০২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৫:৫৫:০৩ অপরাহ্ন
উদ্যোক্তাদের আশঙ্কা: প্রণোদনা কাটছাঁটে ধাক্কা খাবে রপ্তানি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০২-২০২৪
উদ্যোক্তাদের আশঙ্কা: প্রণোদনা কাটছাঁটে ধাক্কা খাবে রপ্তানি

রপ্তানিসংক্রান্ত নথিপত্র জালিয়াতি করে প্রণোদনা বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ বিস্তর। এর কারণে প্রকৃত রপ্তানিকারকদের পক্ষ থেকে রপ্তানি-প্রণোদনা যাচাই-বাছাইয়ের দাবিও দীর্ঘদিনের। তবে সে পথে না গিয়ে সরকার এমন এক সময়ে প্রণোদনা কাটছাঁট করল, যখন অর্থনীতিতে নানা সংকট চলছে। ডলার-সংকটে রিজার্ভ ঝুঁকিতে। তৈরি পোশাক রপ্তানি কমছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, রপ্তানি-প্রণোদনা কাটছাঁটে সরকারের হাতে কিছু টাকা জমবে ঠিকই; কিন্তু কঠিন সময়ে অর্থনৈতিক সংকট আরও জটিল হতে পারে।


রপ্তানি-প্রণোদনা কাটছাঁট করে গত মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।


ওই প্রজ্ঞাপনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দাবি করছে, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ (এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন) ঘটলে এমনিতেই এমন প্রণোদনা শতভাগ বাতিল করতে হবে। তারই আগাম প্রস্তুতি হিসেবে চলতি বছর থেকে নগদ সহায়তা অল্প অল্প করে কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই পদক্ষেপ রপ্তানিশিল্পকে নিজ পায়ে দাঁড়াতে সহায়ক হবে।


তবে সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তারা দাবি করেন, প্রণোদনা কাটছাঁটের এটা উপযুক্ত সময় নয়। বরং সরকার নিজের জন্য তহবিল জোগানোর অংশ হিসেবেই প্রণোদনার টাকা কেটে নিজের কাছে রাখতে চাইছে। উদ্যোক্তারা বলেন, এখন সরকারের হাতে দরকার বিপুল পরিমাণ ডলার। রপ্তানি বাড়িয়ে কীভাবে ডলারের মজুত বাড়ানো যায়, সেই পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো ডলারপ্রবাহ নিরুৎসাহিত করার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।


নিট পোশাক রপ্তানির শীর্ষ স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ফকির নিটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এফ এ জামান মনে করেন, নিট পোশাক রপ্তানিতে নগদ সহায়তা কমানোয় এই খাতের রপ্তানি ধাক্কা খাবে। দেশে অর্থনীতির সবচেয়ে খারাপ সময়ে রপ্তানি-প্রণোদনা কাটছাঁট করায় রপ্তানি ধসে পড়ার আশঙ্কা আছে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিট পোশাক আমাদের পোশাক রপ্তানির প্রাণ। এই খাতে প্রণোদনা কমায় প্রতিযোগীদের সঙ্গে পণ্যের দামের তুলনায় আমরা পিছিয়ে পড়ব। এমনিতেই আমাদের পোশাক রপ্তানি ভালো যাচ্ছে না। তার ওপর প্রণোদনার টাকা কমানোর সিদ্ধান্তে বিরূপ প্রভাব পড়বে পোশাক রপ্তানিতে।’


ফিনিশড চামড়া রপ্তানিতে ভর্তুকি ১০ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে। চামড়াজাত পণ্যে প্রণোদনা ১৫ থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ১২ শতাংশ। অন্যদিকে ক্রাস্ট লেদার রপ্তানিতে প্রণোদনা পুরোপুরি উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফিনিশড লেদার অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহম্মেদ মাহীন বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল থাকায় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের কদর দিন দিন কমছে। কৃত্রিম চামড়ার দৌরাত্ম্যে এই খাত এমনিতেই চ্যালেঞ্জে আছে। এই খাতের প্রণোদনা কাটছাঁট করা আমাদের শিল্পকে বিরূপ পরিস্থিতিতে ফেলে দেবে।’


ইউরোপে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করেন মো. শাহজাহান। এই খাতেও নগদ সহায়তা বা প্রণোদনা কমানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মো. শাহজাহান বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য ছিল পাট। নীতি-সহায়তার অভাবে এই খাত এখন ধুঁকছে। এই অবস্থায় পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির ওপর প্রণোদনার টাকা কমিয়ে দেওয়ায় আমাদের পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।’


বিজিএমইএ বলেছে, প্রচলিত নগদ সহায়তার হার ও কাঠামোতে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনা হয়েছে। এই পরিবর্তন শিল্পের জন্য মোটেও সহায়ক ও সময়োপযোগী নয়, বরং এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঝুঁকি ও বিপর্যয় ডেকে আনবে। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস এম মান্নান কচির বরাত দিয়ে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রণোদনা ছাড়া বাকি সব প্রণোদনার হার ২৫-৫০ শতাংশ কমানো হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রণোদনার হার কমানো না হলেও অধিকাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানার উৎপাদন এবং রপ্তানি কিছু বেসিক পণ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, বিশেষ করে টি-শার্ট, ট্রাউজার ও সোয়েটার। এই পণ্যগুলো সামগ্রিক প্রণোদনা ব্যবস্থা থেকে বাদ দেওয়ায় মূলত এসব পণ্য রপ্তানিকারক ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানাগুলো কোনো প্রণোদনাই পাবে না।


বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিকল্প ব্যবস্থা না করে হঠাৎ প্রচলিত ব্যবস্থা কর্তন শিল্প ও অর্থনীতির জন্য সহায়ক পদক্ষেপ বলে আমরা মনে করি না।’ এতে আরও বলা হয়, অংশীজনদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়া হঠাৎ এ রকম একটি সিদ্ধান্ত শিল্পকে চরমভাবে বিপর্যস্ত করবে।


শেয়ার করুন