০২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১২:১০:৫৯ পূর্বাহ্ন
সাদিকের বিদায়ের আগে বরিশাল সিটিতে ব্যাহত নাগরিক সেবা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-১০-২০২৩
সাদিকের বিদায়ের আগে বরিশাল সিটিতে ব্যাহত নাগরিক সেবা

বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ দায়িত্ব ছাড়ছেন আগামী ১৩ নভেম্বর। তার আগেই বিসিসি থেকে বদলি করা হয়েছে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে (সিইও) ও সচিবকে। নতুন সচিব যোগদান করেও রয়েছেন ছুটিতে। করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও ছুটিতে।


করপোরেশনের সর্বোচ্চ এ পদ তিনটিতে এক মাসের অধিক সময় কেউ না থাকায় নাগরিক সেবা ভেঙে পড়েছে। ট্রেড লাইসেন্স, ভবনের প্ল্যান, হোল্ডিং ট্যাক্স কার্যক্রম থমকে যাওয়ায় সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন নগরবাসী। 


এদিকে মেয়র সাদিকের বিদায়ের আগমুহূর্তে তিনজনকে পদোন্নতি, পদায়ন এবং স্থায়ীকরণ নিয়ে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে খোদ নগর ভবনেই। এ ছাড়া সম্প্রতি নগরের আবাসন প্রকল্পে ২৪০টি প্লট বরাদ্দ এবং ৫ হাজার অটোরিকশাকে অবৈধভাবে টোকেন দেওয়া নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ।


স্বাভাবিকভাবেই এসব কাজের চাপ পড়বে আগামী ১৪ নভেম্বর থেকে দায়িত্ব নিতে যাওয়া করপোরেশনের নতুন পরিষদের ওপর। তবে নতুন মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত বলেছেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি নিয়মবহির্ভূত কোনো কাজের দায় নেবেন না। গত বুধবার নগর ভবন ঘুরে দেখা গেছে, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে গা ছাড়া ভাব। মেয়রের ২০১ নম্বর কক্ষ বন্ধ। একই অবস্থা সিইওর কক্ষেরও। 


গত ৩১ আগস্ট বিসিসিতে সবশেষ অফিস করেছেন বদলি হওয়া সিইও সৈয়দ ফারুক আহমেদ। মন্ত্রণালয় থেকে নতুন সিইও নিয়োগ আদেশ হলেও এখনো যোগদান করেননি। নবাগত সচিব মাসুমা আক্তার ১৮ সেপ্টেম্বর ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পান। স্বাস্থ্যগত সমস্যার অজুহাত দেখিয়ে তিনিও ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ৪৫ দিনের ছুটি নিয়েছেন। গুঞ্জন রয়েছে শেষ মুহূর্তে নানা বিল ও কাগজপত্রে স্বাক্ষরের ঝামেলা এড়াতে তিনিও নগর ভবন ছাড়েন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও রয়েছেন ভারতে চিকিৎসাধীন। 


শীর্ষ এই কর্মকর্তারা না থাকায় নগর ভবনের কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বাড়ির হোল্ডিং  ট্যাক্স ধার্য করতে নগর ভবনে যাওয়া নগরীর কাউনিয়ার এক সরকারি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে জানান, তিনি ১৫ দিন ধরে ঘুরছেন। কিন্তু পাচ্ছেন না। সাগরদির এক ব্যবসায়ী ২০ দিন ধরে নগর ভবনে ধরনা দিয়েও ট্রেড লাইসেন্স করাতে পারেননি। নগরের নবগ্রাম সড়কের এক ব্যাংকার ভবনের প্ল্যান করার জন্য নগর ভবনে গিয়েও কোনো সুফল পাননি। 


নতুন হোল্ডিং কেন নাগরিকেরা পাচ্ছেন না—এ বিষয়ে বিসিসির চিফ অ্যাসেসর কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, সিইও না থাকায় সাময়িক সমস্যা হচ্ছে। তবে নতুন একজনের যোগদানের কথা রয়েছে। এদিকে বিসিসি সূত্রে জানা গেছে, শেষ মুহূর্তে তিন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি, পদায়ন ও স্থায়ীকরণের আদেশে সই দিয়ে গেছেন সিইও ফারুক। পদোন্নতি ও পদায়ন ইস্যুতে দীর্ঘদিন পর গত রবি ও সোমবার নগর ভবনে অফিস করেছেন মেয়র সাদিক। ওই সময় বেশ তৎপর ছিলেন তিনি। 


জানা গেছে, পরিসংখ্যানবিদ পদের চাকরি করা স্বপন কুমার দাসকে পদায়ন করা হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে। তিনি একই সঙ্গে পরিসংখ্যানবিদ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং জনসংযোগ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। সহকারী প্রকৌশলী থেকে পদোন্নতি দিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী করা হয়েছে আবুল বাশারকে। প্রধান পরিকল্পনাবিদ সানজিদ হোসেনের চাকরি স্থায়ীকরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। 


এ তিনজনকে পদোন্নতি, পদায়ন এবং স্থায়ীকরণ নিয়ে স্টাফদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা গেছে। সূত্রে জানা গেছে, স্টাফরা ক্ষুব্ধ হয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসের ওপর চড়াও হয়েছেন। করপোরেশনের প্রশাসনিক শাখার ওএসডিরত ব্যক্তিগত সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর এ কে এম হেলাল উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, মেয়র ঢাকায় থাকা অবস্থায় ব্যাকডেটে ওই তিনজনকে অবৈধভাবে পদোন্নতি, পদায়ন এবং স্থায়ীকরণ করা হয়েছে। পরিসংখ্যানবিদ পদ বিলুপ্ত না হলেও স্বপন কুমারকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।


স্থায়ীকরণের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনাবিদ সানজিদ হোসেন বলেন, ‘আমিও শুনেছি স্থায়ীকরণের বিষয়টা।’ সিইও না থাকায় নগরের প্ল্যান কী করে দিচ্ছেন, এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্ল্যান তো সিইও কিংবা সচিবেরাই দেন। তাঁরা না থাকায় সভাও হয়নি, প্ল্যান অনুমোদনও পায়নি।’ 


স্বপন কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে তাঁর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি। 

এদিকে সম্প্রতি নগরের কাউনিয়া হাউজিং প্রকল্পের ২৪০টি প্লট বরাদ্দ দিয়েছে বিসিসি। প্লট বরাদ্দে স্বজনপ্রীতিসহ না অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, স্থানীয়রা এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট করলে এ প্রকল্পে বরাদ্দে স্থিতি অবস্থা দেন আদালত। 


এ ছাড়া দুই ধাপে সিটি করপোরেশন ৫ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালককে টোকেন দিয়ে চলাচলের অনুমোদন দিয়েছে। এসব নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কাউনিয়া আবাসিক প্লট বরাদ্দ, হলুদ অটোরিকশা লাইসেন্স, করপোরেশনে অবৈধ পদোন্নতি নিয়মবহির্ভূত হলে এর দায় আমি নেব না।’ এ বিষয়ে কোনো অনৈতিক লেনদেন কাউকে না করার আহ্বান জানিয়েছেন মেয়র খোকন। 


এ বিষয়ে জানতে সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে করপোরেশনের প্যানেল মেয়র গাজী নইমুল হোসেন লিটু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নতুন একজনকে সিইও হিসেবে মন্ত্রণালয় নিয়োগ দিয়েছে। তিনি যোগদান করলে এ ধরনের সমস্যার সমাধান হবে।’ তিনজনকে পদোন্নতি ও পদায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি বলতে পারব না। প্রশাসনিক শাখা বলতে পারবে।’ প্লট বরাদ্দের বিষয়ও তাঁর জানা নেই।


শেয়ার করুন