০২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:৩৯:১০ পূর্বাহ্ন
রাজধানীর শীর্ষ সন্ত্রাসীরা অদৃশ্য থেকে অপরাধে সক্রিয়
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-১০-২০২৩
রাজধানীর শীর্ষ সন্ত্রাসীরা অদৃশ্য থেকে অপরাধে সক্রিয়

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সম্প্রতি এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী তারেক সাঈদ মামুনকে হত্যার উদ্দেশ্যে ছোড়া গুলিতে নিহত হয়েছেন আইনজীবী ভুবন চন্দ্র শীল। কর্মস্থল থেকে ভাড়ার মোটরসাইকেলে মেসে ফেরার সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। পুলিশ বলছে, কারাগারে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের নির্দেশে ওই হামলা হয়। এর আগে শাহজাহানপুরে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি বিদেশে পলাতক দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহম্মেদ মন্টি ও জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক।


শীর্ষ সন্ত্রাসীরা দৃশ্যপটে না থাকলেও একের পর এক ঘটনা ঘটাচ্ছেন। গত তিন বছরে তাঁদের নির্দেশে বা পরিকল্পনায় পাঁচটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। চলছে চাঁদাবাজি, অপহরণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। কারও কারও অপরাধ সাম্রাজ্য দেখভাল করছে স্বজনেরা, কারও বিশ্বস্ত অনুসারীরা। আবার কারও কারও নাম ভাঙিয়েও চলছে চাঁদাবাজি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সূত্রে এসব জানা গেছে।


পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের এজেন্টদের নজরদারিতে রাখতে হবে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তাহলে তাদের অপরাধ কমবে। এ জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছাও দরকার।


২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকার দেশের ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করেছিল। তাঁ প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ৫টি থেকে সর্বোচ্চ ৩০টি পর্যন্ত মামলা রয়েছে। তাঁদের মধ্যে বর্তমানে মাত্র ছয়জন কারাগারে রয়েছেন। বেশির ভাগই বিদেশে পলাতক। পুলিশ সদর দপ্তর ও গোয়েন্দা সূত্রের তথ্য বলছে, ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর মধ্যে ভারতে রয়েছেন ত্রিমাতি সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, জাফর আহমেদ মানিক, ইমাম হোসেন ও মশিউর রহমান কচি। কানাডায় শামীম আহম্মেদ ওরফে আগা শামীম ও খন্দকার তানভীরুল ইসলাম জয়। জার্মানিতে আব্দুল জব্বার মুন্না ও কামরুল হাসান ওরফে ছোট হান্নান। যুক্তরাষ্ট্রে গোলাম রসুল সাগর ওরফে টোকাই সাগর। সংযুক্ত আরব আমিরাতে জিসান আহমেদ মন্টি এবং ফ্রান্সে প্রকাশ কুমার বিশ্বাস। কারাগারে রয়েছেন আব্বাস ওরফে কিলার আব্বাস, হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল, সোহেল রানা চৌধুরী ওরফে ফ্রিডম সোহেল, খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন, সুইডেন আসলাম ও সানজিদুল ইসলাম ইমন। খোরশেদ আলম রাসু সম্প্রতি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর কারাফটক থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পরিবারের।


পিচ্চি হান্নান ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ও আলাউদ্দিন গণপিটুনিতে নিহত হন। মারা গেছেন কালা জাহাঙ্গীর। নিখোঁজ কামাল পাশা ও লিয়াকত হোসেন।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২০০৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে। তবে বৃহত্তর মিরপুরে তাঁর অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করছে সহযোগীরা। মিরপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের নামেও চাঁদা দাবির অভিযোগ মাঝে মাঝেই শোনা যায়। চলতি বছরের ১১ মে রমনা থানায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের বিরুদ্ধে দুটি ফ্ল্যাট লিখে না দিলে প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন এক ব্যক্তি।


 শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামে চাঁদা দাবির ঘটনা আরও আছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনুসারীদের পাশাপাশি তাদের নাম ভাঙিয়ে গজিয়ে ওঠা কিছু সন্ত্রাসীও অপহরণ ও চাঁদাবাজি করে। অপরাধের ধরন দেখলেই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি বোঝা যায়।


র‍্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘শীর্ষ সন্ত্রাসীরা দেশে যেসব অপরাধ করে, আমরা তার তদন্ত করি। দেশে তারা অনুসারীদের সঙ্গে কথা বললে আমরা তাদের আইনের আওতায় আনি। তাদের অনুসারীদের মাধ্যমে বিদেশে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অবস্থানও শনাক্ত করা হয়। তাদের দেশে ফেরাতে কাজ করছে পুলিশ সদর দপ্তর।’


শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ রয়েছে আটজনের বিরুদ্ধে। তাঁরা হলেন কালা জাহাঙ্গীর, জিসান, টোকাই সাগর, জয়, সুব্রত বাইন, প্রকাশ, মুন্না ও ফ্রিডম মানিক।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিয়া রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বিদেশে ও কারাগারে বসে যে হারে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা দেশে অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, তাতে শঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসীদের দেশে ফেরত আনতে সরকারকে সক্রিয়ভাবে উদ্যোগী হতে হবে।


জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ ও গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) এনামুল হক সাগর বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীরা যেসব দেশে রয়েছে, সেই দেশগুলোর সঙ্গে দাপ্তরিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।


শেয়ার করুন