দেশে প্রায় দুই বছর ধরে ডলার-সংকট চলছে। এই সংকটের কারণে ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ১১০ টাকা হয়েছে। তবে বর্তমানে বাজারে লেনদেন হচ্ছে ১২৪ টাকারও বেশি দামে। ডলার-সংকটে চাহিদামতো পণ্য আমদানি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। আবার বিদেশী কোম্পানিগুলো মুনাফাও নিজ দেশে নিতে পারছে না। একই সঙ্গে নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত থেকে প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি অর্থবছরেই রিজার্ভ থেকে ৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে রিজার্ভও কমছে। ডলারের এমন নানামুখী সংকটে দাম নিয়ন্ত্রণ ও বাজারভিত্তিক করতে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতিতে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণ করা হবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে উচ্চ বিনিময় হারের অস্থিরতা, মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময় দেশীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নের হুমকি এড়াতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে ‘ক্রলিং পেগ’। তবে মুদ্রাবাজার সংকট কেটে গেলে এই পদ্ধতি কার্যকর থাকে না।
জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ডলার বিক্রি বন্ধের কথা জানালেও চলতি অর্থবছরেই রিজার্ভ থেকে ৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান প্রায় ২৭ শতাংশ কমেছে। একাধারে ডলারের বিপরীতে টাকার মান অবমূল্যায়নের সুযোগ নিয়ে বিশেষ গোষ্ঠী ও কিছু এক্সচেঞ্জ হাউস কম দামে কেনা ডলার মজুত করে বেশি দামে বিক্রি করে অস্বাভাবিক মুনাফা করছে।
আবার প্রবাসীদের একটা অংশও বিলম্বে ডলার দেশে পাঠাচ্ছে। বিষয়টি এমন হয়েছে, ডলার যত বিলম্বে বাজারে ছাড়া হবে তত বেশি রেট পাওয়া যাবে। মানুষের এমন প্রত্যাশা থেকে বের হওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েক দফায় ডলারের দাম কমিয়েছে এবং বাড়িয়েছে। ডলারের বাজার অস্থিরতার নেপথ্যে সম্ভাব্য নানা বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই পর্যালোচনা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) মুদ্রানীতি ঘোষণা দেওয়ার সময় বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর আগে ডলারের দাম নির্ধারণে সাময়িক ভিত্তিতে ‘ক্রলিং পেগ’ চালু করা হবে।