বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া অফশোর ব্যাংক ইউনিট থেকে কোনো তহবিল অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ইউনিটে স্থানান্তর করা যাবে না। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ইউনিট থেকে তহবিল স্থানান্তর করা যাবে না অফশোর ব্যাংক ইউনিটে। এছাড়া অফশোর ব্যাংক ইউনিটের অর্জিত মুনাফা বা সুদের ওপর কোনো ধরনের আয়কর বা অন্য কোনো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর আরোপিত হবে না। তবে এসবের ব্যত্যয় ঘটলে সর্বোচ্চ ৫ হাজার মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ দেশীয় মুদ্রা জরিমানা করা হবে। এসব বিধান রেখে অফশোর ব্যাংকিং আইন ২০২৪ এর খসড়া তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। খসড়াটির ওপর স্টেকহোল্ডারদের মতামত চাওয়া হয়েছে। মতামত পাওয়ার পর যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থার গতিবিধির সঙ্গে মিল রেখেই মূলত এই আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে।
২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অফশোর ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে। ওই নীতিমালার আলোকে বিভিন্ন ব্যাংকে অফশোর ব্যাংক ইউনিটের কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে। তবে ওই নীতিমালা জরিমানা ও শাস্তির বিধানটি দুর্বল ছিল। এখন পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বিদ্যমান নীতিমালায় দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলে থাকা সম্পূর্ণ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যাংকিং কার্যক্রম করতে পারবে। এক্ষেত্রে ঋণ বিতরণ ও আমানত নিতে পারবে। কিন্তু যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমতি নিতে হবে।
অফশোর ব্যাংকিং হলো দেশে কার্যরত ব্যাংকের আলাদা ইউনিট। শুধু দেশের বাইরে থেকে তহবিল সংগ্রহ করে রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দেওয়ার জন্য ১৯৮৫ সালে এক আদেশে এ ইউনিট গঠনের অনুমোদন দেওয়া হয়। নীতিমালা না থাকায় ব্যাংকগুলো ইচ্ছামতো অফশোর ব্যাংকিং পরিচালনা করেছে। এর মাধ্যমে কয়েকটি ব্যাংক অর্থ পাচার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের পরে প্রতিটি ব্যাংককে একটি নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। এখন একটি পূর্ণাঙ্গ আইন করার দিকে এগোচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় বলা হয়, অফশোর ব্যাংক ইউনিটের মাধ্যমে অর্জিত সুদ বা মুনাফার ওপর আয়কর বা অন্য কোনো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর আরোপিত হবে না। একইভাবে এই ইউনিটের আমানতকারী বা ঋণগ্রহীতাকে দেওয়া সুদ বা মুনাফার ওপর আয়কর, অন্য কোনো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর দিতে হবে না। এছাড়া ওই ইউনিটের আমানতকারী বা বৈদেশিক ঋণদাতাদের হিসাবের ওপর শুল্ক ও লেভি আরোপ করা হবে না।
খসড়া আইনে আরও বলা হয়, কোনো অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট আইনের ব্যত্যয় ঘটালে সে প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ ২ হাজার মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ বাংলাদেশি টাকা জরিমানা আরোপ করা হবে। আইনের বিধান লঙ্ঘন অব্যাহত থাকলে প্রথম দিনের পর দ্বিতীয় দিন থেকে প্রতিদিনের জন্য ১০০ মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ দেশীয় মুদ্রা জরিমানা আরোপ করা হবে।
এছাড়া অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের কোনো পরিচালক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী জ্ঞাতসারে বাংলাদেশ ব্যাংককে মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করলে সর্বোচ্চ ৫ হাজার মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ দেশীয় টাকা জরিমানা করা হবে। তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে এই ইউনিটের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর, ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করলে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে সর্বোচ্চ ২ হাজার মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা করা হবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, অফশোর ব্যাংক ইউনিটের নথি পৃথক ভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সময় অন্তর ইউনিট পরিদর্শন করতে পারবে। তবে পরিদর্শনকালে কোনো আমানতকারীর হিসাবের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক বা আদালতের অনুমতি ছাড়া সরবরাহ করা যাবে না।
অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ইপিজেড, পিইপিজেড, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত গ্রহণ করতে পারবে। পাশাপাশি ঋণ দেওয়া, বিনিয়োগ, ঋণপত্র গ্যারান্টি, বিল ডিসকাউন্ট, বিল নেগোশিয়েন এবং অন্যান্য বৈদেশিক বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট বহির্লেনদেন সেবা দিতে পারবে। এ ব্যাংকিং ইউনিটে যে কোনো বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব পরিচালনা করা যাবে। এর বাইরে অন্য কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ফান্ডেড বা নন ফান্ডেড ব্যাংকি লেনদেন করা যাবে না।
খসড়া আইনের বিধিনিষেধে বলা হয়, তফশিল ব্যাংক ছাড়া কোনো ব্যক্তি অফশোর ব্যাংক ব্যবসা করতে পারবে না। লাইসেন্স পাওয়ার ৬ মাসের মধ্যে অফশোর ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু করতে হবে। অন্যথায় লাইসেন্স বাতিল হবে। আর বাতিল বা স্থগিতের পর এর কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। লাইসেন্স ছাড়া অফশোর ব্যাংক শব্দ ব্যবহার করতে পারবে না। লাইসেন্সের শর্ত পালন না করা এবং অফশোর ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করলে বাতিল হলে লাইসেন্স। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে স্বেচ্ছায় লাইসেন্স সমর্পণ করতে পারবে। তবে সংশ্লিষ্ট অফশোর ব্যাংকের দায়ের বিপরীতে পর্যাপ্ত সংস্থান থাকলে লাইসেন্স সমর্পণের অনুমোদন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।