২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৮:০৩:০৪ অপরাহ্ন
সমন্বিত ট্রানজিট নীতিমালা চূড়ান্ত হচ্ছে অক্টোবরে
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৯-২০২৩
সমন্বিত ট্রানজিট নীতিমালা চূড়ান্ত হচ্ছে অক্টোবরে

চূড়ান্ত হচ্ছে সমন্বিত ট্রানজিট নীতিমালা। এ নিয়ে কাজ করছে একটি কারিগরি কমিটি। তারা আগামী মাসের মধ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে। জানা গেছে, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৮ অক্টোবরের পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলে তফসিল ঘোষণার আগেই ট্রানজিট নীতিমালা করতে চায় সরকার।


বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ চাচ্ছে প্রতিবেশী ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে। এছাড়া একটি নীতিমালার মধ্য দিয়ে একই সুবিধা অন্য দেশগুলোকে দিতে চায়। শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো পর্যন্ত ট্রানজিট ও আন্তঃযোগাযোগ বিস্তৃত করা লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বাংলাদেশের রেল, সড়ক ও নৌ- এই তিন পথেই প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে এ পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব এবং এতে সবাই লাভবান হবে। এই লক্ষ্যে গত ২২ আগস্ট একটি উচ্চ পর্যায়ের কারিগরি কমিটি গঠন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।


সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে কমিটি কাজ শুরু করেছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আবদুছ সামাদ আজাদকে। আর সদস্য সচিব করা হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ছাদেক আহমদকে। এছাড়াও কমিটিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক


বিভাগ, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের একজন করে প্রতিনিধি এবং বিআরসিপি ১-এর প্রকল্প পরিচালককে কমিটির সদস্য করা হয়েছে।


জানা গেছে, কারিগরি কমিটি আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে ট্রানজিট নীতিমালার কাঠামো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে। কারিগরি কমিটি দেশের স্বার্থ সংরক্ষণে ‘ট্রানজিট প্রদান ও ট্রানজিট প্রাপ্তি’ বিষয়ে নজর দেবে।


বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করে আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ট্রানজিটের সুদূরপ্রসারী কার্যক্রম হাতে নিতে চাই। বর্তমানে কোনো ট্রানজিট নীতি নেই। এখন যে সমন্বিত নীতি করতে যাচ্ছি, তা আমাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর জন্য পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বাণিজ্য সহায়তা চুক্তি বা টিএফএ অনুসরণ করা হবে।


জানা গেছে, কারিগরি কমিটির মতামতের ভিত্তিতে একটি খসড়া তৈরি করা হবে। কারিগরি কমিটির সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন যাবে মূল কমিটিতে। মূল কমিটি খুঁটিনাটি দেখে তা অনুমোদনের জন্য পাঠাবে মন্ত্রিসভা কমিটিতে।


জানা গেছে, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে নিয়মিতভাবে পণ্য পরিবহন শুরুর পথ খুলেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত এপ্রিল মাসে এ সংক্রান্ত একটি স্থায়ী আদেশ জারি করে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০২০ সালের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে ভারতীয় পণ্যের কয়েকটি চালান বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে আনা-নেওয়া হয়েছে। তখন বিশেষ অনুমোদনের মাধ্যমে সেটা করা হয়েছিল। এখন এনবিআর স্থায়ী আদেশ জারির মাধ্যমে নিয়মিত ট্রানজিট কার্যক্রম শুরুর পথ খুলেছে। কিন্তু দেশে ট্রানজিট নীতিমালা নেই। এজন্য নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় মন্ত্রণালয়।


জানা গেছে, ট্রানজিট নীতি করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত বছরের ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর সময়ে ভারত সফরকালে ‘বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ইশতেহারের ট্রানজিট/কানেকটিভিটি’ বিষয়ক অনুশাসনকে ভিত্তি হিসেবে নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরপর ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর বিষয়টি এগিয়ে নিতে বাণিজ্যসচিব একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বৈদেশিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পণ্য পরিবহন ও আঞ্চলিক সংযোগের সমন্বয়ে কাজ করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।


বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, যথাযথ ট্রানজিট ব্যবস্থার উন্নয়নে রেলপথের মধ্যে বাংলাদেশের আখাউড়া ও ভারতের আগরতলা এবং স্থলবন্দরের মধ্যে বাংলাদেশের তামাবিল, গোয়াইনঘাটের বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে। সম্ভাব্য ট্রানজিট এলাকায় রাস্তা প্রশস্ত নেই। ফলে ভারত ও বাংলাদেশ অংশে এগুলোর উন্নয়ন জরুরি।


সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন হয়েছে, তাতে উভয় দেশ পরস্পরকে তৃতীয় দেশের জন্য ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ার কথা বলা আছে। কিন্তু এ বিষয়ে যথেষ্ট সমীক্ষা ও কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়নি। ভারত ২০১৭ সালে একপক্ষীয়ভাবে একটি ট্রানজিট প্রস্তাব দিয়েছিল। এটা কাজে লাগিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্য দিয়ে তৃতীয় দেশে ট্রানজিট পাওয়ার বিষয়টি সম্ভাব্য ট্রানজিট নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।


জানা গেছে, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে মোটরযান চুক্তি (বিবিআইএন-এমভিএ) হয়েছিল ২০১৫ সালের ১৫ জুন। এ চুক্তি কার্যকর হলে চার দেশ একে অন্যের জমি ব্যবহার করে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন করতে পারত। ভুটানের বিরোধিতার কারণে বহুল আলোচিত এ চুক্তি কার্যকর হয়নি। বিবিআইএনে প্রস্তাবিত পথগুলোর বেশির ভাগই বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর ট্রানজিট সহায়ক।


ট্রানজিট সংক্রান্ত কারিগরি কমিটির সদস্য সচিব এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ছাদেক আহমদ আমাদের সময়কে বলেন, কমিটির প্রধান একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে আছেন। উনি প্রশিক্ষণ শেষ করে ফেরার পর খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। কমিটিকে অক্টোবর মাসের মধ্যে সমন্বিত ট্রানজিট কাঠামো পলিসি প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে।


শেয়ার করুন