২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৯:০১:৩৩ অপরাহ্ন
কর্মী সংকটে বাদশা প্রচারে কোনোভাবেই নেতাকর্মীদের নৌকামুখী করতে পারছেন না
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-১২-২০২৩
কর্মী সংকটে বাদশা প্রচারে কোনোভাবেই নেতাকর্মীদের  নৌকামুখী করতে পারছেন না

রাজশাহী-২ (মহানগর) আসনে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের কোনোভাবেই নৌকামুখী করতে পারছেন না মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় নির্দেশের পর দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা অধীনস্থ কর্মী-সমর্থকদের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার (নৌকা) প্রচারে নামতে বলেছেন। কিন্তু বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা জোটবদ্ধভাবে মাঠে নেমেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশার (কাঁচি) পক্ষে। বর্তমানে অধ্যক্ষ বাদশার দখলে রাজশাহীর নির্বাচনি মাঠ। অন্যদিকে নৌকা প্রতীক পেয়েও বর্তমান সংসদ-সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা নেতাকর্মী সংকটে প্রচার পর্যন্ত চালাতে পারছেন না।


রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে ফজলে হোসেন বাদশার শীতল সম্পর্ক চলছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, বাদশা একটানা ১৫ বছর রাজশাহী-২ আসনের সংসদ-সদস্য। গত তিনটি নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়ে সংসদে গেছেন। কিন্তু শেষ পাঁচ বছর বাদশা সচেতনভাবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছেন। সভা-সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কঠোর বক্তব্য দিয়েছেন। কখনোবা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। বাদশার এসব বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও হয়ে প্রচার হয়েছে। এতে রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নেতাকর্মীদের মাঝে বেড়েছে ক্ষোভ।


সূত্রমতে, এবারও নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর প্রথমদিকে বাদশা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেননি। এমনকি রাসিক মেয়র লিটনের সঙ্গে সাক্ষাৎ পর্যন্ত করেননি। বাদশা কেবল মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়ে লিটনের কাছে নির্বাচনে সমর্থন চেয়েছেন। ২১ ডিসেম্বর রাজশাহী মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু ও সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামাণিক দেবু মেয়র লিটনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নৌকাকে জেতাতে ভূমিকা রাখার অনুরোধ করেন। এ সময় মেয়র লিটন নৌকাকে জেতাতে সর্বাত্মক চেষ্টার আশ্বাস দেন। কিন্তু এরপরও রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নৌকামুখী হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে বাদশা প্রশ্নে আওয়ামী লীগের মাঠের নেতাকর্মীরা দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশকেও আমলে নিচ্ছে না।


জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নৌকাবিমুখ হওয়ার বিষয়টি ফজলে হোসেন বাদশা ইতোমধ্যে ১৪ দলের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে জানিয়েছেন। পরে আমু রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের বাদশার জন্য মাঠে নামতে নির্দেশ দেন। কিন্তু তাতেও কোনো ফল হয়নি। নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ বাদশার পক্ষেই প্রচার চালাচ্ছে। শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ মিলনায়তনে কাঁচি প্রতীকের নির্বাচনি সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, ফজলে হোসেন বাদশার নৌকা আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক। আমরা দলীয় নির্দেশনায় নৌকার পক্ষে প্রচারে নামতে নেতাকর্মীদের বলেছি। শুরুতে নেতাকর্মীরা কিছুটা অনমনীয় থাকলেও বর্তমানে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড-মহল্লায় নৌকার পক্ষে কাজ করছে আমাদের দলের নেতাকর্মীরা। অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষেও কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু বলেছেন, নিজেদের জনপ্রিয়তায় প্রার্থীদের জিতে আসতে হবে। আমরা চাই মুক্ত পরিবেশে নির্বাচনটা হোক।


এ প্রসঙ্গে রাজশাহী মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতারা বর্তমানে মুখে নৌকার পক্ষে কথা বলছেন বটে; কিন্তু দলটির মাঠের নেতাকর্মীরা দলবদ্ধভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। ফলে আমরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি।


জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও নৌকার প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা যুগান্তরকে বলেন, ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা রাজশাহী মহানগর ১৪ দলের নেতাদের জরুরি সভা ডাকতে বলেছেন। সভা হলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নৌকার পক্ষে মাঠে নির্বাচনি প্রচারে সক্রিয় হবে বলে আশা করছি।


শেয়ার করুন