২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৩:০৩:৩৩ অপরাহ্ন
আ.লীগ রাজশাহী নগরীতে আর নৌকা হারাতে চায় না কোনো বৈরাগীর কাছে
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-১১-২০২৩
আ.লীগ রাজশাহী নগরীতে আর নৌকা হারাতে চায় না কোনো বৈরাগীর কাছে

টানা ১৫ বছর ধরে রাজশাহী সদর-২ আসনে এমপি হয়ে আছেন বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসন বাদশা। তিন বারই তিনি তাঁর দলের হাতুড়ি প্রতীক ফেলে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন।এবারও মাহজোটগত নির্বাচন হলে ফজলে হোসেন বাদশা নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করবেন। সেই প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন তিনি এবং তার দলের নেতাকর্মীরা। তবে নৌকা নিয়ে এমপি হয়ে গত ১৫ বছরে রাজশাহীর উন্নয়নে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।এমনকি জোটের প্রধান শরিক দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও এমপি বাদশার বিরোধ রয়েছে চরমে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন থেকে শুরু করে একাধিক এমপি এবং মহানগর আওয়ামী লীগের অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের মধ্যে অনেকের সঙ্গেই রয়েছে বাদশার দূরুত্ব।


আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এমপি বাদশা তিন বার এমপি হয়ে তিনি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কোনো উপকারে আসেননি। উল্টো তাঁর প্রাপ্ত সরকারি বরাদ্দগুলো তিনি নিজ সংগঠনসহ বিভিন্ন ভূঁইফোড় সংগঠনের নামে বরাদ্দ দিয়ে কোটি কোটি টাকা তোছরুপ করেছেন। এসব বরাদ্দগুলোর তালিকা সম্প্রতি গণমাধ্যকর্মীদেরও হাতে এসে পৌঁছে। তাতে দেখা যায় গত ৫ বছরেই এমপি ফজলে হোসেন বাদশা টিআর-কাবিখা প্রকল্প থেকে যেসব বরাদ্দ দিয়েছেন, তার অধিকাংশরই কোনো হদিশ নাই। এই অবস্থায় আগামী নির্বাচনে ফজলে হোসেন বাদশাকে এবার নৌকা প্রতীক না দিয়ে দলের প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামালের হাতেই এ প্রতীক রাখার জন্য দাবি তুলেছেন নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে গতকাল রবিবার মোহাম্মদ আলী কামালকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। এ নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার তৈরী হয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে। কারণ রাজশাহী-২ মহানগর নিয়ে গঠিত এই আসনটি কখনোই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পাইনি। এবার আর নৌকা কোনো বৈরাগীর কাছে হাতছাড়া করতে চান না দলটির নেতাকর্মীরা।


নেতাকর্মীরা বলছেন, এমপি ফজলে হোসেন বাদশা ওয়াকার্স পার্টির নেতা। সেই হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগে বৈরাগী।আবার রাজশাহী নগরীতে ৫ হাজারের বেশি ভোট নাই তার। অথচ এই শহরে প্রায় তিন লাখ ভোটার।আর ১৫ লাখ মানুষের বসবাস।কিন্তু মাত্র ৫ হাজার ভোটারের নেতা হয়ে তিনি লাখ লাখ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন না। সে কারণেই গত ১৫ বছরে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। এমপি হয়েইও নগরের উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি। কাজেই এ নগরীর উন্নয়নে আওয়ামী লীগের মতো বৃহৎ দলের নেতৃত্বই প্রয়োজন।


রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শফিকুর রহমান বাদশা বলেন, ‘রাজশাহী সদর আসনে দলের নেতাকর্মীরা আর অন্য কাউকে চাই না। গত ১৫ বছরে রাজশাহী সদর আসনে নৌকা প্রতীক অন্য দলের হাতে তুলে দেওয়ায় এখানে আওয়ামী লীগের অনেক ক্ষতি হয়েছে। যিনি নৌকা নিয়ে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছিলেন, তিনি পরবর্তিতে ভুলে গিয়েছিলেন যে তিনি আওয়ামী লীগের শরিক দলের এমপি। সে কারণে এখানে আওয়ামী লীগের ক্ষতি ছাড়া লাভ হয়নি। কাজেই এবার মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদারে মাঝেই নৌকা প্রতীক দেওয়া দরকার।


রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আহসানুল হক পিন্টু বলেন, ‘এমপি বাদশাকে গত তিন বার মনোনয়ন দেওয়ায় রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। এবার আমরা আশা করবো দলের নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে।’


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনকি সম্পাদক পদের আরেক নেতা বলেন, ‘হাতুড়ি প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলে ফজলে হোসেন বাদশা ৫ হাজার ভোটও পাবেন না। কিন্তু তিনি নৌকা নিয়ে নির্বাচন করে এমপি হয়েছেন তিনবার। জয়ের পরে নিজ দলের কিছু নেতাদের পকেট ভারি করেছেন সরকারি বরাদ্দ দিয়ে।কোটি কোটি টাকার প্রকল্পের কোনো হদিশ নাই। প্রকল্পের নামে যাচ্ছে-তাই করেছেন এমপি বাদশা।কিন্তু আওয়ামী লীগের কোনো উন্নয়নে কাজে আসেননি। সেই জায়গা থেকে এবার আওয়ামী লীগ আর নতুন করে ভুল করবে না আশা রাখি।’


এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, এমপি বাদশার সঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, রাজশাহী-১ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী -৪ আসনের এমপি এনামুল হক ও রাজশাহী-৫ আসনের এমপি মুনসুর রহমানের সঙ্গেও রয়েছে ব্যাপক দূরুত্ব। এমপি ফজলে হোসেন বাদশা এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার পরস্পরবিরোধী বক্তব্য প্রকাশ্যে দিয়েছেন। একইভাবে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী খুনি ফারুক-রশিদের দল ফ্রিডম পার্টির সদস্য এবং ছাত্রদলের নেতা ছিলেন বলে এমপি বাদশার মন্তব্যকে কেন্দ্র করে দুজনের মধ্যে ব্যাপক বিরোধ তৈরী হয়। এ নিয়ে বাদশাকে ২০১৯ সালে লিগ্যাল নোটিশও পাঠিয়েছিলেন ফারুক চৌধুরি। আবার রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গেও এমপি বাদশার রয়েছে ব্যাপক দূরুত্ব। সম্প্রতি শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানকে নিয়েও একটি বেফাস মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী সদর আসনের এমপি ফজলে হোসেন বাদশার এই যখন দা-কুড়াল সম্পর্ক বিরাজমান, তখনোই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। আর এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রাজশাহীর শীর্ষ নেতা শুরু করে তৃণমুলের নেতারাও চাইছেন না বাদশা এবারও নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করুক।


শেয়ার করুন