২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:২৭:২১ অপরাহ্ন
টিসিবির কার্ড তৈরিতে ব্যাপক ‘স্বজন ও দলপ্রীতি’
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-১০-২০২৩
টিসিবির কার্ড তৈরিতে ব্যাপক ‘স্বজন ও দলপ্রীতি’

নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে স্বল্পমূল্যে খাদ্য বিক্রি কর্মসূচির আওতায় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি রাজশাহীতে আজ থেকে তিনটি পণ্য বিক্রি শুরু করছে। এ কর্মসূচির আওতায় রাজশাহী মহানগরীতে ৫৫ হাজার এবং গোটা জেলায় ১ লাখ ৯৯ হাজার মানুষ ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে তিনটি পণ্য-চাল, ডাল ও তেল কিনতে পারবেন। তবে কর্মসূচি শুরুর আগেই রাজশাহী মহানগরী এলাকায় ফ্যামিলি কার্ড তৈরিতে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ফ্যামিলি কার্ড তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত ওয়ার্ড কাউন্সিলররা ছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরাও টিসিবি কার্ড তৈরিতে প্রভাব খাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে কাউন্সিলররা নিজ নিজ সমর্থকদেরকেই কার্ড দিতে চেষ্টা করছেন। ফলে প্রকৃত নিম্ন আয়ের মানুষদের অনেকেই সরকারি এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।


অভিযোগের কথা স্বীকার করে টিসিবির রাজশাহী আঞ্চলিক অফিসের অফিস প্রধান ও সহকারী পরিচালক শহীদুল ইসলাম বলেন, ফ্যামিলি কার্ড তৈরি ও বিতরণে কিছু অনিয়মের অভিযোগ এসেছে। এসব অভিযোগ গ্রাহক পর্যায় থেকে যেমন এসেছে তেমনি ডিলার পর্যায় থেকেও এসেছে।


জানা গেছে, মহানগরী এলাকায় ১৫৫ জন ডিলারদের দোকান থেকে এসব পণ্য কার্ড দেখিয়ে কিনতে পারবেন ক্রেতারা। ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে পণ্য বিতরণ করা হবে। ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় ওয়ার্ড সদস্য ও ওয়ার্ড কাউন্সিলররাই কার্ড তৈরি করে পরিষদে তালিকা জমা দিয়েছেন।


টিসিবির এই কর্মসূচির আওতায় ১২০ টাকায় দুই কেজি ডাল, ২০০ টাকায় দুই লিটার তেল এবং ১৫০ টাকায় ৫ কেজি চাল কিনতে পারবেন কার্ডধারীরা। একজন কার্ডধারী প্রতি মাসে একবার পণ্য কিনতে পারবেন। এদিকে রাজশাহী মহানগরী এলাকায় জুনে করা কার্ডগুলোর মধ্যে ব্যাপক রদবদলের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে সিটি করপোরেশনে নির্বাচিত নতুন কাউন্সিলররা আগের কার্ডগুলো বাতিল করে নিজের অনুসারীদের কার্ড দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। আবার গত নির্বাচনে কে কাকে ভোট দিয়েছেন কার্ড বিতরণে সে প্রসঙ্গটি এসেছে কাউন্সিলরদের পক্ষ থেকে। এবারের নির্বাচিত কাউন্সিলরদের ভোট দেননি এমন অভিযোগে অনেকের কার্ড বাতিল করা হয়েছে।


রাসিকের ২৬নং ওয়ার্ডের জামালপুর এলাকার নিম্ন আয়ের এক নারী বলেন, জুনে রাসিক নির্বাচনে তিনি বর্তমান কাউন্সিলর আকতারুজ্জামান কোয়েলের প্রতিদ্বন্দ্বী একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর জন্য কাজ করেছিলেন। আগে থেকেই তার একটি ফ্যামিলি কার্ড ছিল। কিন্তু বর্তমান কাউন্সিলর ও তার লোকেরা তাকে কার্ড টোকেন দিতে অস্বীকার করেছেন। ওয়ার্ড কাউন্সিলর আকতারুজ্জামান কোয়েল যদিও এমন অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন।


অন্যদিকে রাসিকের ৮নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর জানে আলম জনি বলেন, বিদায়ি কাউন্সিলর দায়িত্ব ছাড়ার আগে তার সমর্থকদেরকে বঞ্চিত করে নিজের সমর্থকদের নামে কার্ড করে দিয়ে গেছেন। তবে এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি বিদায়ি কাউন্সিলর পাভেল।


নগরীর আরও কয়েকটি এলাকার মানুষের কাছ থেকে এমন অভিযোগ এসেছে টিসিবিতে। যে এলাকা থেকে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে সেই ১৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহীদুল ইসলাম পচা বলেন, আমি কার্ড তৈরির কাজ এখনো শেষ করতে পারিনি। আমার ওয়ার্ডে ১৮ হাজার ভোটার। অনেক গরিব মানুষ আছে ওয়ার্ডে। কিছু কার্ড বদল করতে হবে। বৃহস্পতিবার থেকে কার্ড টোকেন বিতরণ শুরু করব।


টিসিবির কার্ড তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলাব্যাপী কর্মসূচির সমন্বয়কারী রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরী বলেন, অভিযোগ পেলে আমরা বিষয়টি তদন্ত করব। প্রয়োজন হলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


শেয়ার করুন