গণ-অভ্যুত্থানের প্রায় আট মাস পেরিয়ে গেলেও শহিদ পরিবারে কান্না থামছে না। এখনও স্বজন হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি তারা। একমাত্র উপার্জক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দুচোখে অন্ধকার দেখছে অনেক পরিবার। তাই শহিদ পরিবারগুলোতে নেই ঈদের আনন্দ-শুধু আছে, প্রিয়জনের শূন্যতায় বিষাদের সুর। আয়ের উৎস না থাকায় অনেকে ঈদের বাজারও করতে পারেননি। আর ঈদের আগে এসব শহিদ পরিবারের খোঁজ নেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ শহিদ পরিবারের সদস্যরা। তারা বলছেন-ঈদের আগে আমরা খেয়ে আছি, নাকি না খেয়ে আছি, তা দেখতে কেউ আসেনি।
৫ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হয় শাহরিয়ার খান আনাস। ১৬ বছর ৯ মাস বয়সি আনাসের গুলি লাগে বুকের বাঁ-পাশে। রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে দাদির কবরে শুয়ে আছে এই কিশোর।
আনাসের মা সানজিদা খান বলেন, আনাস আমার প্রথম সন্তান। ও ঈদের (ঈদুল ফিতর) দিন জন্মেছিল। তখন আমার বয়স মাত্র ১৮ পার হয়েছে। তার মুখেই আমি প্রথম মা ডাক শুনি। আমরা শুধু মা-ছেলে ছিলাম না, দুজন ভালো বন্ধু ছিলাম। ওকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। ছেলেটি প্রকৌশলী হতে চেয়েছিল। ছেলেটি চলে যাওয়ার পর দুই মাসের মতো বিছানা থেকেই উঠতে পারিনি। তিনি বলেন, যেদিন ছেলেটির গুলিবিদ্ধ লাশ মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে অটোরিকশায় তুলে কোলে করে বাসায় আনি-সেদিনই আমি মরে গিয়েছি। আনাসের ছোট আরও দুই ভাই আছে। ওদের সঙ্গে কথা বললে বারবার আনাসের স্মৃতি সামনে ভেসে আসে। ঠিকমতো খাবার পেটে যায় না। অস্থিরতা পেয়ে বসলে ওর কবরে ছুটে যাই।
আনাসের বাবা শাহরিয়ার খান পলাশ বলেন, বাবা-মা সন্তানদের খুশি রাখতে সর্বোচ্চ ত্যাগ করেন। কিন্তু এবার আনাস না থাকায় আমাদের পরিবারে কোনো ঈদের আনন্দ নেই। তবু ছোট দুই সন্তানের জন্য ভালো থাকতে হচ্ছে।
১৯ জুলাই শহিদ হন আসলাম হোসেন। যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালীর নিজ বাসায় ঢুকে তাকে গুলি করে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে পুলিশ। মা-বোনের চোখের সামনেই নিহত হন আসলাম। ছেলের মৃত্যুর পর মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তার ৮০ বছরের বৃদ্ধ মাসহ গোটা পরিবার।
আসলামের মা মমতাজ বেগম যুগান্তরকে বলেন, বাসার ভেতরে ঢুকে আমার সন্তানকে গুলি করে মারা হয়েছে। ছেলে ছিল আমার সবকিছু। এখন আর কেউ নেই। খেয়ে আছি, না কি না খেয়ে আছি-তা কেউ দেখতে আসে না। আয়ের উৎস না থাকায় ঈদের বাজার করতে পারিনি। আমার কষ্ট দেখার কেউ নেই। এরপর কান্নায় ভেঙে পড়েন মমতাজ।