২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৩:৪২:৩২ অপরাহ্ন
শেখ হাসিনাকে যতটা সম্ভব নির্ঝঞ্ঝাটে ক্ষমতায় চায় ভারত
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-১২-২০২৩
শেখ হাসিনাকে যতটা সম্ভব নির্ঝঞ্ঝাটে ক্ষমতায় চায় ভারত

বাংলাদেশে রাজনৈতিক বাস্তবতা যাই হোক না কেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারেই আস্থা ভারতের। যতটা সম্ভব নির্ঝঞ্ঝাটভাবে শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় ফিরে আসুক—এটি আশা করছে ভারত।


গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ওয়াশিংটনে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব অরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের (সোয়াস) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক অভিনাশ পালিওয়াল এ কথা বলেন।


যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অব পিস (ইউএসআইপি) ‘সংকটাপন্ন প্রতিবেশীদের প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রনীতি : ড. অভিনাশ পালিওয়ালের সঙ্গে আলোচনা’ শীর্ষক ওই অনুষ্ঠান আয়োজন করে।


 


অভিনাশ পালিওয়াল দক্ষিণ এশিয়ার পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। তিনি ‘মাই এনিমিস এনিমি’ এবং ‘ইন্ডিয়াস নিয়ার ইস্ট : আ নিউ হিস্ট্রি’ নামে দুটি বই লিখেছেন।


 


বাংলাদেশে ভারত ও চীনের স্বার্থের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে অভিনাশ পালিওয়াল বলেন, ভারত ও চীন—দুই দেশই শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। আবার একই সঙ্গে ভারত ও চীন দুই পক্ষই বাংলাদেশে একে অন্যের প্রভাব কমাতে চায়।


 


অভিনাশ পালিওয়াল বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনার সময় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও সামরিক বাহিনী—এই তিনটি শক্তিশালী গোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে অভিনাশ পালিওয়াল বলেন, ভারতের কাছে আওয়ামী লীগের বিকল্প বিএনপি নয়।


শেখ হাসিনার জন্য ভারত কতটা করবে জানতে চাইলে অভিনাশ পালিওয়াল বলেন, নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের উদ্বেগ থাকবে। হয়তো নিষেধাজ্ঞার মতো শাস্তিমূলক সিদ্ধান্তও আসতে পারে।


 


কিন্তু এর পরও ভারত চায়, যতটা সম্ভব নির্ঝঞ্ঝাটভাবে শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় ফিরে আসুক।


 


অভিনাশ বলেন, শারীরিকভাবে শেখ হাসিনার ক্ষতি হয় এমন কিছু ভারত চাইবে না। এ ধরনের কিছু দেখলে ভারত তাঁকে রক্ষায় সম্ভাব্য সব কিছু করবে।


আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজক ইউএসআইপি ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত একটি স্বতন্ত্র ফেডারেল প্রতিষ্ঠান। এর লক্ষ্য সংঘাত প্রতিরোধ ও প্রশমনে যুক্তরাষ্ট্রের অহিংস উপায়ে কাজ করা।


 


এ প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতি, মধ্যস্থতা ও অন্যান্য শান্তি বিনির্মাণ প্রচেষ্টায় গবেষণা, বিশ্লেষণ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করে।


 


আলোচনা অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন ইউএসআইপির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মার্কি ড্যানিয়েল। তিনি গত অক্টোবরে তাঁর বাংলাদেশ সফরের কথা তুলে ধরে এ দেশে নির্বাচনপূর্ব পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের অবস্থান জানতে চান।


জবাবে অভিনাশ পালিওয়াল বলেন, ভারত বাংলাদেশকে উদ্বেগ নয়, বরং বাস্তবতার দৃষ্টিতে দেখে। ভারত চায়, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় আসুক।


অভিনাশ পালিওয়াল এ ক্ষেত্রে তিনটি কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলো সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা, ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার হতে না দেওয়া এবং অবকাঠামোগত সংযুক্তি।


অভিনাশ পালিওয়াল বলেন, ভারত ১৯৪৭ সালের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও এ বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও ভারতের কাছে এ তিনটি বিষয় অগ্রাধিকার। আর এসব ক্ষেত্রে শেখ হাসিনাই ভারতের সবচেয়ে পছন্দের।


সোয়াসের ওই শিক্ষক বলেন, ভারত মনে করে, শেখ হাসিনার সরকারের সময়ই বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা তুলনামূলক সুরক্ষিত থাকে। শেখ হাসিনার সরকার ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার হতে দেয় না। এ ছাড়া ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সড়কসহ অন্যান্য যোগাযোগের ক্ষেত্রে যে সংযোগ স্থাপন করতে চায় সেখানে শেখ হাসিনার সরকারেরও জোরালো আগ্রহ আছে।


অভিনাশ পালিওয়াল বলেন, ভারত মনে করে, বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে ভারতের স্বার্থবিরোধী কাজ করবে। এতে ভারতের নিরাপত্তার স্বার্থ ব্যাহত হতে পারে। আর এটি ভারতের আঞ্চলিক ভোটের রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।


শেখ হাসিনার ব্যাপারে ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি ও বিরোধী কংগ্রেসের মনোভাবের কোনো পার্থক্য আছে কি না—এ প্রশ্ন করেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত একজন বিশ্লেষক। জবাবে অভিনাশ পালিওয়াল বলেন, ঐতিহাসিকভাবে কোনো পার্থক্য নেই। কারণ ভারতে বিজেপি ও কংগ্রেস—দুই দলই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে বাস্তবতার আলোকে দেখে।


বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের অবস্থানের পার্থক্য বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে অভিনাশ পালিওয়াল বলেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র। এর পরও দক্ষিণ এশিয়া প্রতিবেশীদের ক্ষেত্রে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানগত পার্থক্য আছে। ভারত তার পররাষ্ট্রনীতিও বেছে বেছে প্রয়োগ করে।


অপর এক প্রশ্নের জবাবে অভিনাশ পালিওয়াল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ বিষয়ে সরব। কিন্তু ভারত নীরব। ভারতের ওই নীরবতা বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনদের প্রতিপক্ষ অর্থাৎ বিরোধী গোষ্ঠী, বিশেষ করে বিএনপির জন্য বড় আঘাত। কিন্তু এ নিয়ে ভারত খুব একটা চিন্তিত নয়।


অভিনাশ পালিওয়াল মিয়ানমার ও পাকিস্তান পরিস্থিতিও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মিয়ানমার পরিস্থিতি খুবই জটিল আকার ধারণ করেছে। এর প্রভাব ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে পড়ছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অনাস্থার।


শেয়ার করুন