২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৫:২৮:৪২ অপরাহ্ন
ফেসবুকে প্রেম, পোশাকশ্রমিককে নরসিংদী থেকে ঢাকায় এনে খুন: র‍্যাব
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-১২-২০২৩
ফেসবুকে প্রেম, পোশাকশ্রমিককে নরসিংদী থেকে ঢাকায় এনে খুন: র‍্যাব

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তৈরি হয় প্রেমের সম্পর্ক। প্রেমিকের ডাকে নরসিংদী থেকে বেশ কয়েকবার ঢাকায় আসেন পোশাকশ্রমিক রুবিনা খাতুন। বিয়ের কথা বললে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন বিবাহিত প্রেমিক এনামুল হক সানা। একপর্যায়ে বিয়ের জন্য চাপ দিলে প্রেমিকা রুবিনাকে আশুলিয়ার বাসায় ডেকে নিয়ে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ফেলে দেন। সেই মরদেহ গত শনিবার উদ্ধার করে র‍্যাব-৪। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত প্রেমিক এনামুল ও তাঁর বন্ধু সোহাগকে গতকাল সোমবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে। 


আজ মঙ্গলবার রাজধানীর র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি জানান, গত শনিবার বিকেলে আশুলিয়ার বংশী নদীতে এক নারীর মরদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয় লোকজন নৌ-পুলিশ ও র‍্যাবকে বিষয়টি জানান। পরবর্তী সময়ে র‍্যাব-৪-এর গোয়েন্দা দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সেই নারীর নাম ও পরিচয় শনাক্ত করে। 


ওই নারী দিনাজপুরের পার্বতীপুর থানার রঘুনাথপুর দোলাপাড়া গ্রামের আব্দুল ওয়ারেছের মেয়ে রুবিনা খাতুন। পরে পরিবারের সদস্যদের সংবাদ দিলে তাঁরা রাজধানীতে আসেন। এ ঘটনায় নারীর ভাই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। 


এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র‍্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রুবিনার ব্যবহৃত মোবাইলের সূত্র ধরে হত্যাকারীদের অবস্থান চিহ্নিত করে। পরে আশুলিয়ার টেংগুরী এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা এনামুল সানা (২৭) ও তাঁর সহযোগী সোহাগ রানাকে (২৮) গ্রেপ্তার করে। 


গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মঈন জানান, রুবিনা খাতুনের সঙ্গে ছয় মাস আগে এনামুলের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয় হয় এবং একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। এনামুল পরিবারসহ আশুলিয়ায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন এবং আগে গার্মেন্টসে সুপারভাইজারের চাকরি করতেন। বর্তমানে তিনি ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালান। এনামুল প্রায়ই ভিকটিমকে বেশি বেতনে অন্য চাকরি দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আশুলিয়ায় আসতে বলতেন। 


চলতি মাসের ৩ তারিখ এনামুলের স্ত্রী ও সন্তান গ্রামের বাড়ি খুলনার পাইকগাছায় চলে যায়। তখন এনামুল সুযোগ বুঝে রুবিনা খাতুনকে আশুলিয়ার বাসায় নিয়ে আসেন এবং বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ৮ তারিখ পর্যন্ত বাসায় রাখেন। এ সময় রুবিনা এনামুলকে বিয়ের কথা বললে এনামুল বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। তখন বিয়েসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে মনোমালিন্য ও ঝগড়া হয়। এরপর ৮ তারিখ বেলা ৩টায় রুবিনা এনামুলকে আবার বিয়ের কথা বললে এনামুল বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান এবং প্রচণ্ড রেগে যান। এরপর দুজনের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে এনামুল ক্ষিপ্ত হয়ে রুবিনার মুখে বালিশচাপা দিয়ে তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। 


রুবিনাকে হত্যার পর এনামুল কীভাবে ঘটনা ধামাচাপা দেবে সে বিষয়ে উপায়ান্তর না পয়ে এনামুল তার দূর সম্পর্কের আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু সোহাগকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানান এবং বাসায় আসতে বলেন। এরপর দুজনে মিলে রুবিনার মরদেহ গুম করতে নদীতে ফেলে দেন। 


নারীকেন্দ্রিক এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী এনামুলকে আশুলিয়ার আগের বাসা থেকে তাড়িয়ে দেন। এ ছাড়া তিনি একাধিক নারীঘটিত বিষয়ে লিপ্ত ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে খুলনার পাইকগাছা থানায় শিশু অপহরণ, চুরি ও মারামারি সংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে। তাঁর বন্ধু সোহাগ দুই বছর ধরে ঢাকায় থাকেন। তিনি পেশায় একজন বাসের হেলপার। এনামুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ায় তাঁর যাবতীয় অপকর্মের অন্যতম সহযোগী হিসেবে পাশে থাকতেন তিনি। সোহাগ আগে ঢাকার ধামরাই থানায় মাদক মামলায় এক মাস কারাভোগ করেছেন। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।


শেয়ার করুন