প্রখ্যাত নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ফেরদৌস আরা গানের ভুবনে পথচলার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নিয়মিত অভিনয়ের প্রস্তাব পান।
কিন্তু কখনই তাকে অভিনয়ের আঙিনায় দেখা যায়নি। ১৯৭৩-৭৪ সালে প্রয়াত পরিচালক আজমল হুদা মিঠু তাকে বিটিভিতে একটি অনুষ্ঠানে দেখে নায়িকা হওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু ফেরদৌস আরা এবং তার পরিবার সেই বয়সে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের কথা চিন্তাও করেননি।
ফেরদৌস আরা প্রস্তাব পেয়েছিলেন ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’ চলচ্চিত্রের প্রধান একটি চরিত্রে অভিনয় করার। কিন্তু তাতেও অভিনয় করা হয়নি তার। কলকাতা থেকেও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি। সমরেশ মজুমদার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাকে অভিনয় করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু গান ছাড়া ফেরদৌস আরা আর কিছুই ভাবেননি কখনো। তবে ফেরদৌস আরা তার সিদ্ধান্তে এবার একটু পরিবর্তন এনেছেন। নাটকে নয়, চলচ্চিত্রে অভিনয়ের আগ্রহ আছে তার।
ফেরদৌস আরা বলেন, নজরুল বিষয়ক কোনো চলচ্চিত্র নির্মিত হলে সেই চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ থাকলে তাতে অভিনয় করার আগ্রহ আছে আমার। আমি জানিনা আমার এই ইচ্ছা পূরণ হবে কিনা। তবে আমার মনে হয় নজরুলের জীবন নিয়ে কোনো চলচ্চিত্র নির্মিত হলে তাতে অভিনয় করার সুযোগ পেলে আমি শান্তি পাব।
ফেরদৌস আরা ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৮৫ সালে সারগাম থেকে ১২টি গান নিয়ে প্রথম ক্যাসেট এবং এর পরপরই হারানো দিনের গানের ক্যাসেট-সিডি ‘আকাশের মিটি মিটি তারা’ ব্যাপক সমাদৃত হয়। উজবেকিস্তানে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর পঞ্চম ফোক উৎসবে ৫২টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্বকারী শিল্পীদের মধ্যে ফেরদৌস আরা ‘দ্য বেস্ট ভোকালিস্ট’ হন। দীর্ঘদিন যাবত তিনি নজরুল ইনস্টিটিউটে একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিয়ে আসছেন। সর্বশেষ তিনি গৌতম ঘোষের ‘শঙ্খচিল’ চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করেছেন। প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্মিত ‘বাস্তবতা’ চলচ্চিত্রের সুরকার ও কম্পোজার হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। ফেরদৌস আরার একক কণ্ঠে হাজার গান প্রয়াসে ‘নজরুল সঙ্গীত সমগ্র’ শিরোনামে নিয়মিত অ্যালবাম প্রকাশ হচ্ছে; যা সংস্কৃতি অঙ্গনে বিশেষ অবদান রাখছে। ২০০০ সালে ফেরদৌস আরা তার নিজের উদ্যোগে সঙ্গীত একাডেমি ‘সুরসপ্তক’ প্রতিষ্ঠিত করেন। ‘সঙ্গীত ভুবনে নজরুল’ ও ‘সঞ্চিতার কথাবার্তা’ নামে তার দুটি বই রয়েছে।