১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ০৫:৫৩:১৭ অপরাহ্ন
কৃচ্ছ্রসাধনে সরকারের সাশ্রয় ৫১ হাজার কোটি টাকা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৪-২০২৩
কৃচ্ছ্রসাধনে সরকারের সাশ্রয় ৫১ হাজার কোটি টাকা

♦ সরকারি খরচ ১৭,৫৫৬ কোটি ♦ উন্নয়ন কর্মসূচি ১৮,৫০০ কোটি ♦ পণ্য সেবা সম্পদ সংগ্রহ ও পূর্ত কাজে ৬,৪৭০ কোটি ♦ বেতন-ভাতা খাতে ১,১১৩ কোটি ♦ শেয়ার, ইক্যুইটি ও বিনিয়োগ ৭,৫৮৫ কোটি টাকা 


গত বছরের জুনে যখন চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, তখন অর্থনীতিতে নানা টানাপোড়েন চলছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি, সার ও খাদ্যপণ্যের দাম লাগামছাড়া। করোনা মহামারির নেতিবাচক প্রভাবে তখনো অনেক দেশের অর্থনীতিতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় সীমিত সম্পদের পরিমিত ব্যবহার। অপচয় কমাতে বাজেট অনুমোদনের পরপরই ঘোষণা দিয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি গ্রহণ করে অর্থ বিভাগ। সেই নীতির সুফল মিলছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, কৃচ্ছ্রসাধনে সরকারের সাশ্রয় হয়েছে ৫১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে গত বুধবার অনুষ্ঠিত ‘কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল অন বাজেট ম্যানেজমেন্ট, কারেন্সি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রেট’ শীর্ষক সভায় সরকারের সাশ্রয়ের এই তথ্য তুলে ধরা হয়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বাজেটে মোট সরকারি ব্যয় হ্রাস পেয়েছে ১৭ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা; বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ব্যয় কমেছে ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা; পণ্য ও সেবা এবং সম্পদ সংগ্রহ ও পূর্ত কাজে ৬ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা ব্যয় কমেছে; বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় কমেছে ১ হাজার ১৩ কোটি টাকা; এ ছাড়া শেয়ার, ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ খাতে বরাদ্দ হ্রাস পেয়েছে ৭ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা।


অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, অতিমারির পরপরই ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি করে। বাংলাদেশও এর বাইরে ছিল না। সেই অনিশ্চয়তায় প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল সাশ্রয়ী হওয়া, অপচয় কমানো। এ লক্ষ্যে বিধিনিষেধ দেওয়া হয় সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ ও প্রকল্পের গাড়ি কেনার ওপর। বরাদ্দের ৫০ শতাংশের বেশি ব্যয় না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে কম গুরুত্বপূর্ণ আমদানিনির্ভর প্রকল্প বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেওয়া হয়। উপরন্তু সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের বেঁচে যাওয়া অর্থ ভিন্ন খাতে স্থানান্তর না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয় সব মন্ত্রণালয়কে। সরকারের এই কৃচ্ছ্রসাধনের ফলে সব মিলিয়ে প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃচ্ছ্রসাধনের কারণে সরকারের ব্যয় কমায় বাজেট ঘাটতিও কমার কথা; তবে ভর্তুকি ও সুদ পরিশোধে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে সাশ্রয়ের পুরো সুফল মিলছে না। কৃষি, বিদ্যুৎ ও খাদ্য খাতে ভর্তুকিতে ২১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বেড়েছে। আবার সুদ পরিশোধে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৯ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা। ফলে সরকার নানা খাতে কৃচ্ছ্রসাধনের ফলে যে অর্থ সাশ্রয় করেছিল, তার বেশির ভাগই যাচ্ছে সুদ পরিশোধ ও ভর্তুকিতে।


অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থায় সরকারের এই কৃচ্ছ্রসাধনের প্রয়োজন ছিল। এর কিছুটা সুফল পেয়েছে সরকার। তবে এই ধারা অব্যাহত রাখা যাবে না। কারণ কৃচ্ছ্রসাধনের ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যেতে পারে। ফলে তা সামগ্রিক উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

শেয়ার করুন