপের আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন। জানা যায়, ওই সংলাপের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান। প্রথা ভেঙে সংলাপ পরিচালনাও করেন তিনি। সংখ্যাগরিষ্ঠ কমিশনারের সম্মতিতেই ওই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। তবে কোনো কোনো কমিশনার সংলাপ আয়োজনের বিষয়টি মন থেকে মেনে নেননি। তারা সরাসরি সংলাপ আয়োজনের বিরোধিতাও করেননি। তবে নির্বাচন কমিশন একটি ভালো নির্বাচন করতে চায় এবং ভালো নির্বাচন আয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা রয়েছে-সংলাপে বিশিষ্টজনদের এমন বক্তব্যে খুশি বেশির ভাগ নির্বাচন কমিশনার। এ সংলাপের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়দায়িত্ব এবং নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম উঠে এসেছে বলেও মনে করেন তারা।


আরও জানা যায়, সংলাপের দিনই জামালপুরের ডিসি মো. ইমরান আহমেদকে প্রত্যাহার করে নেওয়া এবং আগামী সংসদ নির্বাচনে তাকে নির্বাচনি কোনো দায়িত্ব না দেওয়ার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠি দেয় কমিশন। ওই ডিসি আওয়ামী লীগ সরকারকে পুনরায় ক্ষমতায় আনার জন্য সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ইসির সংলাপে কয়েকজন বক্তা এর সমালোচনা করেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেন। ওই সংলাপ শেষ হওয়ার পরই ইসি এ চিঠি দেয়। 


এ চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদনে সই করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান ও মো. আনিছুর রহমান। এ ধরনের চিঠি দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি ছিল নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীরের। ওইদিন মো. আলমগীর অফিসও করেন। তবে এ সংক্রান্ত ফাইল যখন অনুমোদন করা হয়, তখন তিনি অফিসে ছিলেন না। তার অনুপস্থিতিতেই এ চিঠি পাঠানো হয়। বিষয়টি এ কমিশনার ভালোভাবে নেননি বলে জানিয়েছেন ইসির ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা। আরেক নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা অসুস্থ থাকায় ওইদিন নির্বাচন কমিশনেই যাননি। এ বিষয়ে জানতে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান ও মো. আনিছুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 


তফশিল ঘোষণার আগেই মাঠ প্রশাসনের প্রশিক্ষণ : জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগেই এবার মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেবে ইসি। প্রশিক্ষণের কারণ ও ধরন সম্পর্কে ইসি বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য নির্বাচনি আইন ও বিধির সংশোধন, হালনাগাদ তথ্য অবহিতকরণ এবং সার্বিক নির্দেশনা দিতে এ আয়োজন করা হচ্ছে। বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, ডিসি, এসপি, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের ৯টি ব্যাচে ৭-২২ অক্টোবর দুই দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের ৪১টি ব্যাচে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ অক্টোবর প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ছিল। যদিও সময়সূচি পরিবর্তন এনে চলতি মাসের শেষ বা আগামী মাসের শুরুতে এ প্রশিক্ষণ শুরু হবে। 


প্রশিক্ষণে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বার্তা দেওয়া হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির কর্মকর্তারা জানান, আগের নির্বাচনগুলোয় তফশিল ঘোষণার পর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ব্রিফিং দিত ইসি। এবার আগেভাগেই তাদের প্রশিক্ষণ দিতে যাচ্ছে। কারণ, নির্বাচনে ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং ইউএনওরা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন। ডিআইজি ও পুলিশ সুপাররা নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন। মাঠ প্রশাসনের বিদ্যমান কর্মকর্তাদের বড় অংশই আগামী নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন-এমনটি ধরেই এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচ্ছে। যদিও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বেশ কয়েকজন বক্তা প্রশাসনে ব্যাপক দলীয়করণের অভিযোগ করেন। তারা দলীয় প্রভাবমুক্ত কর্মকর্তাদের আগামী নির্বাচনে দায়িত্ব দেওয়ার সুপারিশ করেছেন।


শেয়ার করুন