২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১১:১০:০৬ অপরাহ্ন
রাবি ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসতে পারে ড্রপআউট অছাত্র ও বিতর্কিতরা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৯-২০২৩
রাবি ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসতে পারে ড্রপআউট অছাত্র ও বিতর্কিতরা

এ সম্মেলনে শীর্ষ পদ পেতে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন ৯৪ প্রার্থী। পদে আসতে ক্যাম্পাসে মিটিং-মিছিলের পাশাপাশি নিয়মিত স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের কাছে ধরনাও দিচ্ছেন তারা।


ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, এ সম্মেলনে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান কমিটির সহসভাপতি কাজী আমিনুল হক লিংকন ও মেজবাহুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম সরকার ডন ও ফয়েজ আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু, গণযোগাযোগ ও উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব, উপ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক তাওহীদ দুর্জয়,ৎ


কার্যনির্বাহী সদস্য আল মুক্তাদির তরঙ্গ, কর্মী অনিক মাহমুদ বনি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য সাকিবুল হাসান বাকি এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ, বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাবিরুজ্জামান রুহুল, রহমতুন্নেছা হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না আকতার তন্নি ও হবিবুর রহমান শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অপুসহ অনেকে।


তবে নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে থাকা এসব নেতার অধিকাংশের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে অনেক আগেই। অনেকে হয়েছেন ড্রপআউট। আবার অনেকে রাজনীতিতে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর সম্মেলনকে ঘিরে হয়েছেন সক্রিয়।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, আসন্ন সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আসাদুল্লাহ-হিল-গালিব তার জীবনবৃত্তান্তে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতক করার বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য দেননি। জীবনবৃত্তান্তে উল্লেখ করেছেন, তিনি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে তিনি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুসতাক আহমেদ স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র সংযুক্ত করেছেন।


প্রত্যয়নপত্র অনুযায়ী, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী নন, বরং সান্ধ্যকালীন মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্নের বিষয়ে জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেয়া দিলেও তিনি ধরেননি।


আরেক পদপ্রার্থী মেহেদী হাসান মিশুর জীবনবৃত্তান্ত অনুযায়ী, তার সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘স্নাতক চলমান’। যদিও তিনি ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, একজন শিক্ষার্থীকে ছয় বছরের মধ্যে স্নাতক শেষ করতে হবে। এছাড়া এই নেতার বিরুদ্ধে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে সিট বাণিজ্যসহ শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে চাঁদাবাজির অভিযোগ।


তার ছাত্রত্বের বিষয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. বিজয় কৃষ্ণ বণিক বলেন, এখন তার ছাত্রত্ব আছে বলে মনে হয় না। এ বিষয়ে মেহেদী হাসান মিশুর ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও ধরেননি।


পদপ্রার্থী গণযোগাযোগ ও উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি ২০১৮ সালে স্নাতক এবং পরের বছর স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। তার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় থাকার এবং বিতর্কিতদের নিয়ে মিটিং মিছিল ও শোডাউন করার অভিযোগ রয়েছে।


এসব বিষয়ে তিনি বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব আদার ল্যাংগুয়েজেজে ইংরেজি ভাষা শিক্ষায় ভর্তি আছি। আমি দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলাম না। করোনাকালীন নিষ্ক্রিয় ছিলাম। বিতর্কিত কর্মীদের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমার সঙ্গে অনেক কর্মী আছে। এখন তাদের ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের দায়ভার তো আমি নিতে পারি না।


সভাপতি পদপ্রার্থী কাজী আমিনুল ইসলাম লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি ২০১৮ সালে স্নাতক শেষ করেছেন এবং ২০২১ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তার বিরুদ্ধে ছাত্রত্ব না থাকার অভিযোগ রয়েছে।


এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি বর্তমানে মার্কেটিং বিভাগের একটি সান্ধ্যকালীন কোর্সে ভর্তি আছি।


একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিনুল ইসলাম সরকার ডন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগ থেকে ২০১৬ সালে স্নাতক এবং ২০১৮ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তিনিও ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাংগুয়েজেজের জার্মান ভাষার সংক্ষিপ্ত কোর্সে ভর্তি রয়েছেন।


এ বিষয়ে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমি এখনও সংগঠনে থাকার যোগ্য। এ বিষয়ে অনেকে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে।


আরেক পদপ্রার্থী মেজবাহুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ২০১৯ সালে স্নাতক এবং পরের বছর স্নাতকোত্তর শেষ করেন। তার পরিবার বিএনপি-জামায়াতপন্থি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে ক্যাম্পাসে প্রচার আছে।


তবে অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাংগুয়েজের ইংরেজি ভাষা শিক্ষা কোর্সে ভর্তি আছি। আমার আট বছরের রাজনীতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অনাদর্শিক ও অসাংগঠনিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট প্রমাণ কেউ দিতে পারলে আমি ছাত্রলীগের ক্যান্ডিডেটশিপ ও সহসভাপতি পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করব।


এ ছাড়া আলোচনায় থাকা সাকিবুল হাসান বাকি বিগত সাত বছর ক্যাম্পাসে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। সম্মেলনকে ঘিরে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ধরেননি।


আলোচনায় থাকা আরেক নেতা অনিক মাহমুদ ছিনতাইয়ের অভিযোগে একমাস জেলহাজতে ছিলেন। এছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপআউটও বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ অভিযোগ এবং মামলা পুরোপুরি প্রতিহিংসা এবং ষড়যন্ত্রমূলক। সেই মামলা ইতোমধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে। বিভাগে আমার ইয়ার গ্যাপ আছে। তবে আমি এখনো নিয়মিত শিক্ষার্থী।


ছাত্রসংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতৃত্বে আসার প্রথম শর্তই হলো ছাত্রত্ব থাকা-বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা।


এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষক ও রাবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম খান বলেন, ছাত্রলীগের নেতৃত্বের ব্যাপারে একেবারেই সুস্পষ্ট, যারা আন্দোলন সংগ্রাম করার পাশাপাশি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করে সেরকম ছাত্রই ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসা জরুরি। এ বৈশিষ্ট্যগুলো নেই এমন কেউ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসুক, এটা আমার প্রত্যাশা নয়।


কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, একটি বিতর্কহীন রাবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটি উপহার দিতে আমরা চেষ্টা করব।


শেয়ার করুন