শীত পরিস্থিতি নিয়ে তেমন সুখবর নেই। অনেক স্থানে শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। শীতে কাঁপছে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলসহ সারা দেশ। কাজে যেতে পারছেন না দিনমজুর। মানুষের আয় কমছে। প্রভাব পড়ছে গবাদিপশু এবং ফসলের ওপর।
রোববার দেশের সর্বনিু তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি সোমবার আরও কমে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে নামবে। তাপমাত্রা কমছে তেঁতুলিয়ায়। তবে ঢাকায় দিনের তাপমাত্রা রোববার সামান্য বেড়েছে। দিনাজপুর ছাড়াও আরও তিন জেলায় শৈত্যপ্রবাহ চলছে।
এগুলো হলো- পঞ্চগড়, রাজশাহী এবং চুয়াডাঙ্গা। আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী ১৯ জানুয়ারি শুক্রবার দেশে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এই বৃষ্টির পর কুয়াশা কেটে যাবে। বাড়বে তাপমাত্রা।
জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ এটিএম নাজমুল হক রোববার যুগান্তরকে বলেন, মূলত কুয়াশার কারণেই অস্বস্তিকর অবস্থা চলছে। তিনি বলেন, কুয়াশার কারণে সূর্যের আলো দেখা যাচ্ছে না। এতে দিনের তাপমাত্রা কমছে। কমছে রাতের তাপমাত্রাও।
তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস রয়েছে আগামী ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল এবং ঢাকা বিভাগের কিছু অঞ্চলে হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এই বৃষ্টির আগে কুয়াশা কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। ফলে দিনের তাপমাত্রাও খুব বেশি বাড়বে না।
আবহাওয়া অফিস জানায় রোববার তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি, রাজশাহীতে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি এবং চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রিতে নেমে আসে। রোববার ঢাকার সর্বনিু তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি। সোমবার কিছুটা বেড়ে ১৪ ডিগ্রিতে উন্নীত হবে।
সারা দেশ থেকে যুগান্তর ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
দিনাজপুর: অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহ আর হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দিনাজপুরসহ উত্তরের জনপদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। গত দুদিন ধরে দিনাজপুরে বিরাজ করছে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। রোববার দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলায় এটিই এই শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। শনিবারও দিনাজপুরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জেলা আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, পৌষের শেষে এসে দিনাজপুরসহ এই অঞ্চলে কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা। উত্তরের হিমেল বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে বলে জানান তিনি।
রাতভর বৃষ্টির মতো ঝিরঝির করে কুয়াশা পড়ছে। ১০ হাত দূরের মানুষ কিংবা কোনো বস্তুকে দেখা যাচ্ছে না। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা কমলেও ঠান্ডা বাতাসে জড়োসড়ো হয়ে থাকছেন মানুষ। গরম কাপড় পরার পাশাপাশি আবর্জনা, খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। রাতের মতো দিনেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে দূরপাল্লার যানবাহন। বয়স্ক ও শিশুরা নানা শীতজনিত রোগে ভুগছেন।
রোববার সকালে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে রোগীদের ভিড় লক্ষ করা গেছে। বেলা ১১টা পর্যন্ত হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ২০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি দেখা যায় ৩৪ শিশুকে। এছাড়াও প্রতিদিন বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে দেড় থেকে দুই শতাধিক শিশু। রোগী বেড়েছে ডায়রিয়া ওয়ার্ডেও। তবে শিশুদের ঠান্ডাজনিত সমস্যায় ঘাবড়ানোর কারণ নেই- এমনটাই বলছেন জেনারেল হাসপাতালের শিশুবিশেষজ্ঞ আব্দুল কাইয়ুম।
তিনি বলেন, প্রচণ্ড ঠান্ডায় শিশুরা শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এ সময় শিশুদের গরম কাপড় পরিধান এবং ঘরে রাখতে হবে। শীতকালে বাচ্চারা খাবার কম খায়। এতে উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই। এছাড়াও ৪-৫ দিন বাচ্চাকে গোসল না করালেও সমস্যা নেই। গরম পানিতে নরম কাপড় ভিজিয়ে বাচ্চার শরীর মুছে দিতে হবে।
রাজশাহী: দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমেছে। চলতি মৌসুমের সর্বনিু তাপমাত্রায় কাঁপছে পুরো রাজশাহী। শীতজনিত নানা জটিলতায় রোগীদের ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে। রোববার সকাল ৬টায় সর্বনিু তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি। এটি এ মৌসুমে সর্বনিম্ন ছিল। শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার ছিল ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, সর্বোচ্চ-সর্বনিু তাপমাত্রা কমেছে। সর্বোচ্চ আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা খুব কাছাকাছি হওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে।
এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালসহ উপজেলা সদর হাসপাতাল ও বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকেও ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক জানান, উপজেলা পর্যায়ে রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। তবে ভর্তি রোগীর চেয়ে আউটডোর রোগীর সংখ্যা বেশি। আর পরিস্থিতি খুব খারাপ, এমনটা নয়। এ সময়টায় রোগী কিছুটা বাড়ে। সেরকমভাবে ব্যবস্থাপনাও করা আছে।
বগুড়া: গত কয়েক দিন ধরে সূর্য ও মেঘের লুকোচুরি খেলা চলছে। তীব্র শীতে দরিদ্র জনগণ বিশেষ করে ফুটপাত, রোড ডিভাইডার ও স্টেশনে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে যে শীতবস্ত্র বিতরণ হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। শীতের পাশাপাশি শীতজনিত রোগ বাড়ছে। শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শীতবস্ত্রের দামও অনেক বেড়েছে বলে জানান ক্রেতারা। রোববার সকাল ৬টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ বিকাল ৩টায় ১৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
পাবনা: প্রচণ্ড শীতে শনিবার পাবনা শহরের মুজাহিদ ক্লাব এলাকায় মীরা খাতুন (৭০) নামের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দা ও সমাজসেবক আঁখিনুর ইসলাম রেমন জানান, প্রচণ্ড শীতের মধ্যে বাড়ির পাশে পুকুরে গোসলে নেমে মীরা খাতুন অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে পাবনার ২ লক্ষাধিক চরাঞ্চলের মানুষসহ ৫ লাখ মানুষের মধ্যে গরম কাপড়ের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারিভাবে জেলার ৯ উপজেলার শীতার্তদের মধ্যে রোববার পর্যন্ত ৪৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নগণ্য বলে জানান জনপ্রতিনিধিরা।
খুলনা: গত কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা ১০ থেকে ১১ ডিগ্রিতে নামছে। শীতের তীব্রতায় বিপাকে পড়েছে শিশু ও বয়স্ক মানুষ। শীতের এই পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন থাকবে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। শনি ও রোববার খুলনায় তাপমাত্রা ছিল ১২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এ বছরে খুলনাতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আবহাওয়া অফিস জানায়, ১৫ জানুয়ারির পর তাপমাত্রা একটু বাড়বে। তবে ১৮-১৯ তারিখের পর খুলনায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর আবার তাপমাত্রা কমতে থাকবে।
বরিশাল: বরিশালে টানা চার দিন তাপমাত্রা কমতে কমতে রোববার চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে ঠেকেছে। বরিশাল শেরে বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু ওয়ার্ডে ধারণক্ষমতার ১০ গুণ রোগী ভর্তি রয়েছে।