২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০১:০৮:৩৬ পূর্বাহ্ন
সম্ভাবনার নবদিগন্তে বাংলাদেশ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০১-২০২৪
সম্ভাবনার নবদিগন্তে বাংলাদেশ

একটি ‘উষ্ণতম’ বছর পেরিয়ে নতুন ভোরের দ্বারপ্রান্তে বিশ্ব। বিদায়ি বছরে আবহাওয়ার সেই উত্তাপ জীবন ও প্রকৃতিকে যতটা নাজেহাল করেছে; তারচেয়ে অনেক বেশি বিপর্যস্ত করেছে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক উত্তাপ। বিশেষত, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞায় থমকে দাঁড়ানো বিশ্ব অর্থনীতি, বছরের একেবারে শেষপ্রান্তে এসে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি নৃসংশতা, পরাশক্তি দেশগুলোর বেপরোয়া রেষারেষি নাকানিচুবানি খাইয়েছে গোটা বিশ্বকে। এসবের সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশেও দৃশ্যমান। ভূ-রাজনীতির এই চাপানউতর সামাল দিয়ে ২০২৩ সালে ঠিকই উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় ছুটছিল দেশ। বিপুল সুনাম বয়ে এনেছে পদ্মা সেতুতে রেল, ঢাকায় মেট্রোরেল ও এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ে, চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেলসহ অনেক মেগা প্রকল্প। বিশ্ব অর্থনীতির সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিশ্বের বিস্ময়। তবে নির্বাচনের বছর হওয়ায় বছর শেষের রাজনৈতিক উত্তাপ, আগুনসন্ত্রাস জাতিকে সেই ভয়ংকর ২০১৪ সালের নির্বাচনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। এসবের মধ্যেই ছুটছে নির্বাচনের ট্রেন। আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে একটি নতুন সরকার আসবে। এ পর্যন্ত যা লক্ষণ- বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগই আবার সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে নির্বাচনের ট্রেন থেকে আবারো উন্নয়নের মহাসড়কে আগামীর পথে ছুটবে বাংলাদেশ- এমনই প্রত্যাশা দেশবাসীর।

মিছিল-সমাবেশ-আগুনসন্ত্রাসের রাজনীতি : রাজনীতির সফলতা-ব্যর্থতার খেরো খাতায় যে লাইনটি সর্বাগ্রে উঠে এসেছে তা হচ্ছে নির্বাচনের রাজনীতি। তবে বেশ শক্ত হাতেই নিয়ন্ত্রণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। আর নির্বাচন বর্জনের ভুল রাজনীতি ও অতিমাত্রায় জামায়াত নির্ভরতায় ব্যর্থতার খাদের কিনারে বিএনপি। রাজনৈতিক দলগুলোর মিছিল, মিটিং, সমাবেশ ও বিক্ষোভে উত্তাল ছিল পুরো বছর। এসব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি ছিল অবর্ণনীয়। সবশেষ হরতাল-অবরোধে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় দলটি। এরপর থেমে থেমে চলছে লাগাতার হরতাল অবরোধের কর্মসূচি। ওইদিন পুলিশ সদস্যসহ দুইজন প্রাণ হারান। এদিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই অবরোধসহ অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয় বিএনপি। ‘সরকার পতনের’ এক দফা দাবিতে চলে নানা কর্মসূচি। টানা হরতাল-অবরোধ, অস্থিরতার কারণে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। অন্যদিকে সেই ২০১৩-১৪ সালের মতো শুরু হয়েছে আগুনসন্ত্রাস। যাত্রীবাহী বাস, ট্রেনেও শুরু হয়েছে আগুনসন্ত্রাস। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে ট্রেনের একটি বগি থেকে মা-ছেলেসহ চারটি মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

সরব আলোচনায় পিটার হাস : বছরজুড়ে আলোচনায় মার্কিন ভিসানীতি ও পিটার হাস। গত মে মাসে বাংলাদেশের জন্য আলাদা ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয় দেশজুড়ে। রাজনৈতিক মহলে ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। আলোচনা ছিল কূটনীতিকপাড়াতেও। কৌতূহল তৈরি হয় সাধারণ মানুষের মাঝে। আবার সংসদ নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে- বছরের শেষদিকে এসে এমন আশঙ্কার কথাও শুনিয়েছে দেশটি। ভিসানীতির কারণে স্বাভাবিকভাবেই বছরজুড়ে আলোচনায় ছিলেন মার্কিন


রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই বার্তা নিয়েই পিটার হাস সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছেন। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তার দৌড়ঝাঁপ ছিল উল্লেখযোগ্য।

যোগাযোগ খাতে সরব বিপ্লব : যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক উন্নয়নের বছর ছিল ২০২৩ সাল। ইতিহাসে নতুন পালক যুক্ত করেছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ। গত ২০২২ সালে চালু হওয়া মেট্রোরেলের দ্বিতীয় ধাপ (আগারগাঁও থেকে মতিঝিল) চালু হয় ৪ নভেম্বর। ফলে নতুন যুগে প্রবেশ করে রাজধানীবাসী। বহুল প্রতীক্ষিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন হয় ১১ নভেম্বর। ওইদিনই একই প্রকল্পের আওতায় নির্মিত দেশের একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশনেরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। বহুল প্রতীক্ষিত এই প্রকল্প উদ্বোধনের কারণে দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ২ সেপ্টেম্বর। ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ওই উড়ালসড়কের ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার (বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট) পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন করা হয়েছে। এছাড়া শেখ হাসিনার হাত ধরে বিশ্বের ৩৩তম পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় যুক্ত হলো বাংলাদেশ। নিজের দেশের কল্যাণে এই শক্তি ব্যবহার করবে বাংলাদেশ।

লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়া : বছরজুড়েই আলোচনায় ঊর্ধ্বমুখী খাদ্য মূল্যস্ফীতি। বছরের শেষ ভাগে এসে তা আরো বেড়েছে। সরকারের নানা পদক্ষেপেও লাগাম টানা যায়নি খাদ্যপণ্যের দামে। বেড়েছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। গত আগস্ট মাসে হঠাৎ খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রথমবারের মতো দুই অঙ্কের ঘরে উঠে যায়। যা ছিল গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। পরের তিন মাস খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ শতাংশের উপরে। অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ- যা গত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর বছরজুড়েই বেশ চড়া বাজারমূল্যে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। কখনো ডিম, কখনো আবার পেঁয়াজ বা আলুর দাম বেড়েছে। শাকসবজি, মাছ-মাংসের দামও ছিল সাধারণের নাগালের বাইরে। এছাড়া তেল, ডাল, চিনি, আটা ও ময়দার মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর দামও ছিল অস্বস্তির পর্যায়ে।

ডেঙ্গুর চোখ রাঙানি : ২০২৩ সালে কোভিড না থাকলেও বছরজুড়ে ছিল ডেঙ্গুর চোখ রাঙানি। এছাড়া সারা বছর বায়ুদূষণে ভুগছে মানুষ।

ক্রীড়াঙ্গনে সাফল্য-ব্যর্থতা : ২০২৩ সালটি হতে পারত ক্রীড়াঙ্গনের চমক জাগানিয়া বছর। কিন্তু ছোট ছোট ভুল, সিদ্ধান্তহীনতায় বছর গেল সফলতা-ব্যর্থতায়। তবে খেলায় বিজয়রথে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশের নারীরা। সাফ নারী অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালকে উড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শামসুন্নাহার, রিপা, উন্নতিরা। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় মেয়েদের সিনিয়র ফুটবলের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ঘরে রয়েছে অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের শিরোপা। অনূর্ধ্ব-২০ পর্যায়েও মেয়েরা নিয়ে এসেছে সেরা সাফল্য। এদিকে প্রথমবার অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ জিতল বাংলাদেশ। এসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ ফাইনালে আশিকুর রহমান শিবলির সেঞ্চুরিতে ভর করে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ১৯৫ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।

এদিকে ২০২৩-এ এসে ১৯৯৯ সালের কথা মনে করাল বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। সেই বিশ্বকাপ গ্রুপ পর্বে দুটি ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। ওই আসরের ২৪ বছর পর আবারো দুই ম্যাচে জয় পেয়েই বিশ্বকাপ থেকে দেশে ফিরে এসেছেন টাইগাররা।

আদালতপাড়ার উত্তাপ : ২০২৩ সাল দেশের রাজনৈতিক মাঠ ছিল উত্তপ্ত। উত্তাপ ছড়িয়েছে আদালতপাড়াও। বছরের শেষ দিকে এসে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে সরগরম ছিল আদালতপাড়া। এছাড়া রাজনৈতিক মামলায় বিএনপির অনেক কেন্দ্রীয় নেতার সাজা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের মামলায় রায় বেরিয়েছিল। জয় হত্যাচেষ্টা মামলায় গত ১৭ আগস্ট ঢাকার তৎকালীন এডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূরের আদালত রায়ে মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমান, জাসাসের সহসভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন, তার ছেলে রিজভী আহাম্মেদ ওরফে সিজার এবং যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়াসহ ৫ জনকে পৃথক দুই ধারায় ৭ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন। গত ২ আগস্ট জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ ও তথ্য গোপনের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ৯ বছর ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামান।

এছাড়াও বেশ কয়েকজন আলোচিত ব্যক্তির মামলার রায়ে চলতি বছর সাজা হয়েছে। গত ৮ অক্টোবর অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের মামলায় পৃথক দুই ধারায় হাজার কোটি টাকা পাচারকারী গেøাবাল ইসলামী (সাবেক এনআরবি গেøাবাল) ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) ২২ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঘুষ লেনদেনের মামলায় বরখাস্ত পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ২০২৩ সালের ২১ জুন ডিআইজি মিজানুর রহমানকে পৃথক তিন ধারায় ১৪ বছর কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক মঞ্জুরুল ইমাম। এছাড়া আলোচিত রিজেন্ট সাহেদ করিমকে ৩ বছরের কারাদণ্ড, বিতর্কিত হেলেনা জাহাঙ্গীরসহ ৫ জনকে গত ২০ মার্চ দুই বছর করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার এডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট। অস্ত্র আইনে হুট করে আলোচনায় আসা মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন ঢাকার মেট্রো বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১৪ এর বিচারক মুর্শিদ আহাম্মদের আদালত।

তুরস্কের ভূমিকম্প থেকে গাজায় হত্যাযজ্ঞ : ভূমিকম্প, প্রাণহানি, হত্যাযজ্ঞ, দ্রব্যমূল্য, ডলার সংকট, মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ, পাকিস্তানের অস্থিতিশীলতা- সবকিছু মিলিয়েই ২০২৩ সালে বিশ্ব ছিল টালমাটাল। বছরের শুরুতেই (৬ ফেব্রুয়ারি) তুরস্কে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ হারানোর ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে পড়ে বিশ্ব বিবেক। মরক্কোর আল হুজে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে মারা যায় প্রায় ৩ হাজার মানুষ। আফগানিস্তানের হেরাতে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পে মারা যায় দেড় হাজার মানুষ। ভূমিকম্পের প্রাণহানির ভয়ংকর মানবিক বিপর্যয়ের মতো মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়ও বিপর্যস্ত করে তুলে বিশ্বকে।

রক্ত¯œাত গাজা : ফিলিস্তিনি অধ্যুষিত গাজা ভূখণ্ড ইসরায়েলের বোমা হামলায় ক্ষতবিক্ষত ও রক্তস্নাত হয়েছে এ বছর। ৭ অক্টোবর গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি গ্রুপ হামাস ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সহস্রাধিক লোককে হত্যা ও শতাধিক ব্যক্তিকে বন্দি করে নিয়ে যায়। এরপর আন্তর্জাতিক রীতিনীতির তোয়াক্কা না করে ইসরায়েলি বাহিনী নির্বিচারে বেসামরিক অবস্থানের ওপর হামলা শুরু করে। পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও টেলিযোগাযোগ বন্ধ গাজা পরিণত হয় এক মৃত্যুপুরীতে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গাজায় অবতীর্ণ হন কসাইয়ের ভূমিকায়। এছাড়া চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিশ্বে। গৃহযুদ্ধ থামেনি প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারেরও। সেখানে এখন শুধু বিভিন্ন গেরিলা গোষ্ঠী নয়, বার্মার তরুণরাও জান্তাবিরোধী সশস্ত্র লড়াইয়ে নেমেছে। সেই লড়াই ছড়িয়ে পড়েছে চীন সীমান্তেও। অন্যদিকে পাকিস্তানের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলে ইমরান খানের গ্রেপ্তার এবং নওয়াজ শরিফের ফেরা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা। গত আগস্টে আদালতের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ৫ বছরের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করে দেশটির নির্বাচন কমিশন। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। নির্বাচনে অংশ নেয়ার চেষ্টার অংশ হিসেবে সেই রায়ের বিরুদ্ধে প্রথমে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট ও পরে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন পাকিস্তানের বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান। রাজনৈতিক হিংসা-প্রতিহিংসার বলয়ে বিশ্বে ইতিবাচক দিকও আশার আলো দেখাচ্ছে। অর্থনীতি সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপদেশ শ্রীলঙ্কা। দেশটির সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত মতে, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এ সময়ে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমেছে।

চন্দ্রযান, চাঁদে যান : অন্যদিকে চাঁদের মাটিতে চন্দ্রযানের সফল অবতরণ করে ইতিহাস গড়ল প্রতিবেশ রাষ্ট্র ভারত। সব শঙ্কা কাটিয়ে ভারতের মহাকাশযান ‘চন্দ্রযান-৩’ চাঁদের বুকে সফলভাবে অবতরণ করে। এর মধ্য দিয়ে প্রথম দেশ হিসেবে ভারত চাঁদের রহস্যময় দক্ষিণ মেরুতে (কুমেরু) পৌঁছতে সক্ষম হলো এবং নতুন ইতিহাস গড়ল। এছাড়া যুগ যুগ ধরে চলে আসা বিশ্বের এক নম্বর জনবহুল দেশ চীনকে টপকে শীর্ষ জনবহুল দেশ এখন ভারত। ইউএনএফপিএর তথ্যমতে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে ভারতের জনসংখ্যা চীনের থেকে ২৯ লাখ বেশি ছিল।

একাত্তরে বাংলাদেশে জেনোসাইডের স্বীকৃতি দিল আইএজিএস : একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে সংঘটিত জেনোসাইডের স্বীকৃতি দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলারস (আইএজিএস)। গত ২৫ এপ্রিল আইএজিএস ‘১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জেনোসাইড, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধ হিসেবে সংঘটিত অপরাধ ঘোষণা করার প্রস্তাব’ গ্রহণ করেছে। আইএজিএসে গৃহীত প্রস্তাব জেনোসাইডের নৃশংসতার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি বলে মনে করছে বাংলাদেশ।

নক্ষত্রদের হারিয়ে যাওয়া : মহাকালের অমোঘ নিয়মে ২০২৩ সালেও বাংলাদেশ হারিয়েছে অনেক গুণীজনকে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খান, প্রবীণ রাজনীতিক ও ঐক্য ন্যাপের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী, একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাস্কর শামীম শিকদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. আব্দুল মালিক, সাংস্কৃতিক সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্য শহীদজায়া অধ্যাপক পান্না কায়সার, ভাষাসৈনিক ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ আবদুল মতিন চৌধুরী, খ্যাতিমান চিত্রনায়ক নায়ক, সংসদ সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক, কবি আসাদ চৌধুরী, কবি মোহাম্মদ রফিক, চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান, খ্যাতিমান নির্মাতা সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী, একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী জিনাত বরকতউল্লাহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক বুলবুল মহলানবীশ, খ্যাতিমান নাট্যশিল্পী মিতা চৌধুরীকে হারিয়েছে বাংলাদেশ।


শেয়ার করুন