২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৬:৫০:০২ অপরাহ্ন
পর্যটন খাতের বিকাশে মহাপরিকল্পনা করতেই সাড়ে তিন বছর পার
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৯-২০২৩
পর্যটন খাতের বিকাশে মহাপরিকল্পনা করতেই সাড়ে তিন বছর পার

দেশের পর্যটন খাতের বিকাশে মহাপরিকল্পনা তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল ২০২০ সালে। ১৮ মাসে শেষ করার কথা ছিল। সেটা শেষ হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন বছর পর। সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকায় এখনো মহাপরিকল্পনার সব তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড দাবি করছে, এই মহাপরিকল্পনা দেশকে টেকসই ও স্মার্ট পর্যটন গন্তব্যে রূপান্তরিত করতে সহায়তা করবে।


মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দেশে বিদেশি পর্যটক আসার হার বাড়বে এবং অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। তবে এই মহাপরিকল্পনা আদৌ বাস্তবায়ন হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন পর্যটন খাতের বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, এমন পরিকল্পনা তৈরি করা সহজ, কিন্তু বাস্তবায়ন করা কঠিন। আগেও পর্যটন নীতিমালা হয়েছিল, কিন্তু তার কিছুই মানা হয়নি।


বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী অবশ্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, মাস্টারপ্ল্যান অবশ্যই বাস্তবায়ন হবে। মাস্টারপ্ল্যান ধরে অনেক প্রকল্পও নেওয়া হবে। এর মাধ্যমে দেশ পর্যটনের নতুন যুগে প্রবেশ করবে।


ট্যুরিজম বোর্ডের তথ্যমতে, পর্যটন মহাপরিকল্পনায় দেশে পর্যটনের আঞ্চলিক ও কাঠামোগত পরিকল্পনার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। দেশের ৮ বিভাগকে ৮টি পর্যটন অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে। পর্যটনের অবকাঠামো তৈরির জন্য উপযুক্ত জমি চিহ্নিতকরণসহ সারা দেশে ১ হাজার ৪৯৮টি পর্যটন গন্তব্য চিহ্নিত করা হয়েছে।


এসব গন্তব্যের মধ্যে আছে বরিশাল অঞ্চলে ১০৭টি, চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৪২৬টি, ঢাকা অঞ্চলে ৩৫৩টি, খুলনা অঞ্চলে ১০৩টি, ময়মনসিংহ অঞ্চলে ৮৮টি, রংপুর অঞ্চলে ১৪৬টি, সিলেট অঞ্চলে ১২৩টি। এ ছাড়া মহাপরিকল্পনায় পর্যটন অংশীজন, স্থানীয় জনগোষ্ঠী, পর্যটক, পর্যটন সেবা প্রদানকারীসহ সংশ্লিষ্ট সবার জন্য থিমভিত্তিক আচরণবিধি নির্ধারণ করা হয়েছে।


অঞ্চলভিত্তিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কৌশল নির্ধারণ করে তা প্রয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদেশি পর্যটক বাড়াতে ভিসা সহজীকরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। জোর দেওয়া হয়েছে মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর। পর্যটন শিল্পের ১২টি উপখাতের পর্যটনকর্মী ও উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।


জানা যায়, মহাপরিকল্পনা তৈরির কাজটি করেছে বিদেশি সংস্থা আইপিসি গ্লোবাল। পরিকল্পনা প্রণয়নকারী দলের একটি উপদলের নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম নাজেম। তিনি বলেন, ‘দেশের পর্যটনের প্রধান সংকটের মধ্যে রয়েছে দুর্বল অবকাঠামো, থাকার ব্যবস্থার অভাব, পরিবহন অব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের অভাব। আমরা বিষয়গুলোকে মাস্টারপ্ল্যানে চিহ্নিত করে সমাধানের কথা বলেছি। মাস দুয়েক আগে মাস্টারপ্ল্যানে জমা দিয়েছি, এখন সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষা।’


পর্যটন বিশেষজ্ঞ মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘মহাপরিকল্পনা তৈরি করতেই এত বছর লাগল, বাস্তবায়নে কত বছর লাগবে কে জানে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের যথেষ্ট জনবল ট্যুরিজম বোর্ডের নেই। প্রতিটি পর্যটন গন্তব্যে বিপুলসংখ্যক মানুষকে এই কর্মযজ্ঞের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। এটা নিয়ে আদৌ কোনো চিন্তা আছে কি না, তা নিয়ে শতভাগ সন্দেহ রয়েছে।’


এমন বাস্তবতার মধ্যেই আজ ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস পালিত হবে। জাতিসংঘের অধীন বিশ্ব পর্যটন সংস্থার তত্ত্বাবধানে ১৯৮০ সাল থেকে প্রতিবছর এই দিনে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। 


এদিকে পর্যটনের মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত অনুমোদন না হলেও বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় মহাপরিকল্পনার আওতায় পাঁচটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের জানান, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপ, পাহাড়পুরের সোমপুর মহাবিহার, সুন্দরবনের শরণখোলা এবং পদ্মা সেতুর মাওয়ায় পাঁচটি পর্যটন উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শিগগির শুরু হবে। এই প্রকল্পগুলোর জন্য বর্তমানে সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। 


এ বিষয়ে পর্যটন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম, যেকোনো পরিকল্পনা প্রণয়ন করা সহজ, কিন্তু বাস্তবায়ন করা কঠিন। আগেও পর্যটন নীতিমালা করা হয়েছে, তার কিছুই মানা হয়নি। অনেক টাকা খরচ করে ঢাকঢোল বাজিয়ে মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে, এটারও সেই একই দশা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যে ধরনের সক্ষমতা দরকার, বিনিয়োগ দরকার, তা আমাদের দেশে নেই। এ ছাড়া এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে যে সমন্বয়ের দরকার, তার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।’


শেয়ার করুন