২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৩:৩১:২৩ অপরাহ্ন
টিকফা বৈঠক আজ, অবাধ বাণিজ্য সুবিধায় জোর
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৯-২০২৩
টিকফা বৈঠক আজ, অবাধ বাণিজ্য সুবিধায় জোর

রপ্তানি পণ্যে শুল্ক ছাড়সহ বেশ কিছু অমীমাংসিত বিষয়ে আলোচনা করতে আজ বুধবার বসছে ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম অ্যাগ্রিমেন্টের (টিকফা) বৈঠক। আজ বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।


বাংলাদেশ যেমন বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিভিন্ন খাতে নিজেদের সুবিধাগুলো আদায়ে কথা বলবে, তেমনই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও কারখানার কর্মপরিবেশ, শিশুশ্রম বন্ধ এবং মেধাস্বত্ব-বিষয়ক জটিলতার দ্রুত সমাধানের বিষয়টি সামনে আনা হবে। উভয় পক্ষেই বেশ কিছু জরুরি আলোচ্য বিষয় রয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বৈঠকের ধারাবাহিকতায় আজ বাংলাদেশে টিকফার সপ্তম বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে বাংলাদেশের বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ এবং মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী ইউএসটিআর ক্রিস্টোফার উইলস নেতৃত্ব দেবেন। তাঁর নেতৃত্বে থাকবে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল। 


বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা, তৈরি পোশাকসহ রপ্তানি পণ্যের শুল্ক ছাড় এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হওয়ার পর সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় দেশটির সহায়তা চায়। অন্যদিকে কারখানার যথাযথ নিরাপত্তা বিশেষত কর্মপরিবেশ, শিশুশ্রম বন্ধ এবং মেধাস্বত্ব-বিষয়ক জটিলতার দ্রুত সমাধান চায় যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নির্বিঘ্ন করতেই পারস্পরিক এমন চাওয়া।


এ ব্যাপারে নিট পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক প্রেসিডেন্ট ফজলুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘টিকফা বৈঠকে আমরা অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা চাইব। সেটা নিয়েই গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা উচিত। অন্ততপক্ষে জিএসএপি সুবিধায় যাতে পোশাক খাতকে যুক্ত করা যায়, এটা নিয়ে হলেও দর-কষাকষি করা উচিত। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি করলে, যেটুকু তুলা আমদানি করা হবে, অন্তত সেটুকু দিয়ে তৈরি পোশাকের শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যায় কি না, সেটাও দেখা যেতে পারে।’


বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সোমবার টিকফার প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক হয়েছে। এজেন্ডাভুক্ত না হলেও বাণিজ্য ও বিনিয়োগসংক্রান্ত বিষয়ের পাশাপাশি দেশের বিদ্যমান গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও মানবাধিকারের প্রসঙ্গটিও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তোলা হতে পারে, এই সম্ভাবনা মাথায় রেখেই তাঁরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।


এ ব্যাপারে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বৈঠক হবে। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বড় বাজার। বৈঠকে তাদের কাছে আমরা শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা চাইব।’


জানা যায়, বাংলাদেশ যেমন অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা নিয়ে কথা বলবে, তেমনি দেশটি থেকে বিনিয়োগও চাইবে। বর্তমানে জ্বালানি খাতে যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগ করেছে, সামনেও করতে চায়। দেশটি থেকে আসা বিখ্যাত বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের অর্জিত মুনাফার একটি অংশ নিজ দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে জটিলতা কাটানোর বিষয়টিও সামনে আনা হবে বলে জানা গেছে।


এ প্রসঙ্গে রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‍্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘টিকফার বৈঠক এত দিন বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও সহযোগিতায় সীমাবদ্ধ ছিল। এখন আমাদের পক্ষ থেকে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন উত্তরণে সহায়তা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পূরণ, বৈশ্বিক সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও ফুড অ্যান্ড এনার্জি সিকিউরিটি ইস্যুতে আলোচনা হতে পারে। এসডিজির জন্য বৈশ্বিক যে সাপোর্টের দরকার ছিল, তা আসেনি। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেক বেশি হয়েছে। এটা লাঘবে যা দরকার, তা যথেষ্ট পরিমাণে পাইনি। বিশেষ করে শুল্কমুক্ত, ট্যারিফের মতো বিষয়গুলো শিথিল করার আহ্বান জানাতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমেরিকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিতে আগ্রহ আছে। সেগুলোতে আমাদের বিনিয়োগ আসতে পারে কি না, সে বিষয়ে আলাপ করতে পারি।’


বর্তমানে বাংলাদেশ প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে যুক্তরাষ্ট্রে। এ জন্য বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ হারে শুল্ক দিয়ে থাকে। বৈঠকে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল করার চাপ দেবে বাংলাদেশ। ২০১৩ সাল থেকে এই সুবিধা স্থগিত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।


শেয়ার করুন