২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৩:৩২:৪৩ অপরাহ্ন
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগ: শরীফ-বাবুল দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-১১-২০২৩
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগ: শরীফ-বাবুল দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হয় গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে। এরপর দলে বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই বিরোধে দুই পক্ষের দুজন নেতার নাম সামনে এসেছে। তাঁরা হলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী, দলের জেলা কমিটির সদস্য শরীফ আহমেদ এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল। তাঁদের এখন মুখ দেখাদেখি দ্বন্দ্ব।কোনো কর্মসূচিতে শরীফ আহমেদ থাকলে সেখানে মোয়াজ্জেম হোসেন যান না বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।


প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এর আগে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ছিলেন। মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল আগের কমিটিতেও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাই জাতীয় নির্বাচনের আগে দলের দুই শীর্ষ নেতার দ্বন্দ্বে দল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।


জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের ৭৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ২৭ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদেরও অনুমোদন দেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ৬ দিনের মাথায় সরব হয়ে ওঠেন পদ না পাওয়া নেতারা। পালন করেন বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি। ‘হাইব্রিড ও বিতর্কিত’দের বাদ দিয়ে কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে তাঁরা টানা ৪ দিন আন্দোলন চালিয়ে যান।


জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির তিন নেতার বাবা ও একজনের শ্বশুরের নামে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকে সরাসরি জেলা কমিটির সহসভাপতির পদ পাওয়া, সহযোগী সংগঠন না করেই জেলা কমিটিতে স্থান পাওয়া, অন্য জেলার লোক কমিটিতে জায়গা পাওয়ার মতো অভিযোগ তোলা হয় ওই সব কর্মসূচি থেকে।


এমন ঘটনায় চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয় তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নানাভাবে। ২৯ সেপ্টেম্বর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহসভাপতি মনোয়ার হোসেন মিনার অধ্যক্ষ মিনার নামে তাঁর ফেসবুক আইডিতে পোস্টে লেখেন, যে নেতা তার জেনুইন কর্মীদের মূল্যায়ন করে না সে মুনাফেক। নেতা চিনে তারপর রাজনীতি করতে হয়।


পদ না পাওয়া নেতাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামূল আলম এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল ও কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়ী করেন।


 তবে আন্দোলন জোরদার হলে অবস্থান থেকে সরে আসেন এহতেশামূল আলম। বিরোধ থেকে যায় শরীফ আহমেদ ও মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের মধ্যে।


দলীয় সূত্রে আরও জানা যায়, গত ১৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্স সফল করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিয়ে সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে বৈঠক বসে। অনুষ্ঠানে খরচ নিয়ে কথা বলার একপর্যায়ে তর্কবিতর্ক শুরু হয় শরীফ আহমেদ ও মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের মধ্যে।


মুহূর্তের মধ্যে সেখানে হট্টগোল বেধে যায়। এক পর্যায়ে শরীফ আহমেদের অনুসারীরা মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলকে হেনেস্তা করেন। তখন জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক অধ্যক্ষ আবু সাঈদ দীন ইসলাম ফখরুল মারধরের শিকার হন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। আবু সাঈদ তখন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।


কমিটি ‍নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে দলের কয়েকজন নেতার মধ্যে ধাক্কাধাক্বি হওয়ার কথা স্বীকার করেন জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক অধ্যক্ষ আবু সাঈদ দীন ইসলাম ফখরুল। তবে তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের দলের ইন্টারনাল (অভ্যন্তরীণ) বিষয়। এ নিয়ে আমি কোনো কমেন্ট (মন্তব্য) করব না।’


‘পদবঞ্চিতদের’ হামলার আশঙ্কায় ১৯ অক্টোবর সার্কিট হাউস মাঠে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সে যাননি সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল ও তাঁর অনুসারীরা। এরপর জেলায় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে আয়োজিত কোনো অনুষ্ঠানে ওই দুই শীর্ষ নেতাকে আর একমঞ্চে দেখা যায়নি। মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি তৎপর রয়েছেন জামায়াত-বিএনপির ‘নৈরাজ্যে’র প্রতিবাদে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাসহ নানা কর্মকাণ্ডে।


আগামী পরশু (১৪ নভেম্বর) খাদ্য অধিদপ্তরের একটি অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রীর আসার কথা রয়েছে। সে অনুষ্ঠানে শরীফ আহমেদ ও মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলকে মিলমিশের কথা শোনা যাচ্ছে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাদ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, খাদ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলকে আমন্ত্রণ জানানোর দায়িত্ব নিয়েছেন জেলা প্রশাসক। সেখানেও হট্টগোলের আশঙ্কা করছেন নেতারা। কারণ কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ।


এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের মোবাইল ফোনে গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে এই প্রতিবেদক খুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।  


মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল গত মঙ্গলবার রাতে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেটা ঘটেছিল সেটা তেমন কিছু না। এখন তা ঠিক হয়ে গেছে।’ তাহলে কী এখন আপনারা ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় কার্যক্রম চালাচ্ছেন এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ। আমরা (ঐক্যবদ্ধভাবে) করব।’  


জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামূল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের (নেতা) মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। আর কমিটিতে পদ না পেয়ে যাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, তাঁরা কেন্দ্রে একটা অভিযোগ দিয়েছেন। ফলে সে বিষয়ে কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত আসবে।’


শেয়ার করুন