০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:১৮:৪৮ অপরাহ্ন
যে কোনো নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-১১-২০২৩
যে কোনো নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে- এমন মন্তব্য করে দলীয় প্রার্থীদের সতর্ক করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কেউ পাশ করে আসতে পারবেন না। প্রত্যেক প্রার্থীকেই একজন করে দলীয় ডামি প্রার্থী রাখতে হবে। দলীয় প্রতীকের প্রার্থীর পাশাপাশি দলের যে কোনো নেতা বা ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন। কারণ নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করতে হবে। রোববার গণভবনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে এসব তথ্য জানিয়েছে।


জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে নৌকার জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ তোষামোদ করে ক্ষমতায় থাকতে চায় না, কারণ জনগণই তার শক্তি। এ মাটি আমাদের। এখানে কারও খবরদারি বরদাশত করা হবে না। আমরা কারও ওপর নির্ভরশীল নই। 


দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গত ১৫ বছরে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় জনগণ শান্তিতে রয়েছে। দেশের জনগণ আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। দেশের প্রধানমন্ত্রী ও জাতির পিতার মেয়ে হিসাবে তিনি দলমত নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তার দল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় দেশের উন্নয়ন আজ দৃশ্যমান।


এইচএসসি’র ফল প্রকাশ : আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠকের আগে গণভবনে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, যারা মানুষ পুড়িয়ে মারবে, গাড়ি, রেল, যানবাহন পোড়াবে, অগ্নিসংযোগ করবে বা যারা হুকুমদাতা ও অর্থদাতা তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। কারণ আমরা যদি সেই ব্যবস্থা না নিই- এই জ্বালাওপোড়াও তারা চালাতেই থাকবে।


তিনি বলেন, অনেকেই জানতে চান কেন এদের (বিএনপি নেতাকর্মী) অ্যারেস্ট করা হলো। কিন্তু তারা এটা বলে না যে, এরা অগ্নিসন্ত্রাসী, এরা পুলিশ হত্যা করেছে, মানুষ হত্যা করেছে। আর এখন ডিজিটাল যুগ সাধারণ মানুষই এদের ভিডিও তুলে রাখে এবং সঙ্গে সঙ্গে সেই ছবিও পাওয়া যায় আর এই সন্ত্রাসীরা একেবারে চিহ্নিত। জনগণের স্বার্থে, জনগণের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। তাদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করি এদের অন্তত শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং তারা এগুলো বন্ধ করবে। আর বন্ধ না করলে যা ব্যবস্থা নেওয়ার সেটা আমাদের নিতেই হবে। এটা হলো বাস্তবতা। শুধু দুঃখ লাগে আমাদের ছেলেমেয়েগুলো তাদের ফাইনাল পরীক্ষাটা ভালোভাবে দিতে পারল না।


শেখ হাসিনা বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন কর্মসূচি সম্পর্কে বলেন, যতক্ষণ তারা সঠিকভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছে ততক্ষণ তাদের কোনো অসুবিধা ছিল না। এতে করে বিএনপি এবং তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডগুলো পরিচালনা করার পর এখন জনগণ থেকে তারা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী করে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। তারা দেশে-বিদেশে যেখানে কাজ করুক না কেন, মাতৃভাষার সঙ্গে তাদের একটি বা দুটি অন্য ভাষা শেখার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে সারা বিশ্বে আমাদের কর্মসংস্থানের আরও সুযোগ হবে। এখন প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। সেজন্য শিক্ষাটাও প্রযুক্তিনির্ভর এবং বহুমুখীকরণ করা দরকার। আজকাল ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে নিজ ইউনিয়নে বসে অনেকেই বিদেশে কাজ করে অর্থ উপার্জন করছে।


তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে তার সরকার ক্ষমতায় এসে দেশে শিক্ষার হার পেয়েছিল ৪৪ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকার এটি ৬৫ শতাংশে উন্নীত করে। বিএনপি-জামায়াত সরকার ২০০১-পরবর্তী সময়ে তার সরকারের রেখে যাওয়া শিক্ষার হার (৬৫ শতাংশ) আবার ৪৫ ভাগে নামিয়ে ফেলে। যা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার টানা তিন মেয়াদের শাসনামলে ৭৬.০৮ ভাগে উন্নীত করেছে।


শেখ হাসিনা বলেন, জানুয়ারি মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় তিনি আশা করেছিলেন নভেম্বরের মধ্যেই স্কুলের পরীক্ষাগুলো শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু বিএনপির অবরোধ ও জ্বালাওপোড়াও এবং সন্ত্রাসের কারণে সেটি ব্যাহত হয়েছে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া যেন অব্যাহত থাকে সেজন্য সংশ্লিষ্ট মহল যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।


প্রধানমন্ত্রী ২০১৩ ও ২০১৪ সালে নির্বাচন বানচালের নামে জ্বালাওপোড়াও এবং অগ্নিসন্ত্রাসের উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, কোনোদিন কোনো রাজনৈতিক দলের অধিকারে তার সরকার হস্তক্ষেপ করেনি। সে সময় তিন হাজারের মতো মানুষ তারা পুড়িয়েছে। সেখানে বহু মানুষ পুড়ে মারা গেছে। এখনো সেই আগুনে পোড়া শরীর নিয়ে অনেকে যন্ত্রণাকাতরভাবে দিন কাটাচ্ছে। বাস, ব্যক্তিগত যানবাহন, লঞ্চ, স্টিমার, ট্রেন এমনকি স্কুল, সরকারি দপ্তর কিছুই সে অগ্নিসন্ত্রাস থেকে বাদ যায়নি।


শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় যারা আসামি বা পলাতক ছিল এই বিএনপি এবং তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো আবারও যখন তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছে তারা বহাল-তবিয়তে ফিরে এসেছে। শান্তিপূর্ণ সভা যখন করেছে তাদের কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। কিন্তু তারা আবার সেই জ্বালাওপোড়াও শুরু করল। ২৮ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, ভাঙচুর, বিচারকদের কোয়ার্টারে হামল-ভাঙচুর, পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা, পুলিশ হাসপাতালে হামলা, অ্যাম্বুলেন্স, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করেছে। এমনকি রেললাইন কেটে রেখে দিয়েছে যেন রেলের বগি পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয় জনগণ সচেতন থাকায় এবং তারা সঙ্গে সঙ্গে যথাযথ স্থানে বিষয়গুলো অবহিত করায় বড় দুর্ঘটনা থেকে রেল রক্ষা পেয়েছে। তারপরও তারা (নাশকতাকারী) আমাদের কমিউটার ট্রেন পুড়িয়েছে, সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও নির্যাতন করেছে, মহিলাদের ওপর আক্রমণ করেছে। আর এখন তো প্রতিদিন অগ্নিসন্ত্রাস করেই যাচ্ছে। ফলে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোয় একটি ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই জনস্বার্থে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আমাদের নিতেই হবে।


বিএনপির অবরোধ-হরতাল এবং জ্বালাওপোড়াও সত্ত্বেও নির্ধারিত ৬০ দিনের মধ্যে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে পারায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডগুলোকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের পরীক্ষার ফলাফলে মেয়েরা এগিয়ে থাকায় তাদের অভিনন্দন জানিয়ে ছেলেরাও পিছিয়ে থাকবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। 


অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল উপস্থিত ছিলেন।


শেয়ার করুন