দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মিজানুর রহমান বলেছেন, সিডর, রানা প্লাজা ধস, মোখায় আমরা দেখিয়েছি আমাদের সক্ষমতা। সম্প্রতি বিভিন্ন দেশে বন্যায় অনেক মানুষ মারা গেছে।
কিন্তু আমাদের কক্সবাজারে ২০ জনের বেশি মারা যায়নি। দুর্যোগে বাংলাদেশের মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে পারে। আমাদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উন্নত মানের।
দুর্যোগ মোকাবিলা ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসের জ্ঞান না থাকলে কোনো উন্নয়নই টেকসই হবে না। তাই দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে।
বুধবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে আয়োজিত স্ট্রেংথেনিং আরবান পাবলিক-প্রাইভেট প্রোগ্রামিং ফর আর্থকোয়েক রেজিলিয়েন্স (সুপার) প্রকল্পের কনসোর্টিয়ামের সমাপ্তির উপর একটি লার্নিং শেয়ারিং অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
একশনএইড বাংলাদেশ, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), ইউনাইটেড পারপাস এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ যৌথভাবে ২০২০ সালের ১ জুন থেকে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর সাল পর্যন্ত স্ট্রেংথেনিং আরবান পাবলিক-প্রাইভেট প্রোগ্রামিং ফর আর্থকোয়েক রেজিলিয়েন্স (সুপার) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। ইউরোপিয়ান সিভিল প্রোটেকশন অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান এইড অপারেশনস(ইকো) এই প্রকল্পের অর্থায়ন করেছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকিও বাড়ছে। তাই ঝুঁকির বিষয় মাথায় রেখে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের মাধ্যম যে কোনো উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা ভূমিকম্প নিয়ে বেশি কিছু করতে পারি না। ভূমিকম্প বড় কোনো দুর্যোগ নয়। আমরা বিল্ডিং কোড না মেনে নিজেরাই ভূমিকম্পের ক্ষতি সৃষ্টি করি। দক্ষিণাঞ্চলে আমাদের পদ্মা সেতু ৪০০ বছরের ভূমিকম্প পর্যালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে।
ওই অঞ্চলে ৭.৫ রিক্টার স্কেলে সর্বোচ্চ ভূমিকম্প হতে পারে। এটা বিবেচনায় রেখেই পদ্মা সেতু তৈরি করা হয়েছে। মেট্রোরেলের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। দেশের উন্নত অবকাঠামো নির্মাণে সব সময় সেফটি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সঠিক রাখতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল দেশ। আমাদের নবীন ও তরুণরা যেন সেফটি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সব কিছু শিখতে ও জানতে পারে সেজন্য বিভিন্ন লার্নিং অ্যাপস ও গেমস-এর মাধ্যমে তাদের আগ্রহ জন্মাতে হবে।
অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি(ডিসিসিআই) এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম গোলাম ফারুক আলমগীর বলেন, বর্তমান বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনও বিশ্বব্যাপী দুর্যোগে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে পরিচিত।
অপ্রত্যাশিত দুর্যোগের ঝুঁকি কাটিয়ে উঠতে, ইউএনডিআরআর সেন্দাই ফ্রেমওয়ার্ক (২০১৫-২০৩০) মেনে বিভিন্ন সরকার, এনজিও এবং বেসরকারি খাতের স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতার মাধ্যমে প্রস্তুতি, প্রশমন এবং পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থাসহ আমাদের ব্যাপক দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কৌশলগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। তবেই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব।
অনুষ্ঠানে ইউনাইটেড পারপাস এর কান্ট্রি ডিরেক্টর শ্রীরামাম্পা গানচিকা বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, এই প্রকল্পের লক্ষ্য ভূমিকম্প এবং সংশ্লিষ্ট বিপদ বিবেচনা করে দুর্যোগ প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়ায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ এবং তাদের নেতৃত্বের প্রচার করা। আমরা সেই কাজটা সফলভাবে করেছি।
লার্নিং সেশনে অংশগ্রহণকারি বক্তারা বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম বেসরকারি সেক্টর ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার (পিইওসি) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন জরুরি তথ্য ও সেবা প্রদানের জন্য এ বছর একটি ওয়েবপেজ চালু করা হয়েছে।
পিইওসি স্বেচ্ছাসেবক এবং দুর্যোগের ঘটনাগুলির একটি অনলাইন ডাটাবেসও তৈরি করেছে। ডেটাবেসগুলো পিইওসি ওয়েবপেজে প্রকাশিত হবে এবং ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার (এনইওসি) এর সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
বক্তারা আরও বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রাইভেট সেক্টর ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারে (পিইওসি) আগুন, ভূমিকম্প, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি সংক্রান্ত ১৫৮টি বিভিন্ন ঘটনার রিপোর্ট রেকর্ড করেছে।
পিইওসি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স (এফএসসিডি) প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্সে বেসরকারি খাতের ২০৪ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ১০৪ জনকে পিইওসি এর স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসঅপি) এর প্রশিক্ষণ দিয়েছে।