২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৪:৫৪:২০ অপরাহ্ন
৫২ বছরেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-১২-২০২৩
৫২ বছরেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা

‘খতমের জন্য যাঁদের চিহ্নিত করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছাড়াও আছেন ছাত্রনেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। এর দ্বিতীয় ক্যাটাগরির মধ্যে আমরা খবর পাচ্ছি যে দর্শন বিভাগের প্রধান ফজলুর রহমান ও একজন হিন্দু এবং ইতিহাস বিভাগের প্রধান এম আবেদীনকে হত্যা করা হয়েছে।’—‘সিলেকটিভ জেনোসাইড’ শীর্ষক টেলিগ্রাম বার্তায় এমন বিবরণ দিয়েছিলেন ঢাকায় তখনকার মার্কিন কনসাল জেনারেল আর্চার কে ব্লাড। ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র দপ্তরে পাঠানো হয়েছিল বার্তাটি। সে বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর ইসলামাবাদ থেকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড ওয়াশিংটনে আরেকটি টেলিগ্রাম বার্তা পাঠিয়েছিলেন, যার শিরোনামই ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তানি বুদ্ধিজীবীদের ধরপাকড়’।


একাত্তরের ডিসেম্বরে নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে পাকিস্তানি সেনারা পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছিল। সেই হত্যাযজ্ঞে কাজে লাগানো হয়েছিল আলবদর, আলশামস বাহিনীকে। নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্যমতে, ডিসেম্বরে যুদ্ধের শেষ তিন রাতে পাকিস্তানি সেনা আর কালো সোয়েটার ও খাকি প্যান্ট পরা আলবদর সদস্যরা শুধু রাজধানীতেই প্রায় ৩০০ বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে যায়, যাঁদের মধ্যে ১২৫ জন চিকিৎসক, অধ্যাপক, লেখক ও শিক্ষকের লাশ পাওয়া গেছে শহরতলির এক বধ্যভূমিতে। এই চিত্র শুধু রায়েরবাজার বধ্যভূমির। এরপর একে একে সন্ধান মেলে কাটাসুর ও শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমির।


অথচ সরকার একটি কমিটির মাধ্যমে ৩ বছরে ৩৩৪ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম গেজেটভুক্ত করতে পেরেছে। আরও ৫৭ জনের নামের খসড়া নিয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। পূর্ণাঙ্গ তালিকা ছাড়াই স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’


এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের কিছু নামের তালিকা আছে। দুই দফায় ৩৩৪ জনের নামে গেজেট হয়েছে। আরও কিছু নাম নিয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। যাচাই-বাছাই কমিটির সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।’


মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা তৈরি করতে ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো একটি কমিটি গঠন করে। তখনকার সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সদস্য করা হয় অতিরিক্ত সচিব শহীদুল হক ভূঁঞা, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, ড. চৌধুরী শহীদ কাদের, নিপসমের পরিচালক ড. বায়েজিদ খুরশীদ রিয়াজ ও গবেষক গাজী সালাউদ্দিনকে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সদস্য হিসেবে আছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু ও গবেষক লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক। মন্ত্রণালয়ের তখনকার উপসচিব রথীন্দ্র নাথ দত্তকে কমিটির সদস্যসচিব করা হয়।


সূত্রমতে, শহীদ বুদ্ধিজীবী তালিকা প্রণয়নসংক্রান্ত যাচাই-বাছাই কমিটির প্রথম সভা হয়েছিল ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর। ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় বৈঠকে শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞা চূড়ান্ত করা হয়। পরে কমিটির সুপারিশে প্রথমে ১৯১ জন এবং দ্বিতীয় দফায় ১৪৩ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নামে গেজেট প্রকাশ করা হয়। আরও ৫৭ জনের নামের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এসব নামের সঙ্গে আরও কিছু নাম অন্তর্ভুক্ত করে কমিটির আগামী বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে। এর অনুমোদন পাওয়া গেলে তৃতীয় দফায় শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশ করা হবে। তবে দীর্ঘদিন কমিটির কোনো বৈঠক হয়নি বলে অভিযোগ আছে। ১১ ও ১৩ ডিসেম্বর বৈঠক হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।


কমিটির সদস্যসচিব ও মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল বাকের মো. তৌহিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা দুই দফায় ৩৩৪ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নামে গেজেট প্রকাশ করেছি। আরও ৫৭ জনের নাম পাওয়া গেছে। ২৬ ডিসেম্বর কমিটির বৈঠক আছে। সেখানে আরও কিছু নাম অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। এরপরই তাঁদের বিষয়ে চূড়ান্ত গেজেট জারি করা হতে পারে।’


শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শহীদ বুদ্ধিজীবী তালিকা প্রণয়নসংক্রান্ত যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি, আমলাদের দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী বা বীর মুক্তিযোদ্ধার সঠিক তালিকা প্রণয়ন করা সম্ভব নয়। বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রণয়ন কমিটির বৈঠক হয়নি দীর্ঘদিন। দেখা যাক কী হয়।’


শেয়ার করুন