২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৫:৪৮:৪১ অপরাহ্ন
লাইসেন্স ছাড়াই চলে ধান-চালের ব্যবসা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০১-২০২৪
লাইসেন্স ছাড়াই চলে ধান-চালের ব্যবসা

এক মেট্রিক টনের বেশি খাদ্যশস্য মজুদ রেখে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য সরকারের খাদ্য বিভাগ থেকে ‘ফুড গ্রেইন’ লাইসেন্স নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তার পরও সারাদেশে ফুড গ্রেইন লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করে যাচ্ছেন ৮ হাজার ২৬৩ খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী। তারা লাইসেন্স ছাড়া ধান, চালসহ অন্যান্য শস্য মজুদ করেছেন। আবার লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীরাও লাইসেন্সের অতিরিক্ত খাদ্যশস্য মজুদ করছেন। এমনকি লাইসেন্স থাকলেও তা নবায়ন করেন না এমন ব্যবসায়ীর সংখ্যাও অনেক।


গত রবিবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ৩টি তদারকি টিম রাজধানীর কৃষি মার্কেট, টাউন হল মার্কেট, কাপ্তানবাজার এবং বাবুবাজারের চালের মার্কেটে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় কয়েকটি চাল আড়তদারের কাছে ফুড গ্রেইন লাইসেন্স পাওয়া যায়নি। এমন চিত্র সারাদেশে। ফুড গ্রেইন লাইসেন্স না থাকায় গত সপ্তাহে সারাদেশে ১১৪০টি রাইস মিলে অভিযান চালিয়ে ৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। এসব রাইস মিলে লাইসেন্স ছাড়াই ধান-চাল মজুদ করা হয়েছিল।


খাদ্য অধিদপ্তরের গত বছরের নভেম্বর মাসের হালনাগাদ তথ্য বলছে, দেশে খাদ্যশস্য ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৬২ হাজার ২৭৮ জন। এদের মধ্যে ফুড গ্রেইন লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী আছেন ৫৩ হাজার ৪০ জন। লাইসেন্সবিহীন ব্যবসায়ী রয়েছেন ৮ হাজার ২৬৩ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাইসেন্সবিহীন (২ হাজার ৮১৩) চাল ব্যবসায়ীর সংখ্যা রাজশাহী বিভাগে। লাইসেন্সবিহীন ব্যবসায়ী এবং অবৈধ মজুদ ঠেকাতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে খাদ্য অধিদপ্তর।


গত বৃহস্পতিবার প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল সভায় লাইসেন্স ছাড়া কেউ ধান-চালের ব্যবসা করতে পারবে না বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। লাইসেন্স ছাড়া কেউ অবৈধ মজুদ করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতেও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি।


জানা যায়, কন্ট্রোল অব এসেনশিয়াল কমোডিটিস অ্যাক্ট ১৯৫৬-এর ৩ ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের খাদ্য অফিস ফুড গ্রেইন লাইসেন্স প্রদান করে। মূলত ব্যবসায়ীদের অবৈধ মজুদে নিরুৎসাহিত করতে এই লাইসেন্স প্রদান করা হয়। খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, একজন খুচরা ব্যবসায়ী সর্বোচ্চ ১৫ টন খাদ্যশস্য ১৫ দিনের জন্য এবং একজন পাইকারি ব্যবসায়ী ৩০০ টন খাদ্যশস্য ত্রিশ দিনের জন্য মজুদ করতে পারবেন। একজন খাদ্যশস্য আমদানিকারকের জন্য লাইসেন্স ফি ১০ হাজার টাকা, পাইকারি বা আড়তদারদের জন্য ৫ হাজার টাকা এবং খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের জন্য লাইসেন্স ফি ১ হাজার টাকা।


ব্যবসায়ীরা বলছেন, খাদ্যশস্য ব্যবসায়ের জন্য ট্রেড লাইসেন্স, কৃষি বিপণন লাইসেন্স, ফুড গ্রেইন লাইসেন্সের মতো কয়েকটি লাইসেন্স নিতে হয়। এক ব্যবসার জন্য একাধিক লাইসেন্স এবং সেগুলোর নবায়ন খরচের ভয়ে অনেক ব্যবসায়ীই লাইসেন্স করেন না। আবার নতুন ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগ লাইসেন্স সম্পর্কে অবগত থাকেন না। ফলে অনেকে এর আওতায় আসেন না।


খাদ্য অধিদপ্তর বলছে, প্রতিষ্ঠিত বড় ব্যবসায়ীরা লাইসেন্স নিলেও মৌসুমি এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা লাইসেন্সে অনাগ্রহী। অধিদপ্তরের সরবরাহ, বণ্টন ও বিপণন বিভাগের পরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘সিজনাল এবং ছোট ব্যবসায়ীরাই লাইসেন্সের বাইরে আছে। এ ছাড়া কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ী আছে যারা এই লাইসেন্স সম্পর্কে জানেন না। আমাদের পক্ষ থেকে প্রচার এবং কর্মসূচি চলমান রয়েছে। মাঠ পর্যায়েও সেভাবে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। তারা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে সাপ্তাহিক রিপোর্ট প্রেরণ করে। তবে মাঠপর্যায়ে আমাদের কিছুটা জনবল সংকটও রয়েছে। আমরা আশা করছি খুব দ্রুতই বাকিদের লাইসেন্সের আওতায় নিয়ে আসতে পারব।’


শেয়ার করুন