২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:২৫:২৬ অপরাহ্ন
রোজার আগেই বাড়ানো হচ্ছে ছোলার দাম
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০১-২০২৪
রোজার আগেই বাড়ানো হচ্ছে ছোলার দাম

রোজার বাকি আর মাত্র আড়াই মাস। এর মধ্যে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা সরবরাহ সংকটের অজুহাতে ছোলা ও সাদা মটরের দাম কেজিতে বাড়িয়েছেন ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। আড়তদাররা বলছেন, এ সময়ে আগের বছর প্রচুর ছোলা আমদানি হতো। এখন ছোলার সংকট রয়েছে।


তাই দাম বাড়ছে। কিন্তু কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইনের দাবি উল্টো।

তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর দেখা যায়, রোজা শুরুর কয়েক মাস আগে বিভিন্ন অজুহাতে পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা, যাতে রোজার সময় প্রশাসনের চাপে বাধ্য হয়ে কমিয়ে দিতে হলে লভ্যাংশ রেখে কমাতে পারেন; সে জন্য আগেভাগে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আর এখন খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি বাজার থেকে পণ্যটি সংগ্রহ করবেন।


এ সুযোগটিও কাজে লাগাচ্ছেন তাঁরা। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, অনেকেই পণ্যটি মজুদ করা শুরু করছেন।’ তিনি বলেন, ‘এখন যেসব ছোলা বাজারে আছে; সেগুলোর বেশির ভাগই গত বছরের আমদানি করা। বাড়তি ডলার দিয়ে কেনা ছোলা তো এখন বাজারে আসেনি।


কম দামে সংগ্রহ করা ছোলাগুলো ডলার সংকটের অজুহাতে দামি বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এখনই উচিত হবে প্রশাসনের বাজার তদারকি শুরু করা। তাহলে রোজার সময় দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে।’

বাংলাদেশে ২০ বছর ধরে সবচেয়ে বেশি ছোলা আমদানি হয়েছে অস্ট্রেলিয়া থেকে। অস্ট্রেলিয়ার বিকল্প দেশ হিসেবে পাকিস্তান, ইথিওপিয়া, রাশিয়া, ইউক্রেন, ভারত, তানজানিয়া, মিয়ানমার ও কানাডা থেকে ছোলা আমদানি করে আসছেন আমদানিকারকরা।


দেশে প্রতিবছর ছোলার বাার্ষিক চাহিদা এক লাখ ৪০ হাজার টন।

চট্টগ্রাম বন্দরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত ১১ মাসের আমদানির তথ্যে দেখা যায়, ওই সময়ে দেশে ছোলা আমদানি হয়েছে ছয় হাজার ২৮২ টন। আর একই সময়ে ২০২২ সালে আমদানি হয়েছিল সাত হাজার ২৪৩ টন ছোলা। এ বছর কম হয়েছে ৯৬১ টন। তবে সবচেয়ে বেশি ছোলা আমদানি হয় রোজার এক মাস আগে। এর মধ্যে সরবরাহ সংকটের অজুহাতে পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।


দেশে সবচেয়ে বেশি ছোলা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে চট্টগ্রামের বিএসএম গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশে সবচেয়ে বেশি ছোলা আমদানি হয় অস্ট্রেলিয়া থেকে। সেখানে এখন ছোলার মৌসুম শুরু হয়েছে। নভেম্বর থেকে অস্ট্রেলিয়ার কৃষকরা ফসল তুলছেন। আমরাও সবেমাত্র ঋণপত্র খুলতে শুরু করেছি। এখন অল্পস্বল্প ছোলা আমদানি হচ্ছে। এক মাসের মধ্যে দেশের সমুদ্রবন্দর দিয়ে বেশির ভাগ ছোলা আসবে।’ তিনি বলেন, ‘গত বছর অস্ট্রেলিয়ায় ছোলার টন ছিল ৫০০ থেকে ৫৫০ ডলার। এখন ৬৮০ থেকে ৭২০ ডলার। এর মধ্যে দেশে ডলার সংকট চলছে। আমাদের আমদানি করতে হলে ওই দাম হিসাব করে দেশে ছোলা আমদানি করতে হবে।’


গত শনিবার খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আড়তগুলোতে এখন অস্ট্রেলিয়ান ছোলা রয়েছে। মানভেদে প্রতিমণ ছোলা বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ৫৪৫ থেকে তিন হাজার ৬৫৭ টাকা। প্রতি মণে ৩৭.৩২ কেজি হিসাবে প্রতি কেজির পাইকারি মূল্য ৯৫ থেকে ৯৮ টাকা পড়ছে। অথচ এক মাস আগেও একই মানের ছোলা বিক্রি হয়েছে ৮২-৮৩ টাকা কেজি। মাস ব্যবধানে বেড়েছে কেজিতে ১৩ থেকে ১৫ টাকা। আর সাদা মটরের কেজি এখন ৬০ থেকে ৬২ টাকা। অথচ ১৫ দিন আগেও দাম ছিল ৫০ থেকে ৫২ টাকা। বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা।


খাতুনগঞ্জের ডালজাতীয় পণ্যের আড়তদার ও কিং ট্রেডার্সের মালিক পরিতোষ দে বলেন, আগের আমদানি করা কিছু ছোলা আড়তে রয়েছে। সেগুলোর দাম কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডলার সংকটের কারণে এখন নতুন ছোলা আমদানি তেমন একটা হচ্ছে না। নতুন করে যেসব ছোলা আমদানি হচ্ছে সেগুলো কেজি সর্বোচ্চ ৯৮ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।


চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি ও মেসার্স তৈয়বিয়া ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সোলায়মান বাদশা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বন্দর থেকে পণ্য আসছে ৫ থেকে ১০ কনটেইনার। আগে এই সময়ে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ কনটেইনার খালাস হতো। সে তুলনায় পণ্য আমদানি কম হচ্ছে। আর যেসব ছোলা আমদানি হচ্ছে সেগুলো কয়েকজন মিলে কিনে নিচ্ছেন। ফলে বাজারে সংকট আছে।’ তিনি বলেন, ‘ডালজাতীয় পণ্য এখন কয়েকজনের হাতে চলে যাচ্ছে। ফলে দাম বেড়ে যাচ্ছে। মূলত সিন্ডিকেটের কারণেই বাড়ছে রোজার এ পণ্যটির দাম।’


শেয়ার করুন