২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৩:৩৩:৩১ পূর্বাহ্ন
বড় নাশকতা ঠেকাতে নতুন ছকে নিরাপত্তা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-১২-২০২৩
বড় নাশকতা ঠেকাতে নতুন ছকে নিরাপত্তা

নির্বাচন সামনে রেখে আছে বড় নাশকতার শঙ্কা। এর সঙ্গে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সংঘাত। বিএনপির সঙ্গে সমমনা দলগুলোর দফায় দফায় হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে একের পর এক জ্বলছে নাশকতার আগুন। নিভছে তাজা প্রাণ। নতুন করে বিএনপির অসহযোগ আন্দোলনের ডাকে পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, তফশিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনি সংঘাত-সহিংসতা জনমনে ভীতি ছড়াচ্ছে। আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণার শুরু হতেই মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় নৌকা-স্বতন্ত্র সংঘাতে অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। সামগ্রিক বিবেচনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তার নতুন ছক তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কৌশলের পাশাপাশি প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে সব ধরনের সংঘাত-সহিংসতা দমনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নাশকতা ঠেকাতে কেপিআইসহ সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পাহারা বসানো হচ্ছে। পুলিশ, র‌্যাব, আনসারের পাশাপাশি নিরাপত্তায় কাজ করছেন বিজিবি সদস্যরা। ২৯ ডিসেম্বর নামবে সেনাবাহিনী। একাধিক সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।


নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুত আছেন। যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার যোগ্য করেই আমরা পুলিশ বাহিনীকে তৈরি করেছি। আইনশৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটাতে চাইলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’


জানা গেছে, ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ সামাল দিতে প্রথম ধাপে বাড়তি নিরাপত্তা নিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ওই দিন রাজধানীর প্রবেশপথ থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে জলকামান, সাঁজোয়া যান নিয়ে অবস্থান নেন পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। সেদিন পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীর ১৫ হাজার সদস্য মোতায়েন ছিল। পুলিশের অ্যাকশনে সমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকেই বিএনপি ও সমমনা দলগুলো হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামলে ট্রেন-বাসে শুরু হয় নাশকতার আগুন। এতে প্রাণ যাচ্ছে নিরীহ মানুষের। এ অবস্থার মধ্যেই নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফশিলের দিন থেকেই দ্বিতীয় দফায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এরপরও নাশকতার আগুন থামানো যায়নি। সবশেষ মঙ্গলবার ভোরের আলো ফোটার আগেই নেত্রকোনা থেকে ঢাকাগামী ট্রেন মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেওয়া হয়। বিমানবন্দর স্টেশন পার হওয়ার পরই তিনটি বগিতে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। অনেক ঘুমন্ত যাত্রী কিছু বুঝে ওঠার আগেই বেঘোরে প্রাণ হারায় নারী-শিশুসহ চারজন। এ অবস্থায় নিরাপত্তার নতুন ছক তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।


জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড. খ. মহিদ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ‘প্রয়োজনের নিরিখে আমরা নতুন নতুন নিরাপত্তার ছক তৈরি করি। এটা প্রতিদিনই পরিবর্তিত হয়।’ নাশকতার আগুন, বিএনপির অসহযোগ কর্মসূচির ডাক এবং নির্বাচনি সহিংসতা একসঙ্গে মোকাবিলা কিভাবে করবেন-জবাবে তিনি বলেন, ‘যে কোনো পরিস্থিতি সামাল দিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও নগরবাসীর জানমাল নিরাপদে রাখতে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। যখন যেখানে যত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন দরকার তা করা হবে। এটা নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যায় সীমাবদ্ধ থাকবে না।’


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সারা দেশে পুলিশের ৩০ হাজার সদস্য নিরাপত্তার কাজে মোতায়েন আছেন। ১৫ হাজার সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত রাজধানী ঢাকায়। মহানগরের ৫০ থানা এলাকায় তারা বিশেষ নিরাপত্তায় কাজ করছেন। ঢাকায় ১৩৫টি টহল টিমসহ সারা দেশে ৪৩৫টি টহল টিমে সাড়ে নয় হাজার র‌্যাব সদস্য সার্বক্ষণিক টহলে থেকে নিরাপত্তা দিচ্ছেন। প্রতিদিন গড়ে ১৮১ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে সারা দেশে। এছাড়া রেল ও সড়কপথের যোগাযোগ নির্বিঘ্ন রাখতে সারা দেশে ১৩ হাজার আসনার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ১৮ ডিসেম্বর সকাল ৬টা থেকে রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে মোতায়েন থেকে দায়িত্ব পালন করছেন তারা।


জানতে চাইলে আনসার ও ভিডিপির উপপরিচালক জাহিদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সারা দেশে ১ হাজার ৮৫১টি পয়েন্টে নিরাপত্তা রক্ষার কাজ করছেন আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা। সড়ক ও রেলপথে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন তারা। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তারা এই দায়িত্ব পালন করে যাবেন।


বুধবার সকালে নির্বাচন কমিশন ভবন এলাকা সরেজমিন দেখা যায়, কমিশন ভবনের আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার প্রবেশপথগুলোর প্রায় সবকটি কাঁটাতারের ব্যারিকেড দিয়ে একেবারে সিল করে দেওয়া হয়েছে। ভবনের সামনে শামিয়ানা টাঙিয়ে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। ভবনের অদূরেই রাখা আছে পুলিশের সাঁজোয়া যান ও জলকামান। মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে ফার্মগেট মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে বিজিবি সদস্যদের অবস্থান চোখে পড়েছে। বুধবার বিজয় সরণি এলাকায় সামরিক জাদুঘরের সামনে দেখা গেছে র‌্যাবের অন্তত চারটি টহল ভ্যান। দেশের প্রশাসনিক হেডকোর্য়ার্টার সচিবালয়ের নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে। এছাড়াও শাহবাগের রেডিও অফিসের সামনেও পুলিশের বাড়তি সদস্য চোখে পড়েছে।


পুলিশের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেছেন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশ বাহিনীতে অস্বস্তি আছে। বড় নাশকতার শঙ্কা তারা উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তবে বিরোধী আন্দোলন সামাল দেওয়ার ছকও তৈরি আছে। গোয়েন্দাদের মাধ্যমে আন্দোলন পরিকল্পনার আগাম তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে তারা খুব বেশি চিন্তিত নন। কিন্তু নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণার শুরু থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর অনুসারীদের মুখোমুখি সংঘর্ষ-সংঘাতের ঘটনা তাদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। শেষ পর্যন্ত এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কতটা কঠোরতা দেখাতে হবে তা নিয়ে বুধবার পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলে আলোচনা হয়েছে। যে কোনো মূল্যে পরিস্থিতি অনুকূলে রাখতে মাঠপর্যায়ের পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


শেয়ার করুন