০২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:০৪:১৯ পূর্বাহ্ন
খাদের কিনারায় জাপা, ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০১-২০২৪
খাদের কিনারায় জাপা, ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল জাতীয় পার্টিকে (জাপা) খাদের কিনারে নিয়ে এসেছে। ২৬ আসনে ছাড় নিয়ে ভোটযুদ্ধে নামা শীর্ষ নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। কিন্তু তার মধ্যে মাত্র ১১ আসনে জয় তাঁদের গভীর হতাশায় এবং নেতৃত্বকে ফেলেছে বেকায়দায়। 


জাপার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, দীর্ঘদিন ‘সমঝোতার রাজনীতি’ ও জনমুখী কর্মসূচি না থাকায় দলটি ধীরে ধীরে জনসমর্থন হারিয়েছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভরাডুবিই এর প্রমাণ, যা একসময় বড় দল হিসেবে পরিচিত জাপার ভবিষ্যতের জন্য একটি অশনিসংকেত। দলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। 


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ জাপা সম্পর্কে বলেন, কেন্দ্রীয় কিছু নেতার ব্যক্তিগত ইচ্ছা পূরণের জন্য তারা নির্বাচনে গেছে। দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তৃণমূলের কর্মীদের বিস্তর ব্যবধান আছে। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বোঝাপড়া, সুবিধা আদায় করা—এভাবেই চলবে জাতীয় পার্টি। 


১৯৮৬ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় থেকে জাতীয় পার্টি গঠন করেন। ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে দলটি ১৫৩টি আসন পেয়েছিল। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বড় দলগুলোর বর্জন করা ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে আসন পেয়েছিল ২৫১টি। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ৩৫ আসন পেয়ে তৃতীয় হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে ৩২, ২০০১ সালে ১৪, ২০০৮ সালে ২৭, ২০১৪ সালে ৩৪ এবং ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ২৩টি আসন পেয়েছিল। 


জাপা সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা দুষছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের। তাঁদের মতে, দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অধিকাংশই ব্যবসায়ী। দলের নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রেও তাঁদের মতামতই প্রাধান্য পায়। গত ১৫ বছরে জনমুখী কোনো কর্মসূচি দিয়ে মানুষের কাছে যেতে পারেনি দল। ফলে মানুষের সমর্থন হারিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এক সদস্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, জাতীয় পার্টিতে দীর্ঘদিন ধরে জনগণের অ্যাজেন্ডার রাজনীতি অনুপস্থিত। দলের শীর্ষ নেতাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাই এখানে সব। 


দলীয় সূত্র বলছে, তৃণমূলের অধিকাংশ নেতা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার পক্ষে ছিলেন। অনেক কেন্দ্রীয় নেতারও একই মত ছিল। তবে দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরসহ প্রেসিডিয়ামের বেশির ভাগ সদস্য নির্বাচনের পক্ষে ছিলেন। 


জাপার এই অবস্থার জন্য কয়েকজন নেতা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব, রাজপথে কর্মসূচির অভাবের পাশাপাশি এরশাদের মৃত্যুর পর নেতৃত্ব নিয়ে রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের দ্বন্দ্বকেও দায়ী করেছেন। এই কোন্দলের কারণে দলে সুবিধাভোগীর সংখ্যা বেড়েছে। 

সমঝোতার রাজনীতির কারণে জাপার অবস্থান দিন দিন দুর্বল হচ্ছে বলে মনে করেন দলটির প্রেসিডিয়ামের একাধিক নেতা। তাঁরা আজকের পত্রিকাকে বলেন, নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীনদের তীব্র সমালোচনা করে নিজেদের দর-কষাকষির সুযোগ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছিলেন এরশাদ। সেই কৌশল এখনো ধরে রেখেছেন দলের নেতারা। 


তবে নিজ আসনে বিজয়ী জাপা চেয়ারম্যান গতকাল মঙ্গলবার রংপুরে অভিযোগ করে বলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে ধীরে ধীরে শেষ করে দেওয়ার চক্রান্তে সরকার লিপ্ত। আমাদের দলের মধ্যে নানা রকম অন্তঃকোন্দল সৃষ্টি করছে। স্বাভাবিকভাবে দলটাকে চলতে দেওয়া হচ্ছে না।’ নির্বাচন সঠিক হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন করে ফেলেছি। এখন ফলাফল প্রত্যাখ্যান করলে আরেক ধরনের হতাশা সৃষ্টি হবে। সংসদে যাই, তারপর যতটুকু পারব দেশের জন্য কাজ করব।’ 


জাপার ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামসুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, দলটি এরশাদের সময় থেকেই একটা সুবিধাবাদী রাজনৈতিক ধারায় ছিল। এবারও তা-ই করেছে। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে রাজনীতি করতে না পারলে আগামী দিনে তাদের আর রাজনৈতিক ভিত্তি থাকবে না।


শেয়ার করুন