২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১১:২৮:৩৪ পূর্বাহ্ন
আগ্রহ বাড়ছে বিশ্বশক্তির
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০২-২০২৪
আগ্রহ বাড়ছে বিশ্বশক্তির

ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে ঢাকাকে কাছে চায় যুক্তরাষ্ট্র * উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তার প্রত্যাশা ভারতের * বাংলাদেশের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত হতে চায় চীন * ঢাকাকে নিজের কক্ষপথে দেখতে চায় মস্কো 


বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোর আগ্রহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশগুলোর মধ্যে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা, কৌশলগত স্বার্থ, বঙ্গোপসাগরে সুবিধাপ্রাপ্তি, নিরাপত্তা ও বাণিজ্যিক স্বার্থের কারণে বাংলাদেশের প্রতি এই নজর।


মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের কারণে বিশ্ব শক্তিগুলো সেখানে প্রভাববিস্তারেও বাংলাদেশের সহায়তা কামনা করে। এ কারণে রোহিঙ্গা সংকটকে শক্তিশালী পক্ষগুলো আঞ্চলিক পরিস্থিতির ওপর নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে দাবার ঘুঁটি হিসাবে ব্যবহার করতে সচেষ্ট বলে দৃশ্যত অনুমিত হচ্ছে। গণতন্ত্র, মানবাধিকারের মতো ইস্যুও ভূরাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসাবে গণ্য করেন কেউ কেউ।


বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব আগে থেকেই ছিল। দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। এছাড়াও দুই বৈরী প্রতিবেশী ভারত ও চীনের মাঝামাঝি বাংলাদেশের অবস্থানকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। এছাড়া বছরের পর বছর স্থিতিশীল ছয় শতাংশ করে প্রবৃদ্ধি অর্জন বাংলাদেশের প্রতি শক্তিশালী দেশগুলোর নজর বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।


বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, রাশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্বার্থের ধরন বিভিন্ন। এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীন এবং বৈশ্বিক প্রতিপক্ষ রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের সাধারণ ধারণা যে, বাংলাদেশ চীনের দিকে ঝুঁকে আছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ সংক্ষেপে বিআরআই-এর ধারণা নিয়ে এলে বাংলাদেশ তাতে যোগ দেয়। বিআরআই-এর লক্ষ্য এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে বাণিজ্য ও সংস্কৃতির প্রবাহ বৃদ্ধি করা।


যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এশিয়ায় ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস) গ্রহণ করা হয়েছে। এটিকে অনেকে বিআরআই-এর কাউন্টার নীতি বলে মনে করেন। আইপিএস-এর নিরাপত্তা বলয় হলো কোয়ার্ড, যার সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশকে আইপিএস-এ যুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের কক্ষপথে নেওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই নীতি চীনের সঙ্গে কোনো বিরোধের সৃষ্টি করে কি না-সেসব পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ। তবে ওয়াশিংটনের চাপে ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক নামে বাংলাদেশ নিজের একটি নীতি গ্রহণ করেছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি থেকে আলাদা।


এটি বাংলাদেশের কোনো কৌশল নয়, দৃষ্টিভঙ্গি। বাংলাদেশ এই অঞ্চলে সামরিক প্রতিযোগিতা চায় না। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে সহযোগিতায় আপত্তি নেই। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে মূলত তার কক্ষপথে চায়। মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ চলতে থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সেখানে ভূমিকা পালনে বাংলাদেশের সহযোগিতা প্রয়োজন।


এ কারণে ঢাকার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি চায় না ওয়াশিংটন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। মিয়ানমারের পরিস্থিতির প্রতি নজর রেখেই বাইডেন এমন চিঠি লিখেছেন বলে কেউ কেউ মনে করেন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারে জান্তাবিরোধীদের সহায়তা দেওয়ার বিধান সংবলিত ‘বার্মা অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করেছে।


এছাড়াও বাংলাদেশের সঙ্গে দুটি সামরিক চুক্তি আকসা ও জিসোমিয়া সই করার জন্যও যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব ঝুলে আছে। বাংলাদেশে অস্ত্র বিক্রির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী অস্ত্র লবি চাপ সৃষ্টি করছে। কারণ, বাংলাদেশ তার সমরাস্ত্রের সিংহভাগ চীন থেকে সংগ্রহ করে থাকে। এছাড়াও বোয়িং উড়োজাহাজ বিক্রিসহ বাণিজ্যিক বিভিন্ন স্বার্থ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে কোনো একটি বিশ্বস্ত মিত্র দেশ খুঁজছে। সেটা হতে পারে বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষে একক বলয়ে যাওয়া কঠিন। এটা ভারসাম্য বিনষ্ট করবে।


বাংলাদেশকে সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী মনে করে ভারত। শেখ হাসিনা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন দমন করায় অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন। এ কারণে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে আস্থা, বিশ্বাস বেড়েছে। দিল্লির সঙ্গে বৈরী সম্পর্কের কোনো সরকার বাংলাদেশে চায় না ভারত। বৈরী সরকার ক্ষমতায় থাকলে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা ফের চাঙা হতে পারে। এছাড়াও ভারতের সঙ্গে বৈরী কোনো সরকার চীনের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে পারে বলে দিল্লির ভয় রয়েছে।


বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে নিবিড় সংযোগ স্থাপনে আরও সহায়তা চায়। কারণ, ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একমাত্র সড়ক ও রেল সংযোগ স্থাপিত হয়েছে ‘চিকেন নেক’ খ্যাত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ শিলিগুড়ি করিডর দিয়ে। এ করিডরের পাশে নেপাল ও ভুটানের অবস্থান। কোনো কারণে চীনের সঙ্গে ভারতের বিরোধ দেখা দিলে শিলিগুড়ি করিডর বন্ধ হলে বিমান ছাড়া ভারতের দুই অংশের যোগাযোগ সম্ভব নয়।


শেয়ার করুন