২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৯:১৩:১৯ অপরাহ্ন
পুলিশের গ্যাসগানের জোর কমেছে, গতি নেই শেলের
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-১০-২০২৩
পুলিশের গ্যাসগানের জোর কমেছে, গতি নেই শেলের

‘বিজয়নগরে হোটেল ৭১-এর সামনে এক পুলিশ সদস্যকে মারছিল কয়েকজন দুর্বৃত্ত। হঠাৎ তারা নাইটিঙ্গেল মোড়ে আমাদের দিকে তেড়ে আসতে থাকে। তাদের দিকে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়তে গ্যাসগানের ট্রিগার টিপলেও কয়েকটি থেকে বের হয়নি। একটি গ্যাসগান থেকে বের হলেও মাত্র দুই হাত দূরে পড়ে। ফলে নিজেদের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেলের কারণে নিজেদেরই পিছু হটতে হয়।’—কথাগুলো বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার এক কর্মকর্তা।


রাজধানীতে গত শনিবার বিএনপির কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার অস্ত্র নিয়ে এমন অভিজ্ঞতা জানান ডিএমপির আরও কয়েকজন কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য। রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের কয়েকজন সদস্যও একই রকম কথা জানান। মাঠে থাকা এসব কর্মকর্তা ও সদস্যরা বলেন, অস্ত্রগুলো ঠিকমতো কাজ করেনি। অনেক আগে কেনা অস্ত্রগুলো কার্যকারিতা হারাচ্ছে। ফলে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড গতি পাচ্ছে না।


গতকাল রোববার বিষয়টি নিয়ে ডিএমপির বিভিন্ন পদমর্যাদার সদস্যদের মধ্যে আলোচনা হয়। কেউ কেউ দাঙ্গা দমনের অপ্রতুল প্রশিক্ষণের কথাও বলেন।


জানতে চাইলে গতকাল রোববার ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) এ কে এম হাফিজ আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, সব গ্যাসগানের এমন হওয়ার কথা নয়। দু-একটার সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যা বেশি দেখা দিলে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে গ্যাসগান নিয়ে আসা হবে।


রাজধানীতে শনিবার বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের সময় আমিরুল ইসলাম পারভেজ নামের এক পুলিশ সদস্য নিহত এবং অর্ধশত সদস্য আহত হন। আমিরুল ফকিরাপুলে দলবিচ্ছিন্ন হয়ে বেধড়ক মারধরে নিহত হন। পুলিশের একটি সূত্র বলেছে, সংঘর্ষের সময় কেউ কেউ দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। কাঁদানে গ্যাসের শেল বা সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে নিরাপদে সরে আসার চেষ্টা করলেও গ্যাসগান ঠিকমতো কাজ করেনি। ফলে তাঁরা মারধরের শিকার হন।


রমনা থানা-পুলিশের এক সদস্য বলেন, গ্যাসগান ঠিকমতো কাজ করে না। বলতে গেলে একপ্রকার অকেজো হয়ে পড়েছে। পুলিশসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, ২০১০ সালে যুক্তরাজ্য থেকে গ্যাসগান কিনেছিল বাংলাদেশ পুলিশ। সেই চালানের গ্যাসগানই সে সময় ডিএমপিতে দেওয়া হয়েছিল। এরপর ২০১৮ সালে অস্ত্রের আরেকটি চালান কেনা হলেও সেই গ্যাসগানগুলো ডিএমপিতে আসেনি।


এদিকে দাঙ্গা দমনে নিয়োজিত একাধিক পুলিশ সদস্য বলেন, শুধু রাজনৈতিক সহিংসতা বা নানা ইস্যুতে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গের দায়িত্ব থাকে পুলিশের ওপর। কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে—এমন বিশেষ কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা পুলিশ সদস্যদের নেই। ফলে উপস্থিত বুদ্ধিতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।


তবে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখা বলেছে, দুই মাস ধরে পূর্বাচলে বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার কৌশলসংক্রান্ত একাধিক মহড়া করা হয়েছে। এই ধরনের মহড়া নিয়মিত করার পরিকল্পনা ডিএমপির রয়েছে।


মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ উমর ফারুক বলেন, উন্নত দেশের পুলিশকে প্রতিটি ইভেন্ট মোকাবিলার জন্য আলাদা কৌশল শেখানো হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো ‘ট্র্যাডিশনাল পুলিশিং’ চলছে। অস্ত্রগুলোও তেমন।


শেয়ার করুন