১২ ডিসেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৬:৪৮:৪২ অপরাহ্ন
বঞ্চিত কর্মকর্তাদের বকেয়া পাওনাসহ পদোন্নতির সুযোগ কতটা যৌক্তিক?
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-১২-২০২৪
বঞ্চিত কর্মকর্তাদের বকেয়া পাওনাসহ পদোন্নতির সুযোগ কতটা যৌক্তিক?

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের একটি পর্যালোচনা কমিটি জনপ্রশাসনে প্রায় সাড়ে সাতশো সাবেক কর্মকর্তাকে বিগত সরকারের আমলে বঞ্চিত বিবেচনা করে তাদের ‘ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি’ দেওয়ার যে সুপারিশ করেছে তা নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা চলছে।


বিশ্লেষকরা কেউ কেউ বলছেন, সততা ও দক্ষতা ছিল এমন দল নিরপেক্ষ কর্মকর্তারা যারা গত সরকারের আমলে পদোন্নতি পাননি তাদের বাছাই করে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিতে পারলে সেটি ইতিবাচক হবে।


আবার কেউ বলছেন, ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি হলেও যে সময়টুকু তারা কাজ করেননি সে সময়ের জন্য আর্থিক সুবিধা দেওয়াটা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। পাশাপাশি এ ধরনের সুযোগ একবার দেওয়া হলে ভবিষ্যতে এটিকে উদাহরণ নিয়ে নিয়ে অপব্যবহারের সুযোগও তৈরি হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা।


গত ১৬ সেপ্টেম্বর সরকার পদোন্নতি বঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আবেদনের জন্য পর্যালোচনা কমিটি গঠন করেছিলো। সেই কমিটিই মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে।


তবে এ রিপোর্টের বিষয়ে সরকার এখন কী পদক্ষেপ নিবে কিংবা যেসব কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে তারা কি বিগত দিনের আর্থিক সুবিধাও পাবেন কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়।


ওই কমিটির প্রধান সাবেক সচিব ড. জাকির আহমেদ খান বলছেন অনেকগুলো বিষয়কে মানদণ্ড হিসেবে নিয়েই তারা তাদের সুপারিশ করেছেন। জাকির খান বিশ্বব্যাংকের সাবেক বিকল্প নির্বাহী পরিচালক।


তিনি বলছেন, যারা আবেদন করেছেন তাদের চাকরি জীবনের ভোগান্তি থেকে শুরু করে অনেক কিছু পর্যালোচনা করা হয়েছে। আমরা সব বিচার বিশ্লেষণ করে সুপারিশমালা তৈরি করেছি। এখন সরকার পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে। এমনকি তারা আর্থিক সুবিধা পাবেন কি না সেটিও সরকারের বিষয়। 


প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে মাঝে মধ্যে ভূতাপেক্ষা নিয়োগ বা পদোন্নতির উদাহরণ থাকলেও এতো বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তাকে এ ধরনের পদোন্নতি দেয়া হলে তা হবে নজিরবিহীন ঘটনা। ভূতাপেক্ষা মানে হলো আগে থেকে কার্যকর হওয়া।


তবে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলছেন সৎ, যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা গত আমলে নিয়মানুযায়ী পদোন্নতি পাননি তাদের বাছাই করে ভূতাপেক্ষা পদোন্নতি দিতে পারলে সেটি প্রশাসনের জন্য ভালো হবে।


অন্যদিকে সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খান বলছেন যারা বঞ্চিত হয়েছেন তাদের বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে কিন্তু এটিও সত্যি যে প্রশাসনে এখনো শৃঙ্খলা ফিরে আসেনি। ফলে বিভিন্ন জন বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে সামনে আসছে, যেগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।


রিপোর্টে কী বলা হয়েছে


আবেদন পর্যালোচনা কমিটি প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের রিপোর্ট দেওয়ার পর মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং সংবাদ সম্মেলনে জানায় যে, ওই কমিটি ১৫৪০ জনের কাছ থেকে আবেদন পেয়েছিলো এবং এসব আবেদন যাচাই বাছাই করে তারা তাদের রিপোর্টে ৭৬৪ জনকে ভূতাপেক্ষা সুযোগ সুবিধা নিয়ে পদোন্নতির সুপারিশ করেছেন। 


সচিব থেকে শুরু করে উপসচিব পর্যন্ত কর্মকর্তারা এর মধ্যে রয়েছেন। সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে সরকার এখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে।


২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের চৌঠা আগস্ট পর্যন্ত ‘বঞ্চিত ও বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া’ সচিব থেকে শুরু করে উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই তালিকায় রয়েছেন।


এর আগে সেপ্টেম্বরে পর্যালোচনা কমিটি গঠনের সময় জনপ্রশাসন সচিব মোখলেস উর রহমান বলেছিলেন, ১৬ বছরের বঞ্চনায় যে সমস্ত কর্মকর্তারা বঞ্চিত ছিলেন, তারা মানসিকভাবে নিপীড়িত হয়েছেন। এরা নানাভাবে বঞ্চিত হয়েছেন, সামাজিকভাবে, পারিবারিকভাবে, অনেকে আর্থিকভাবে হয়েছেন।


জানা গেছে, পর্যালোচনা কমিটি যাদের জন্য ভূতাপেক্ষা পদোন্নতির সুপারিশ করেছে তাদের মধ্যে ১১৯ জন সচিব ও ৫২৮ জন অতিরিক্ত সচিব পদের কর্মকর্তারা রয়েছেন।


বঞ্চিত কারা


সরকারের দিক থেকে বলা হয়েছে যে পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সরকার পদক্ষেপ নিবে এবং সে কারণে ধারণা করা হচ্ছে যে ৭৬৪ ভূতাপেক্ষা পদোন্নতি পাবেন তারা আর্থিক সুবিধা সহ পদোন্নতি পাবেন। এর মধ্যে যাদের কাজে ফেরত আসার সুযোগ আছে তারা আসবেন, বাকিরা অবসরে থাকবেন।


কোন ধরনের কর্মকর্তারা আবেদন করেছে এবং তাদের বক্তব্য কি ছিল- এটি জানতে সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা কয়েকটি উদাহরণ উল্লেখ করেছেন।


যেমন বিসিএস ১১ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অবসরে গিয়েছিলেন। তিনি আবেদনে জানিয়েছেন যে তার ব্যাচের মেধা তালিকায় তার নিচে ছিলেন এমন একুশ জন সচিব হয়েছেন। কিন্তু তাকে সচিব করা হয়নি।


আবার যুগ্ম সচিব হিসেবে অবসরে যাওয়া আরেকজন কর্মকর্তা চাকরি জীবনে অন্তত পাঁচবার পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন দাবি করে করে সিনিয়র সচিব হিসেবে পদোন্নতির জন্য আবেদন করেছেন।


শেয়ার করুন