নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আরেকটি টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে স্বস্তিতে নেই বাংলাদেশ। চোট আর ছুটিতে থাকায় কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার নেই নিজেদের মাঠে দুই টেস্টের সিরিজে। অভিজ্ঞতা ও শক্তিমত্তা বিবেচনায় বাংলাদেশ খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। তবে তারুণ্যনির্ভর এই বাংলাদেশ দলের প্রেরণা হতে পারে সেই মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৭ টেস্ট খেলে গত বছর মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে প্রথম জয়ের দেখা পেয়েছিল বাংলাদেশ দল। সেই টেস্টেও ছিলেন না সাকিব-তামিম। এবারও তাঁরা নেই। না থাকার তালিকায় এবার আছেন লিটন দাস। এমনকি মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জয়ের অন্যতম নায়ক পেসার ইবাদত হোসেনও নেই, ছিটকে গেছেন তাসকিন আহমেদ। তবু ওই মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টই বাংলাদেশের অনুপ্রেরণা। সাকিব-তামিমকে ছাড়াই নিউজিল্যান্ড থেকে ঐতিহাসিক জয় নিয়ে ফিরেছিল বাংলাদেশ।
নিজেদের মাঠে কিউইদের বিপক্ষে ৬ টেস্ট খেলে ৩টিতে হার এবং ৩ ম্যাচে ড্র করেছে বাংলাদেশ। এই তিনটি ড্র নিজেদের শেষ তিনটি টেস্টেই। কিউইদের কাছে বাংলাদেশ সর্বশেষ টেস্টে হেরেছে ২০০৮ সালে, মিরপুরে। নিজেদের মাঠে কখনোই নিউজিল্যান্ডকে টেস্ট না হারানো বাংলাদেশ এবার কি পারবে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের পারফরম্যান্সের পুনরাবৃত্তি করতে?
সিলেট কিংবা মিরপুর—দুই টেস্টে বাংলাদেশকে নিয়ে খুব একটা আশাবাদী হতে পারছেন না দেশের ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের চোখে বরং নিউজিল্যান্ডই এগিয়ে থাকছে। জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার এবং প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক তুষার ইমরান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই দলের পার্থক্য অনেক (বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড)। ওরা টেস্ট ক্রিকেটকে এত গুরুত্ব দেয় যে শক্তিশালী একটা দল নিয়ে এসেছে, পুরোপুরি ভারসাম্যপূর্ণ। আর আমাদের কয়েকজন সিনিয়র, অভিজ্ঞ ক্রিকেটার নেই। অভিজ্ঞদের মধ্যে শুধু মুশফিক-মুমিনুল হক আছে। সাকিব, তামিম, লিটন নেই। কঠিন হবে আমাদের জন্য।’
এই বছর নিজেদের মাঠে টেস্ট হারেনি বাংলাদেশ দল। তবে প্রতিপক্ষও এমন শক্তিশালী কোনো দল নয়, আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুই টেস্ট খেলে দুটিতেই জয়। আফগানরা এসেছিল রশিদ খানকে ছাড়াই। তবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে জয়ের ধারা রাখা সহজ হবে না বলে মনে করেন তুষার, ‘নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সহজ হবে না। অন্তত ভালো ক্রিকেট যেন খেলতে হলে টেস্ট মেজাজে বা ভালো ব্যাটিং করি, এক দিনে যেন অলআউট না হই। ৬টা উইকেট হারালে পরের দিন যেন ব্যাটিং করতে পারি।’
সাবেক কোচ রাজিন সালেহর উঠানেই এবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট। বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়কের চোখেও নিউজিল্যান্ড অনেক এগিয়ে, ‘আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলব না যে বাংলাদেশ দল জিতবে। নিজেদের মাঠে খেলা, তাতেই আমরা ফেবারিট, তা কিন্তু নয়। নিউজিল্যান্ডের ভালো কিছু বোলার আছে। আমাদেরও আছে। যদি জিততে চাই, অনেক কষ্ট করতে হবে। সাকিব-তামিম-লিটন নেই। যারা আছে, তারা অবশ্য ঘরোয়া লিগের ভালো পারফরমার। তবু আমি বলব, নিউজিল্যান্ডের জেতার সম্ভাবনা বেশি।’
আর তুষার মনে করেন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের মাঠে টেস্ট জয়ের চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলায় মনোযোগ দেওয়া উচিত বাংলাদেশ দলের। তিনি বললেন, ‘আমরা যদি ম্যাচ হেরেও যাই, অন্তত পাঁচ দিন যেন খেলতে পারি। একটা টেস্ট জিততে গেলে চার দিন দাপট দেখাতে হয়। ড্র করতে গেলেও পাঁচ দিনই ভালো খেলা লাগে। জেতা একটু কঠিন আমাদের জন্য। তাসকিন-ইবাদত নেই; যা করতে হবে, স্পিনারদেরই করতে হবে।’
তবে এই সিরিজে সাকিব-তামিমদের অনুপস্থিতিতে নতুনদের প্রমাণের বড় সুযোগ দেখছেন রাজিন-তুষারের মতো ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বকাপ-ব্যর্থতার পর বিসিবির পরিচালক আকরাম খান এই সিরিজকে দেখছেন স্বস্তি ফেরানোর সুযোগ হিসেবে। বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক কাল সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘বিশ্বকাপে বাজে ফল নিয়ে ফেরার পর ভালো খেলে ক্রিকেটে স্বস্তি ফেরানোর সুযোগ এই টেস্ট সিরিজ।’