২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৬:১১:২৪ অপরাহ্ন
সর্বজনীন পেনশন স্কিম: করছাড় নিয়ে বিভ্রান্তি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-১০-২০২৩
সর্বজনীন পেনশন স্কিম: করছাড় নিয়ে বিভ্রান্তি

সর্বজনীন পেনশন স্কিমের চাঁদার বিপরীতে করছাড় পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আয়কর আইনে পেনশন স্কিমের চাঁদা কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত কি না, তা উল্লেখ নেই। অন্যদিকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনে এই চাঁদা করছাড়ের জন্য বিবেচিত। দুই আইনের দুই ধরনের অবস্থায় বিভ্রান্তিতে পড়েছেন করদাতারা।


আয়কর আইন, ২০২৩-এর ষষ্ঠ তফসিলে (কর অব্যাহতি, রেয়াত ও ক্রেডিট) পেনশন স্কিমের চাঁদার কথা উল্লেখ নেই। এই আইনের ষষ্ঠ তফসিলে (অংশ-৩) বলা হয়েছে, জীবনবিমার প্রিমিয়াম, প্রভিডেন্ট ফান্ডের চাঁদা, স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলের চাঁদা, সরকারি সিকিউরিটিজ বা মিউচুয়াল ফান্ডে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ, বছরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা (মাসিক ১০ হাজার) ডিপিএসে বিনিয়োগ, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলে সেই অর্থের ওপর কর রেয়াত বা করছাড় পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে উল্লিখিত খাতে যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হবে, তার ১৫ শতাংশ বা ১০ লাখ টাকার কম যেই অর্থ, সেই পরিমাণ অর্থ করছাড় পাওয়া যাবে। ষষ্ঠ তফসিলে পেনশন স্কিমের চাঁদার কথা উল্লেখ নেই।


অন্যদিকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩-এর ১৪ (১) (ঢ) ধারায় বলা আছে, পেনশনের চাঁদা বিনিয়োগ হিসাবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে।


তবে আয়কর আইনের ৭৬ (২) ধারায় বলা আছে, আয়কর আইন ব্যতীত অন্য কোনো আইন বা আইন হিসাবে পরিগণিত দলিলের মাধ্যমে যদি কোনো ব্যক্তিকে কর অব্যাহতি দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে ওই আইন বা আইন হিসাবে পরিগণিত দলিলে যা-ই থাকুক না কেন, এনবিআর প্রজ্ঞাপন দ্বারা ওই ব্যক্তিকে কর অব্যাহতি না দিলে সেই বিধান কার্যকর হবে না।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক আয়কর কর্মকর্তা বলেন, সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান নিজেদের আইনে কর অব্যাহতি দিচ্ছে, যার আইনগত ভিত্তি নেই। আয়কর আইন অনুযায়ী কর অব্যাহতি দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে কেবল এনবিআরের। এ বিষয়ে নিজেরা নিজেদের কর অব্যাহতি দিয়ে কোনো আদেশ, প্রজ্ঞাপন বা এসআরও জারি করলেও আয়কর আইনে এর বৈধতা নেই। আয়কর আইনে যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে রিটার্ন জমা থেকে অব্যাহতি বা বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত দেওয়া হয়েছে, কেবল সেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান করছাড় পাবে।


ঢাকা ট্যাকসেস বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুফী মোহাম্মদ আল মামুন বলেন, নতুন আয়কর আইনে বিনিয়োগজনিত কর রেয়াতের তালিকায় সর্বজনীন পেনশনের কথা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই। তাই পেনশনের চাঁদার বিপরীতে কর রেয়াত দাবি করলে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা তা বাতিল করে দিতে পারেন। তাই এনবিআর পেনশনের চাঁদাকে ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করলে জটিলতা থাকবে না।


উল্লেখ্য, গত ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক মাসে পেনশন নিবন্ধন চূড়ান্ত করেন ১২ হাজার ৮৯২ জন। সবচেয়ে বেশি নিবন্ধন করেছেন ‘প্রগতি’ স্কিমে। এখানে বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এ স্কিমে মোট অর্থ জমা পড়েছে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। 


শেয়ার করুন