দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামীকাল শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে এই সংলাপ। নির্বাচনের প্রস্তুতির অগ্রগতিসহ সার্বিক বিষয়ে আলোচনার জন্য ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইসি। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের কাছে এ-সংক্রান্ত চিঠি পৌঁছে গেছে। তবে সংলাপে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে রয়েছে নানা বিভক্তি।
সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। বর্তমান একাদশ সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৯ জানুয়ারি। হিসাব অনুযায়ী, ৯০ দিনের গণনা শুরু হয়েছে গত ১ নভেম্বর। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা এবং আগামী জানুয়ারির শুরুতে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। তপশিল ঘোষণার আগে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সাক্ষাৎ চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। তার আগেই ভোটের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ ডেকেছে কমিশন।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানিয়েছেন, ‘দুই ভাগে ইসির সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। সংলাপের জন্য দলগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কিংবা তাদের নির্ধারণ করা দুজন প্রতিনিধিকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’
এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসেছিল ইসি। তখন বিএনপিসহ ৯টি দল নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে সাড়া দেয়নি। তারা বলেছিল, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পক্ষে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের শরিকসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ইসির ডাকে সাড়া দিয়ে সংলাপে অংশগ্রহণ করবে। অন্যদিকে, এবারও নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগ প্রত্যাখ্যান করছে বিএনপি ও তাদের যুগপৎ আন্দোলনের মিত্ররা। সংলাপ নিয়ে বিভক্ত ইসলামী দলগুলো। এ ছাড়া কিছু রাজনৈতিক দল এখনো রয়েছে সিদ্ধান্তহীনতায়। নিবন্ধিত দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সংলাপ নিয়ে তাদের এমন অবস্থানের বিষয়টি জানা গেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ইসির সংলাপে অংশগ্রহণ করবে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা। তাদের দাবি, নির্বাচনের সময় নির্বাচনকালীন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় শুধু রুটিন কাজ করবে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের মূল দায়িত্ব থাকবে ইসির। তাই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করার জন্য ইসির ডাকে সাড়া দিয়ে সংলাপে যাবেন তারা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম কালবেলাকে বলেন, ‘চিঠি পেয়েছি। ইসির সংলাপে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল যাবে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন কাজ করছে। তাদের ডাকে সাড়া দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।’
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ ইসির ডাকা সংলাপে অংশগ্রহণ করবেন বলে দলটির দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের মতোই সংলাপে যাবে জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ ১৪ দলের শরিকরা। একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে গণফোরাম ও বিকল্পধারা।
অন্যদিকে, বিএনপিসহ যুগপতের মিত্ররা সংলাপে যাবে না। তাদের দাবি, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। এখানে ইসির কিছু করার নেই। তা ছাড়া বর্তমান ইসি সরকারের একান্ত অনুগত। সুতরাং ইসির এই সংলাপ কোনো সুফল বয়ে আনবে না। দলগুলো এখন সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নতুন ইসি গঠন ও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে চূড়ান্ত ধাপের আন্দোলনে রয়েছে। দাবি আদায় করেই নির্বাচনে অংশ নিতে চান তারা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কালবেলাকে বলেন, ‘দলীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ। সব নেতার নামে মামলা। মিথ্যা মামলায় নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এমন অবস্থায় নেতাদের জেলে রেখে কে বসবে সংলাপে?’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। এই সিদ্ধান্তে আমরা অটল রয়েছি। সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। আন্দোলনে দাবি আদায় করেই আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।’
নির্বাচন কমিশনের এই সংলাপের বিষয়ে নেতিবাচক অবস্থানের কথা জানিয়েছেন বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের মিত্ররাও। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি অলি আহমদ বলেন, ‘আমরা চিঠি পেয়েছি। সরকারের মনোভাব পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত ইসি সংলাপ ডাকলে কোনো সুফল বয়ে আনবে না। সুতরাং এখানে চা-নাশতা খেয়ে জনগণের পয়সা নষ্ট করে কোনো লাভ নেই।’
চিঠি পেয়েছেন জানিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘ইসির সংলাপে আমরা যাচ্ছি না। কারণ, যাওয়াটা অপ্রয়োজনীয়, অর্থহীন।’