বাংলাদেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আবার আলোচনা শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ ভিসা নীতি ঘোষণা করার পর রবিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী যখন মনে করবেন, তখন ছোট সরকার বা নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করবেন। প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে বলে দিয়েছেন, নির্বাচনকালীন সরকারে কারা কারা থাকতে পারেন, সে ব্যাপারে একটি রূপরেখা তিনি দিয়েই দিয়েছেন।
এর আগে গত ১৫ই মে একটি সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বাংলাদেশ ওয়েস্টমিনস্টার ধাঁচের গণতন্ত্র অনুসরণ করে। তাই ব্রিটেনে যেভাবে নির্বাচন হয়, বাংলাদেশেও সেভাবেই করা হবে।
”এর মধ্যে আমরা এইটুকু উদারতা দেখাতে পারি, পার্লামেন্টে সংসদ সদস্য যারা আছে, তাদের মধ্যে কেউ যদি ইচ্ছা প্রকাশ করে যে, নির্বাচনকালীন সময়ে তারা সরকারে আসতে চায়, আমরা রাজি আছি,” তিনি বলেন।
যদিও বিরোধী দল বিএনপি বরাবরই বলে আসছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া তারা কোন নির্বাচনে যাবে না।
মে মাসেই যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দানকারীদের তারা ভিসা দেবে না। এমন ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে নতুন করে আবার আলোচনা শুরু হয়েছে।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বাংলাদেশের সংবিধান কি বলছে? কেমন হতে পারে এই সরকার?
সংবিধানে যা বলা হয়েছে
বাংলাদেশের সংবিধানে শুরু থেকে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই নির্বাচনের বিধান ছিল। সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হন।
সকল বিরোধী দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ একটি ‘নিরপেক্ষ নির্দলীয় কেয়ারটেকার’ সরকার গঠন করেন, যার একমাত্র দায়িত্ব ছিল তিন মাসের মধ্যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা।
১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের অধীনে ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত ষষ্ঠ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা হলেও তা বর্জন করেছিল আওয়ামী লীগ সহ বিরোধী দলগুলো। এরপর সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করা হয়, যে সরকারের মূল কাজ একটি জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা।
তবে ২০১১ সালে মে মাসে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট ওই ব্যবস্থাকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করে। এরপর পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে আবার পুরনো ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া হয়। যদিও সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, পরবর্তী দুটি জাতীয় নির্বাচন ওই ব্যবস্থার অধীনে হতে পারে।
এরপর গত দুটি জাতীয় নির্বাচন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে, যদিও সেসব নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলাদা করে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। সেখানে বলা হয়েছে, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের আয়োজন করবে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং প্রবীণ আইনজীবী শাহদীন মালিক বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘’নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংবিধানে আলাদা কিছু বলা হয়নি। একটি মন্ত্রিসভায় কতজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী থাকবেন, সেটা পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করে। তিনি চাইলে সেটা বাড়াতে বা কমাতে পারেন। এখানে সংবিধানে কোন বাধ্যবাধকতা নেই।‘’
‘’তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বলা হয়েছিল যে, তারা রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন। সেখানে ১০ জন উপদেষ্টা থাকবেন, এভাবে বলা হয়েছিল। কিন্তু এখনকার সংবিধানে নির্বাচনের সময় দায়িত্বে থাকা সরকারের বিষয়ে এরকম কিছু বলা হয়নি। তিনি কোন কিছু করতে পারবেন না, এরকম কোন নিষেধাজ্ঞাও নেই,’’ তিনি বলেন।
এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী চাইলে যেকোনো প্রকার মন্ত্রিসভা গঠন করতে পারেন বলে তিনি জানান।
সংসদ বহাল থাকায় সর্বদলীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সরকারের কাঠামোতে চাইলে যেকোনো প্রকার পরিবর্তনও আনা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
নির্বাচনকালীন সরকারের যেসব পন্থা রয়েছে
আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতাসীন দলের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান রয়েছে। জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পুরোপুরি দায়িত্বে থাকবে নির্বাচন কমিশন।
সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙ্গে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। ৫৭ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকবেন।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এবং নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পর প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের বদলি, পদায়নসহ কিছু কিছু কাজে সরকারকে নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নিতে হয়। যদিও অতীতে এই নিয়মের লঙ্ঘনেরও উদাহরণ রয়েছে।
অতীতের উদাহরণ টেনে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচনের সময় যে সরকার দায়িত্ব পালন করবে, প্রধানমন্ত্রী চাইলে সেখানে কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন। সেখানে তিনি টেকনোক্রেট মন্ত্রী নিয়োগ, উপদেষ্টা নিয়োগ, মন্ত্রিসভার আকার ছোট বা বড় করতে পারেন।
টেকনোক্রেট মন্ত্রীদের ক্ষেত্রে নিয়ম হলো, মন্ত্রিসভায় নয়জন সংসদ সদস্য মন্ত্রীর বিপরীতে একজন টেকনোক্রেট মন্ত্রী নেয়া যাতে পারে। সেক্ষেত্রে মন্ত্রিসভায় ৩০জন সংসদ সদস্য মন্ত্রী থাকলে তিনজন টেকনোক্রেট মন্ত্রী নিয়োগ দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী।
কিন্তু এর আগের দুটি জাতীয় নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালনকারী সরকারে কোন টেকনোক্রেট মন্ত্রী রাখা হয়নি।
২০১৩ সালের নির্বাচনকালীন ‘সর্বদলীয় মন্ত্রিসভায়’ টেকনোক্রেট কোন ব্যক্তিকে মন্ত্রী করা হয়নি। আগের মন্ত্রিসভায় টেকনোক্রেট কোটায় থাকা আইনমন্ত্রী শফিক আহমদ ও শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়াকে উপদেষ্টা করা হয়েছিল।
২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে টেকনোক্রেট কোটায় থাকা চার মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেয়ার পর তারা পদত্যাগপত্র জমাও দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে প্রধানমন্ত্রী আবার তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে ডিসেম্বর মাসে তাদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়।
বর্তমান মন্ত্রিসভায় টেকনোক্রেট কোটায় দুজন মন্ত্রী এবং একজন প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের উপদেষ্টা বলা হতো। বর্তমান সরকারের সময়েও বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দেখভালের প্রধান দায়িত্বে উপদেষ্টারা রয়েছেন।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলছেন, ‘’তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় আইন করে উপদেষ্টাদের বিধান থাকলেও বর্তমান ব্যবস্থায় উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়টি আইনে নেই। কিন্তু গত কয়েক বছরে উপদেষ্টার যে সিস্টেম চালু হয়েছে, আমার জানা মতে, এর আইনগত কোন কাঠামো নেই। কিন্তু এরকম একটা ব্যবস্থা চালু হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী চাইলে যতজন খুশী উপদেষ্টা নিয়োগ দিতে পারেন। সংবিধানে বা আইনে এই বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।‘’
অতীতে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে এরকম পরিবর্তন করতে দেখা গেছে। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, সংসদ সদস্যদের ভেতর থেকে কেউ ইচ্ছা প্রকাশ করলে নির্বাচনকালীন সরকারে জায়গা পেতে পারেন। যদিও বিরোধী দল বিএনপির কারো সেই সরকারে জায়গা হবে না বলে পরিষ্কার ঘোষণা দিয়েছেন।
নির্বাচনের সময়কার সরকার নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল- আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির বিশাল ফারাক রয়েছে।
বিরোধী দল বিএনপি বলছে, তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোন নির্বাচনে যাবে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে, এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘’নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের বিকল্প তো কিছু নেই। বাংলাদেশে অতীতে দলীয় সরকারের অধীনে সাতটি নির্বাচন হয়েছে, সবগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। শুধুমাত্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়েই কোন বিতর্ক হয়নি। এই কারণেই তো কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা এসেছে। এই ব্যবস্থা জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে হয়েছিল, সেটা বাতিল করতে হলেও তো জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে হওয়া উচিত।‘’
তিনি বলছেন, নির্বাচনকালীন সরকারকে অবশ্যই নিরপেক্ষ হতে হবে। এখানে বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতি হলো সবচেয়ে আগে। সেটা পূরণের জন্যই তো কেয়ারটেকার সরকার এসেছে। সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যভাবে যদি সেই ঘাটতি যদি পূরণ করা যায়, তাহলেই সেটা সমাধান হতে পারে।
যদিও আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালুর কোন সুযোগ নেই। যুক্তরাজ্য, ভারতের আদলে ক্ষমতাসীন দলের অধীনেই নির্বাচন হবে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য এবং সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলছেন, ‘’সংবিধান অনুযায়ী একটাই পথ নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা।‘’
সব দলের অংশগ্রহণে সরকার গঠনের কোন প্রয়োজন আছে কিনা, জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘’প্রয়োজন না হলে সেটা কেন করা হবে? সংবিধান তো সেটা বলে না। সবাই বসে মিলে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে এরকম কোন সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে হয়তো ওইরকম সরকার গঠন হতে পারে। কিন্তু সংবিধানে এরকম কিছু বলা নেই। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার তো সুযোগ নেই।‘’
নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘’বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনই ভালো হয়নি। এগুলোকে গ্রহণযোগ্য বলা যায় না। ২০১৪, ২০১৮ সালের নির্বাচন এর বড় উদাহরণ।‘’
কারণ মাঠ পর্যায়ে যাদের দিয়ে নির্বাচন করানো হয়, তারা আইনিভাবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকলেও মানসিকভাবে থাকে না। সেই কারণে নির্বাচন কমিশন তাদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। আবার নির্বাচন কমিশনেও যারা থাকে, তারা এক ধরনের মানসিক চাপের মধ্যে থাকে।
তিনি বলছেন, ঐতিহাসিকভাবে এমন কোন উদাহরণ বাংলাদেশে নেই, যেখানে সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। বর্তমান সরকারের অধীনে দুটা নির্বাচন ভালো হয়নি, আগামীতে ভালো হবে- তার কোন নিশ্চয়তা নেই।
অতীতে নির্বাচনের সময় যেমন সরকার ছিল
আলোচনার ভিত্তিতে ২০১৩ সালে এরকম সর্বদলীয় একটি মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছিল। সেই সরকারে বিএনপিকে আসার প্রস্তাব দেয়া হলেও তারা আসেনি। বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বিএনপিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল।
এরপর আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদের এমপিদের নিয়ে ২৯ সদস্যের একটি ‘সর্বদলীয় মন্ত্রিসভা’ গঠন করা হয়। তার আগে মন্ত্রিসভার সকল সদস্যের কাছ থেকে পদত্যাগপত্র সংগ্রহ করা হয়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ওই মন্ত্রিসভায় জায়গা পেলেও আগের মন্ত্রিসভার ৩০ জন বাদ পড়েন।
সর্বদলীয় মন্ত্রিসভায় কোন টেকনোক্রেট মন্ত্রী ছিলেন না। আগের মন্ত্রিসভার টেকনোক্রেট কোটায় থাকা আইনমন্ত্রী শফিক আহমদ ও শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়াকে উপদেষ্টা করা হয়।
ওই মন্ত্রিসভার অনেক নেতা সরকার গঠনের পরের মন্ত্রিসভাতেও ঠাই পেয়েছিলেন।
পরবর্তীতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসেও নির্বাচনে আগে আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “কীভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা আমাদের সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের আগে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। সেই সরকার সর্বতোভাবে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা দিয়ে যাবে।”
এর ব্যাখ্যা দিয়ে বিবিসি বাংলাকে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা এবং বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছিলেন, নির্বাচনকালীন সরকার বলতে বর্তমান সরকারকেই বোঝায় ।
“এই সরকার হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার – যারা শুধু দৈনন্দিন কাজগুলো করবে।” সেই সরকারের মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের নেতারাই ছিলেন।
পরবর্তীতে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আর কোন ঘোষণা আসেনি। নভেম্বর মাসে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরে সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেছিলেন, “শিডিউল ঘোষণার শুরু থেকেই বলতে হয়, এই সরকার নির্বাচনকালীন সরকার। কনস্টিটিউশনে ওভাবে লেখা নেই আসলে, এমনিই। “সরকার রেগুলার সরকারই আছে। এগুলো (নির্বাচনকালীন বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) আমাদের দেওয়া নাম, এগুলো কিন্তু কনস্টিউশনাল নাম না।”
সেই সময় নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘’গত নির্বাচনের আগে ছোট আকারে নির্বাচনকালীন সরকার করার কথা ভাবা হয়েছিল। কারণ তখন সংসদে বিএনপি ছিল। তাদের নির্বাচনকালীন সরকারে আনার জন্য সে চিন্তা করা হয়েছিল। এবার তো সংসদে বিএনপি নেই। আর নির্বাচনকালীন সরকারে অনির্বাচিত কাউকে রাখা যাবে না। তাই এ সরকারকে আর ছোট করার কোনও দরকার নেই।‘’
সেই মন্ত্রিসভায় ৩৪জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী এবং দুইজন উপমন্ত্রী ছিলেন।
১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের অধীনে ১৫ই জানুয়ারির যে বিতর্কিত নির্বাচন হয়েছিল, সেখানে শুধুমাত্র বিএনপির নেতারাই মন্ত্রিসভায় ছিলেন। সেই নির্বাচন দেশে বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। সূত্র: বিবিসি বাংলা