২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৫:৩৬:১৮ অপরাহ্ন
সাকিবের আত্মবিশ্বাসই যেখানে নড়বড়ে
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-১০-২০২৩
সাকিবের আত্মবিশ্বাসই যেখানে নড়বড়ে

মাহমুদউল্লাহ, লিটন দাস, মোস্তাফিজুর রহমানের মতো ক্রিকেটাররা গতকাল ইডেনে সন্ধ্যায় দলীয় অনুশীলনে আসেননি। ঐচ্ছিক অনুশীলনে তাঁরা বিশ্রামে ছিলেন। তা তাঁরা থাকতেই পারেন। কিন্তু অনুশীলনে না থেকেও বেশি উপস্থিত থাকলেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ কলকাতায়, সাকিব ঢাকায়—গত দুই দিনে বাংলাদেশ ক্রিকেটে সবচেয়ে চর্চিত বিষয় বোধ হয় এটাই। গতকাল কলকাতার ভারতীয় সাংবাদিকদেরও আগ্রহ সাকিবকে নিয়েই। 


বিশ্বকাপ চলার সময়ে দলকে রেখে বাংলাদেশ অধিনায়ক ঢাকায় এসেছেন শৈশবের কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিমের কাছে। ফাহিমের সঙ্গে মিরপুরে তিনটি সেশন করার কথা থাকলেও গতকাল সে পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছেন সাকিব। স্বয়ং ফাহিমই জানালেন, নেদারল্যান্ডস ম্যাচের আগে তাঁর সঙ্গে তিনটি সেশন করার কথা ছিল সাকিবের। কিন্তু দুটি করেই আপাতত শেষ করতে হচ্ছে। কেন করতে হচ্ছে, সেটি অবশ্য তাঁর জানা নেই। জোর গুঞ্জন, বিসিবি ও টিম ম্যানেজমেন্টের চাপে সাকিবকে গতকাল রাতে কলকাতায় চলে আসতে হয়েছে। 


সাকিবের আকস্মিক ঢাকা সফরে প্রথমে যে প্রশ্নটি বাতাসে ভেসেছিল, সাকিব কি কোনো বাণিজ্যিক উদ্দেশে বা কোনো দোকানটোকান উদ্বোধন করতে ছুটলেন কি না? এ অপ্রীতিকর প্রশ্নের জন্য তিনি নিজেই দায়ী। অতীতে দল বা খেলা রেখে তাঁর হুটহাট বাণিজ্যিক বা ব্যক্তিগত উদ্দেশে চলে যাওয়ার উদাহরণ আছে বলে তাঁকে ঘিরে এ প্রশ্ন ওঠে। এবার অবশ্য হুট করে দল রেখে চলে আসার পেছনে পুরোটাই ক্রিকেটীয় কারণ। সেটি নিয়েও চলছে অনেক প্রশ্ন। 

দলে এত হাইপ্রোফাইল কোচ রয়েছেন। স্বয়ং প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে মাসে ২৭ হাজার ডলার বা ৩০ লাখ টাকা বেতন দিয়ে রেখেছে বিসিবি। অথচ সাকিব কিনা দেশে গেছেন শৈশবের কোচের সঙ্গে কাজ করতে। তাহলে হাথুরু, নিক পোথাস, শ্রীরাম শ্রীধরনদের কাজ কী? 


ফাহিমই জানালেন, সাকিব গত দুই দিন শুধু ব্যাটিং নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন। বিশ্বকাপে ৪ ম্যাচে ১৪ গড়ে রান ৫৬। দলের বিবর্ণ ব্যাটিংয়ে অধিনায়ক নিজেই যে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারছেন না, পরিসংখ্যানেই পরিষ্কার। অধিনায়কের আত্মবিশ্বাস যেখানে নড়বড়ে, দলের বাকিদের কী অবস্থা, না বললেও চলছে। ভারতের বিপক্ষে ঊরুর চোটে পড়ে ম্যাচ খেলতে পারেননি, মুম্বাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের আগে যখন জিজ্ঞেস করা হলো, এভাবে ম্যাচ না খেলতে পারলে দলকে উজ্জীবিত করা কতটা কঠিন? জবাবে সাকিব বলেছিলেন, ‘বিশ্বকাপের মতো পর্যায়ে কাউকে আসলে মোটিভেটেড করতে হয় না। সবারই সেই মোটিভেশন আছে।’ 


ক্রিকেট যদি ‘ক্যাপ্টেনস গেম’ হয়, অধিনায়ক এভাবে দলছুট হয়ে নিজের প্রস্তুতি নেন, তাতে কি পুরো দল উজ্জীবিত হয়? বাংলাদেশ বাদে বাকি সব দলের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর হবে, ‘না’। কারণ, কোনো দলের অধিনায়ক এভাবে হুট করে মেন্টরের কাছে ছুটে যাচ্ছেন না বা তাঁদের যেতে হচ্ছে না। অথচ কলকাতায় নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কাল বাংলাদেশের অস্তিত্বের লড়াই। সমশক্তি বা কাছাকাছির দল শ্রীলঙ্কা আর আফগানিস্তান যেখানে অসাধারণ খেলছে, বাংলাদেশ সেখানে ব্যর্থতার চোরাবালিতে হাবুডুবু খাচ্ছে।


এই হাবুডুবুর মধ্যে এখন নেদারল্যান্ডসও বাংলাদেশের কাছে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। কেউ কেউ মজা করে কালকের লড়াইকে ‘রেলিগেশন ফাইট’ও বলছেন। প্রোটিয়াদের হারিয়ে দেওয়া ডাচদের সামনে বাংলাদেশ বরং বেশি চাপে থাকবে। নেদারল্যান্ডসের হারানোর কিছু নেই। কিন্তু বাংলাদেশ অনেক আগেই ধরে রেখেছে, ডাচদের বিপক্ষে তাদের ২ পয়েন্ট পেতেই হবে। সেই চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে সাকিবের ঝটিকা ঢাকা সফর। অহেতুক বিতর্ক-আলোচনার সুযোগ করে দিয়েছে।


কাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে কাজ করতে সাকিবকে কিছু দর্শকের ধুয়ো পর্যন্ত শুনতে হয়েছে। সাকিব-তামিমের দ্বন্দ্বকে ঘিরে এমনিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট সমাজ এখন দ্বিধাবিভক্ত। তবু বিশ্বকাপ চলার সময়ে নিজেদের দলের একজন অধিনায়ককে এভাবে দুয়ো দেওয়াটা কতটা সমীচীন? এসব দৃশ্য তো বাংলাদেশ ক্রিকেটে একেবারে বিরল। অধিনায়কের কার্যকলাপই যেখানে বিতর্ক উসকে দেয়, দর্শকদের দুয়োর কথা বলে আর কী হবে!


শেয়ার করুন