২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:৪৬:৩৭ অপরাহ্ন
আ.লীগ বিএনপির সমঝোতার চেষ্টা থেমে নেই
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-১১-২০২৩
আ.লীগ বিএনপির সমঝোতার চেষ্টা থেমে নেই

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে বিপরীত মেরুতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দল দুটি এখন রাজপথে শক্তি প্রদর্শনে ব্যস্ত। বিএনপির নেতারা বলছেন, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আওয়ামী লীগ সরকার মেনে নিলেই কেবল একটি সমঝোতার পথ উন্মুক্ত হতে পারে। এর বিপরীতে আওয়ামী লীগের অবস্থানও অনড়- আগামী সংসদ নির্বাচন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনেই হবে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দূতাবাস দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।


বিএনপির ‘রাজপথেই ফয়সালা হবে’ আর আওয়ামী লীগের ‘বিএনপিকে কোনো ছাড় নয়’- এই নীতির ফলে রাজপথ ক্রমেই রক্তক্ষয়ী হয়ে উঠছে। বিরোধী দল বিএনপি সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আজ থেকে আবারও দুই দিনের সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। আবার যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব এবং দেশের সুশীল সমাজ আলোচনায় সমাধানের কথা বললেও সংলাপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ অবস্থায় সংকট নিরসনে আপাতত সংলাপ বা সমঝোতার কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।


তবে সমঝোতার চেষ্টা থেমে নেই। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা বিশ^ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনায় তারা সংলাপের গুরুত্ব তুলে ধরছেন। বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ এবং দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক, এমনকি নির্বাচন কমিশনও মনে করে প্রধান দুই দলের মধ্যে নির্বাচন ইস্যুতে অর্থবহ সংলাপ প্রয়োজন।


সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক মিশন ওয়াশিংটনে ফিরে গিয়ে যে সুপারিশমালা প্রকাশ করেছিল তাতেও ‘নির্বাচন ইস্যুতে সংলাপ’কেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলও তাদের প্রতিবেদনে সংলাপকে গুরুত্ব দেয়। এর ধারবাহিকতায় সরকার, নির্বাচন কমিশন, আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে বৈঠক করে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূতরা।


গত বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। বৈঠক সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাস কোনো পক্ষই কোনো কিছু খোলাসা করেনি। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে হাস সাংবাদিকদের বলেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচনে কোনো পক্ষের সংঘাতের জায়গা নেই। তিনি আশা করেন, বাংলাদেশে উদ্বেগ প্রশমন এবং একটি অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথ খুঁজতে সব পক্ষ শর্তহীন সংলাপে বসবে।


অন্যদিকে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক নির্বাচন ইস্যুতে সিরিজ বৈঠক করছেন। এসব বৈঠকে তিনি সংকট সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ। বৈঠকে রাজনীতিতে সংঘাতময় পরিস্থিতি সমাধানে বিরোধীদের সঙ্গে সংলাপে বসতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে পরামর্শ দেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার। পরে বৈঠকের বিষয়ে একটি এক্সবার্তায় হাইকমিশন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানান।


আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকের পরের দিন গত বুধবার জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সারাহ কুক। পরে ঢাকায় যুক্তরাজ্য হাইকমিশন এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া একটি পোস্টে জানায়- বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য একসঙ্গে কাজ করতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। পরের দিন গত বৃহস্পতিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের সঙ্গে বৈঠক করেন সারাহ কুক। পরে হাইকমিশনের একটি এক্স পোস্টে বলা হয়, অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টিতে সংযম প্রদর্শন, সহিংসতা পরিহার এবং একযোগে কাজ করার জন্য যুক্তরাজ্য সব অংশীজনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।


সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এখন পরিস্থিতি যেটা আমাদের রাজনীতিবীদরা রাজপথে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছেন। তবে এটা রাজপথে সমাধানের সমস্যা নয়। রাজপথে কোনো সমস্যার সমাধান তো হয়ই না, বরং আরও জটিল হয়। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তিনি বলেন, আমার আশঙ্কা, যে সহিংসতা শুরু হলো এটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে দোষারোপ করবে; কিন্তু তার মাসুল দিতে হবে জনগণকে। এটা আমাদের অর্থনৈতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে। এর ফল সবাইকে ভোগ করতে হবে। এতে সরকারও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই রাজনীতিবিদদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে আলোচনার টেবিলে বসার। বসে এই সমস্যার জন্য সংলাপ, সমঝোতা এবং সমাধানে পৌঁছাক- এটাই এখন পথ; সংলাপই একমাত্র পথ।


শেয়ার করুন