২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০১:২৮:২১ অপরাহ্ন
ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টের পাঁচজনের পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে ইমিগ্রেশনে আরএমপির চিঠি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০১-২০২৪
ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টের পাঁচজনের পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে ইমিগ্রেশনে আরএমপির চিঠি

মোবাইল অ্যাপ ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টে বিনিয়োগের নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মামলার পাঁচ আসামির বিদেশ পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছে পুলিশ। রোববার বিকালে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) পক্ষ থেকে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে।

সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করে আরএমপির মুখপাত্র জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘মামলার পাঁচ আসামি যেন বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন তার জন্য আরএমপির পক্ষ থেকে ইমিগ্রেশনে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আশা করা হচ্ছে দ্রুতই তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়বেন।’

‘ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট’ নামের এই মোবাইল অ্যাপটির কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে এটি বন্ধ হয়ে যায়। অ্যাপটি বিনিয়োগের নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এ নিয়ে মোস্তাক হোসেন নামে প্রতারিত এক ব্যক্তি রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় গত ১৭ জানুয়ারি একটি মামলা করেন। এতে আসামি হিসেবে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়।

মামলায় যে পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- ইউএস এগ্রিমেন্টের রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান মো. ওয়াহেদুজ্জামান সোহাগ (৩৮), বিভাগীয় ব্যবস্থাপক ফাতেমা তুজ জহুরা ওরফে মিলি (৩২), কান্ট্রি লিডার মোতালেব হোসেন ভুঁইয়া (৩৫), কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারুক হোসাইন সুজন (৩৯) এবং রাজশাহী জেলা এজেন্ট মিঠুন মন্ডল (৩৬)। এদের মধ্যে ওয়াহেদুজ্জামান সোহাগ ও ফাতেমা তুজ জহুরা ওরফে মিলি স্বামী-স্ত্রী। তাদের বাড়ি রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়া এলাকায়। কান্ট্রি লিডার মোতালেব লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ, কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারুক মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল এবং রাজশাহী জেলা এজেন্ট মিঠুন নগরীর বোয়ালিয়াপাড়া মহল্লার বাসিন্দা। ঢাকায় থাকা কয়েকজনের নির্দেশনা মোতাবেক তারা কাজ করতেন। তবে মামলার পাঁচ আসামির দেশত্যাগেই নিষেধাজ্ঞা চেয়েছে পুলিশ।

মামলা করার সময় বাদী মোস্তাক হোসেন পুলিশকে রাজশাহীর প্রতারিত ৫৮ জনের নামের তালিকা দিয়েছেন। তাদের ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণও জানিয়েছেন। মোস্তাক হোসেন নিজে বিনিয়োগ করেছিলেন ৫ লাখ। অন্যদের বিনিয়োগ ১ লাখ থেকে ৩০ লাখ পর্যন্ত। মোস্তাক হোসেনের দাবি, রাজশাহীর প্রায় শতাধিক ব্যক্তি প্রতারিত হয়েছেন। তাদের লগ্নি করা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি। আর সারাদেশে এই অ্যাপের গ্রাহক ছিলেন প্রায় দুই হাজার জন। তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া টাকার পরিমাণ প্রায় ৩০০ কোটি।

ভুক্তভোগীরা জানান, প্রতিলাখে মাসে ১১ হাজার ২০০ টাকা ‘রেমিটেন্স’ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের টাকা নেওয়া হয়। প্রতারকেরা নগদ টাকা নিয়ে মোবাইলে ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টের একটি অ্যাপ ইনস্টল দিয়ে দিতেন। তবে এই অ্যাপে কোন কাজ করা লাগত না। প্রতারকেরা গ্রাহকের ব্যাংকে প্রথম এক-দুইমাস ডলারও পাঠিয়েছেন বিশ^াস অর্জনের জন্য। কাউকে কাউকে আবার হাতে হাতে নগদে মুনাফার টাকা দেওয়া হয়েছে। একপর্যায়ে অ্যাপ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গ্রাহকেরা যে কোন সময় বিনিয়োগের টাকা তুলে নিতে পারবেন বলা হলেও পরে আর কেউ তা ফেরত পাননি। দেশীয় প্রতারকেরাই টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

মামলার বাদী মোস্তাক হোসেন জানান, সোমবার দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) নূর ইসলাম তাকে ডেকেছিলেন। তিনিসহ চারজন ভুক্তভোগী থানায় গিয়েছিলেন। তারা প্রতারিত হওয়ার বিষয়ে জবানবন্দী দিয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তা দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা করবেন বলে তাদের আশ^াস দিয়েছেন।

শেয়ার করুন