২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:৫৯:৩৪ অপরাহ্ন
সরবরাহ ঘাটতি সামালে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০১-২০২৪
সরবরাহ ঘাটতি সামালে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে সারাবিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। একের পর এক মেগা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, যোগাযোগ, ব্যবসাবাণিজ্য ও নাগরিক সুবিধার ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমান সরকারের ১০টি বৃহৎ প্রকল্পের সুফল নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদন-


দেব দুলাল মিত্র : পায়রা তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পটি মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ প্রকল্প। এরই মধ্যে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। এটি আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির আধুনিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। দুই ইউনিট বিশিষ্ট ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে।

পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির আধুনিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রয়েছে। দেশের চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহে ঘাটতি মেটাতে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ২০২২ সালের ২১ মার্চ শেখ হাসিনা নিজে উপস্থিত থেকে আধুনিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সরকারের একটি বড় ও আধুনিক প্রকল্প। ‘বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)’ এটি নির্মাণ করেছে। দুই ইউনিট বিশিষ্ট এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতিটি ইউনিট থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট করে মোট ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের লক্ষ্যে ২০১৪ সালে নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) ও চায়না মেশিনারিজ কোম্পানির (সিএমসি) মধ্যে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী এই দুই কোম্পানি যৌথভাবে বাংলাদেশ-চায়না


পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) প্রতিষ্ঠা করে। ২০১৬ সালে এই প্রকল্প পরিবেশগত ছাড়পত্র পায়। ২০১৭ সালে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এজন্য আন্ধারমানিক নদীর তীরে ধানখালীর গ্রামীণ এলাকায় ১ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটানা কাজ চলায় ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম ইউনিটের কাজ শেষ হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওই বছরের ১৫ মে প্রথম ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। এরপর ৮ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ইউনিট থেকেও উৎপাদন শুরু হয়। ২০২২ সালের ২১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী এ তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ২৪৮ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় হয়।

কর্মকর্তারা জানান, উন্নত দেশগুলো কয়লা জ¦ালিয়ে উৎপাদিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের সময় পরিবেশ রক্ষায় ও ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে যে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাকে ‘আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি’ বলা হয়। এ প্রযুক্তির শতভাগ ব্যবহার করে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য জ¦ালানি হিসেবে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা আমদানি করা হচ্ছে। এখানে আমদানিকৃত কয়লা রাখা হয় ঢাকনাযুক্ত কোল ইয়ার্ডে। ঢাকনা থাকায় কয়লা আনা-নেয়ার সময় কয়লার গুঁড়া বাতাসের মাধ্যমে আশপাশের এলাকায় অপেক্ষাকৃত কম ছড়ায়। ফলে পরিবেশের ক্ষতিও অনেক কমে যায়। এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৩তম অবস্থানে রয়েছে। ভারত, চীন, তাইওয়ান, জাপান ও মালয়েশিয়া আগে থেকেই এশিয়া মহাদেশে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রথম নির্মাণ করে ভারত। এ অঞ্চলে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়।

তবে শুরু থেকেই পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। এর প্রধান কারণ, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে জোর দেয়া হলেও গ্রিড লাইন বা সঞ্চালন লাইন নির্মাণে তখন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। তাই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদন শুরু করলেও পূর্ণ সক্ষমতা কাজে লাগাতে পারছে না। সক্ষমতার চেয়ে অনেক কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। সরকার এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ নিতে না পারায় এখন পর্যন্ত মোটা অংকের ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়ে যাচ্ছে।

কয়লা সংকটের কারণে কয়েকবার এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত ১ হাজার থেকে ১২শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এখন উৎপাদন আরো বেড়েছে। প্রতিদিন ১২ হাজার টনের বেশি কয়লা ব্যবহার করে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ পুরো বরিশাল ও খুলনা এবং ঢাকার কিছু অংশের জন্য নির্ভরযোগ্য উৎস। এই কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদন যখন বন্ধ হয় তখন এসব এলাকায় লোডশেডিং হয়। তবে কয়লা সংকটের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সেজন্য সব সময় কয়লার মজুত রাখতে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ¦ালানি উপদেষ্টা ও জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বড় বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়েছে। এর মধ্যে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র অন্যতম। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করলেই হবে না। এর পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সচল রাখতে পর্যাপ্ত জ¦ালানি সংরক্ষণ এবং উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য গ্রিড লাইন শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। গ্রিডলাইন না থাকায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনের পরও বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারেনি।


শেয়ার করুন