২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ১১:৩২:০৫ অপরাহ্ন
মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস হাইকোর্টে, ১২ দিনের মাথায় রায় স্থগিত চেম্বারে
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৯-২০২৩
মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস হাইকোর্টে, ১২ দিনের মাথায় রায় স্থগিত চেম্বারে

বন্ধু ধার দেওয়া টাকা ফেরত চাইলে খুনের সিদ্ধান্ত নেন। খুনের পর লাশ গুম করেন। তবে শেষরক্ষা হয়নি। একসময় নিজেই স্বীকার করেন খুনের কথা। ওই হত্যা মামলায় বিচারিক আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেন। ছয় বছর কনডেমড সেলে থাকার পর হাইকোর্টের রায়ে খালাস পান তিনি। তবে ১২ দিনের মাথায় খালাসের রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।


মামলা সূত্রে জানা যায়, খালাসের রায় স্থগিত হওয়া ওই আসামির নাম আবদুল মালেক। বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে। তাঁর বন্ধু রুবেল (২২) খুন হন ২০০৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। সেদিন তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান পাশের গ্রামের বন্ধু মালেক (২৩)। তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। তাঁর খোঁজে বাবা তোবজুল কয়েকবার মালেকের কাছে গেলেও কিছু জানেন না বলে এড়িয়ে যান। ওই বছরের ১০ অক্টোবর তিনি আবার মালেকের কাছে যান এবং ছেলের খোঁজ না দিলে কবিরাজের কাছে যাওয়ার হুমকি দেন। এতে ভয় পেয়ে রুবেলকে ডেকে নিয়ে খুনের কথা চাচা রফিককে বলে দেন মালেক। খবর পেয়ে পুলিশ মালেককে আটক করে এবং তাঁর দেখানো মতে খাল থেকে রুবেলের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওই দিনই তোবজুল শিবগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন।


নথি থেকে জানা যায়, আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মালেক বলেন, রুবেল ২০০৮ সালের আগস্টে দুবাই যাওয়ার আগে তিনি ১১ হাজার টাকা ধার দিয়েছিলেন। রুবেল পরের বছর এপ্রিলে দেশে ফিরলে তিনি টাকা ফেরত চাইলে ১৮ হাজার টাকা দেন। এ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে তিনি গরু কেনার দুই দিন পর রুবেল টাকা ফেরত চান। টাকা না থাকায় উপায় না পেয়ে তিনি রুবেলকে খুনের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে বাগানে নিয়ে হাঁসুয়া দিয়ে খুন করেন। পাশের আখখেতে লাশ পুঁতে রাখেন। এক মাস দুই দিন পর সেখানে গিয়ে রুবেলের খুলি, হাত ও পায়ের হাড় বস্তায় ভরে এক কিলোমিটার দূরে চোহার সেতুর খালে ফেলে দেন। পরে পুলিশ তাঁর দেখানো মতে সেখান থেকে এগুলো উদ্ধার করে।


চাঁপাইনবাবগঞ্জের আদালত ২০১৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর এ মামলার রায়ে একমাত্র আসামি মালেককে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। রায়ের পর তাঁকে পাঠানো হয় কনডেমড সেলে। ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয় হাইকোর্টে। জেল আপিল ও নিয়মিত আপিল করেন মালেক। শুনানি শেষে চলতি বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর রায় দেন বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক ও বিচারপতি মো. বশির উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ। রায়ে ডেথ রেফারেন্স খারিজ ও আসামির আপিল মঞ্জুর করে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।


হাইকোর্টে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ আহমেদ হিরু। গতকাল তিনি বলেন, আসামিপক্ষের যুক্তি ছিল এক মাস ছয় দিন পর মামলা হয়েছে। ওই লাশ রুবেলের কি না, তা যাচাইয়ের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়নি। তবে রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, আসামি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। বিচারিক আদালতের সাজা বহাল রাখার আরজি জানিয়েছিল রাষ্ট্রপক্ষ। 


মালেকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম মাহবুবুল ইসলাম।  


খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত সোমবার চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম খালাসের রায় স্থগিত করেন। চেম্বার আদালতে এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিষয়টি অস্বাভাবিক হওয়ায় চেম্বার বিচারপতি খালাসের রায় স্থগিত করেছেন। তবে আসামিকে কনডেমড সেল থেকে সাধারণ সেলে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।


শেয়ার করুন