২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ১১:১৩:১৬ পূর্বাহ্ন
নিয়োগ অনুমোদনের আগেই অনিয়মে সিইও
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৮-২০২৩
নিয়োগ অনুমোদনের আগেই অনিয়মে সিইও

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এখনো চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়নি। তার আগেই দায়িত্ব পালন করছেন ইসলামী ইনস্যুরেন্স বাংলাদেশের প্রস্তাবিত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আব্দুল খালেক মিয়া। শুধু তা-ই নয়, পদে বসেই জড়িয়ে গেছেন নানা অনিয়মে। মানছেন না কোনো বিধিমালা। নিয়ম ভেঙে কর্মীদের কর্মঘণ্টা বাড়িয়েছেন। বিমা কমিশন প্রদানেও মানছেন না নিয়মনীতি। আর্থিক অনিয়ম, অনৈতিক কাজে উৎসাহিতকরণ এবং অসদাচরণের দায়ে খোদ ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলেছেন।


আব্দুল খালেক মিয়ার দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের ফিরিস্তি তুলে ধরে গত ১৯ জুলাই আইডিআরএর চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কোম্পানির কর্মীরা। অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে আইডিআরএর নির্বাহী পরিচালকের (আইন) দপ্তর। 


অভিযোগপত্রে বলা হয়, আব্দুল খালেক মিয়া ইসলামী ইনস্যুরেন্সে যোগদানের আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ থেকে অনুমোদন নেননি। তাঁর পূর্ববর্তী কর্মস্থল সোনার বাংলা ইনস্যুরেন্সে দুর্নীতির দায়ে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও তিনি তা গোপন রাখেন। ওই কোম্পানিতে তিনি ১৬ কোটি টাকার বাকি ব্যবসা করেছেন। ইসলামী ইনস্যুরেন্সে এসেও ইতিমধ্যে তিনি প্রায় দুই কোটি টাকার বাকি ব্যবসা করেছেন। বিমার ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী কমিশন প্রদান করা হলেও বর্তমানে তিনি কমিশন প্রদানে নিয়ম মানছেন না।


অভিযোগে আরও বলা হয়, তিনি কথায় কথায় কর্মীদের ছাঁটাই করার হুমকি দিচ্ছেন, যা শ্রম বিমা ও সরকারি আইনের পরিপন্থী।  

কর্মঘণ্টা বাড়ানোর অভিযোগ তুলে বলা হয়, সরকারি সার্কুলারে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিসের সময় নির্ধারিত থাকলেও তিনি কর্মঘণ্টা ১ ঘণ্টা বাড়িয়ে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছেন।    


কোম্পানির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইসলামী ইনস্যুরেন্সে এখন যা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই স্বাভাবিক কিছু নয়। একজন সিইও নিয়োগের অনুমোদন পাওয়ার আগেই যে আচরণ করছেন, নিয়োগ পেলে তা কয়েক গুণ বাড়বে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।


অভিযোগের বিষয়ে আব্দুল খালেক মিয়াকে ফোন করা হলে তিনি তা কেটে দেন। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালেও কোনো জবাব দেননি। পরে ইসলামী ইনস্যুরেন্স বাংলাদেশের অ্যাডমিন বিভাগ থেকে এহসান নামের একজন আজকের পত্রিকার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। 

আইডিআরএর অনুমোদন ছাড়াই কীভাবে আব্দুল খালেক মিয়া দায়িত্ব পালন করছেন, জানতে চাইলে এহসান বলেন, ‘আমার চেয়ারম্যান স্যার তো ফরোয়ার্ডিংসহ কাগজ পাঠিয়ে দিয়েছেন অনুমোদনের জন্য, চার মাসেও তা আসেনি। হ্যাঁ, হলেও জানাতে হবে, না হলেও জানাতে হবে। পেন্ডিং থাকলে তো আর আমরা বুঝব না।’


অভিযোগের বিষয়ে এহসান বলেন, ‘অভিযোগগুলো মিথ্যা-ভিত্তিহীন। আমরা এর বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

এদিকে আইডিআরএ সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তাবিত সিইও আব্দুল খালেক মিয়ার নিয়োগ অনুমোদনের জন্য তাঁর মাস্টার্সের সনদ যাচাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে আইডিআরএ। এ জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে গত ২৪ জুলাই একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। 

আইডিআরএর উপপরিচালক মো. সোলায়মান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ইসলামী ইনস্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেডে মো. আব্দুল খালেক মিয়ার নাম আইডিআরএর কাছে প্রস্তাব করেছে। বিদ্যমান বিমা আইন ও প্রবিধানমালা মোতাবেক আবেদনপত্রের সঙ্গে দাখিলকৃত তথ্যাদি যাচাই-বাছাইয়ের অংশ হিসেবে প্রস্তাবিত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার শিক্ষাগত যোগ্যতার মাস্টার্সের সার্টিফিকেট/সনদ যাচাই করা প্রয়োজন।


এ বিষয়ে আইডিআরএ পরিচালক ও মুখপাত্র (উপসচিব) জাহাঙ্গীর আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, আইডিআরএর অনুমোদন ছাড়া সিইও হিসেবে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ করতে পারবে না। অনুমতি ছাড়া দায়িত্ব পালন পুরোপুরি অনিয়ম। 


তাহলে আব্দুল খালেক মিয়া কীভাবে দায়িত্ব পালন করছেন, জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কোম্পানির সঙ্গে কথা বলুন। আমাদের অনুমতি তো তারা পায়নি। কীভাবে কাজে লাগিয়েছে, সেটা জানি না। আমাদের কাছে লিখিতভাবে বলেনি। আইডিআরএ এটা যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেবে।’


আব্দুল খালেক মিয়ার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘একটা অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তবে তাঁর নিয়োগ অনুমোদন না হওয়ায় আপাতত পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। তাঁর সনদ যাচাইয়ের জন্য আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি দিয়েছি। এখনো উত্তর আসেনি। আইডিআরএ সিইও পদে তাঁকে যোগ্য মনে করলে নিয়োগ চূড়ান্ত হওয়ার পর এই বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’


শেয়ার করুন