ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর বিশ্বনন্দিত সাফল্যে পৃথিবীতে আবার ফিরে আসছে প্রায় ৫০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের চন্দ্রাভিযানের স্মৃতি। অ্যাপোলো ১১ মিশনে চাঁদে প্রথমবারের মতো মানুষ পাঠিয়েছিল নাসা।
অ্যাপোলো ১১ চাঁদে অবতরণ করে ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই। তার ৬ ঘণ্টা পর চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখেন নীল আর্মস্ট্রং। পরবর্তী ১৯ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসাবে চাঁদ স্পর্শ করেন এডুইন অলড্রিন।
কী আছে চাঁদে? কী দেখেছেন তারা? চাঁদ থেকে ঘুরে এসে একাধিক সাক্ষাৎকারে এমন বহু কৌতূহল নিরসন করেছেন দুই মহাকাশচারী। চাঁদে মোট ২১ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট কাটিয়েছিলেন আর্মস্ট্রং ও অলড্রিন। তার পর থেকে ১৯৭২ সালের ১৯ ডিসেম্বর (অ্যাপোলো-১৭) পর্যন্ত ১২ জন নভোচারী চাঁদের মাটিতে হাঁটাহাঁটি করেছেন।
সেখানে নানা অসুবিধার মোকাবিলা করতে হয়েছিল তাদের। তবে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা সেটি ছিল ‘মলমূত্র ত্যাগ’। যে মহাকাশযানে চাঁদে পৌঁছেছিলেন আর্মস্ট্রং এবং অলড্রিন সেখানে কোনো শৌচাগার ছিল না। মলমূত্র ত্যাগের জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি প্লাস্টিকের ব্যাগ পাঠিয়েছিল নাসা। আনন্দবাজার পত্রিকা, নাসা।
মূত্রত্যাগের জন্য নিরোধকের মতো একপ্রকার নলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তার মাধ্যমে প্লাস্টিক পর্যন্ত পৌঁছত তরল। তবে শুধু পুরুষদের জন্যই এই বিশেষ ব্যবস্থা করেছিল নাসা। মলত্যাগের জন্য আলাদা প্লাস্টিকের ব্যাগের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
পরবর্তীকালে যারা চাঁদে গিয়েছেন, তারাও এই পদ্ধতিতেই কাজ করেন। মলভর্তি সেই ব্যাগগুলো চাঁদের মাটিতেই ফেলে এসেছিলেন মহাকাশচারীরা। নাসা বলছে, সব মিলিয়ে মানুষের ব্যবহার করা বর্জ্য, মলসহ ৯৬টি ব্যাগ পড়ে রয়েছে চাঁদে। চন্দ্রপৃষ্ঠে যেহেতু হাওয়া চলাচল করে না, তাই ওই বর্জ্য পদার্থ-সহ ব্যাগগুলো ৫০ বছর ধরে পড়ে রয়েছে একই অবস্থায়।
আর্মস্ট্রং, অলড্রিনরা যখন চাঁদে নেমেছিলেন, তারা ডায়াপার পরেছিলেন। অলড্রিন পরে নিজেই জানিয়েছেন, তিনি প্যান্টে প্রস্রাব করে ফেলেছিলেন। তবে ডায়াপার পরা ছিল।
এ প্রসঙ্গের পৃথক একটি বিবৃতিতে নাসার বক্তব্য, ফেরার সময়ে মহাকাশচারীরা মল ভর্তি সেই ব্যাগগুলো পৃথিবীর মাটিতে ফেরত আনলেও সঙ্গে আনতে পারেননি তাদের ব্যবহার করা ডায়াপার এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ। সেগুলোর ছবিই ধরা পড়েছে ক্যামেরায়।
চাঁদে গিয়ে আর্মস্ট্রংদের মেনুও ছিল বেশ মজাদার। প্রথমে তারা খেয়েছিলেন কফি এবং বেকন। এ ছাড়া, সবজি এবং গোমাংস খেয়েছিলেন দুই মহাকাশচারী। মেনুতে ছিল আঙুর, কমলালেবুর রস, স্ট্রবেরি এবং পিচ ফল।
আর্মস্ট্রংদের চন্দ্রযাত্রায় অনেক ঝুঁকি ছিল। কোথাও কোনো সিস্টেমে সামান্যতম ক্রুটিও ডেকে আনতে পারত প্রাণঘাতী বিপদ। চাঁদেই নেমে আসতে পারত মৃত্যু। সে কথা ভেবে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন মৃত্যুপরবর্তী ভাষণও তৈরি করে রেখেছিলেন। ৩০ বছর পর সেই ভাষণ প্রকাশ করা হয়।
পৃথিবীতে ফিরে এসে সঙ্গে সঙ্গে মাটি ছুঁতে পারেননি আর্মস্ট্রংরা। ২১ দিন তাদের মহাকাশযানে নিভৃতবাসে রাখা হয়েছিল। চাঁদ থেকে কোনো জীবাণু তারা বহন করছেন কিনা, সেই সম্ভাবনার কথা ভেবে নিভৃতবাসের বন্দোবস্ত করেছিল নাসা। সেখানেই আর্মস্ট্রং ৩৯তম জন্মদিন পালন করেন।