রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভায় একটি আরসিসি ড্রেন নির্মাণ কাজে ঘাপলা ধরা পড়েছে। নকশা লঙ্ঘন এবং কম রড ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। এ অবস্থায় তিন দিনের মধ্যে ত্রুটি সংশোধনের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সকালে পৌরসভার এই চিঠি হাতে পেয়েছেন ঠিকাদার। ‘স্থানীয় সরকার কোভিড-১৯ রেসপন্স এবং রিকভারি প্রকল্প’-এর আওতায় প্রায় ৪৫ লাখ টাকায় নওহাটা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভোলাবাড়ি সড়কে এই ২২৫ মিটার আরসিসি ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ করা হচ্ছে। মেসার্স শাপলা ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স কাজটি করছেন শামীম আহমেদ ও সুমন আলী নামের দুই ঠিকাদার। কয়েকদিন আগে কাজটি শুরু হয়। শামীম স্থানীয় কৃষকদল নেতা, সুমন বিএনপি নেতা।
গত ২৭ জুলাই পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগের আকস্মিক পরিদর্শনে কাজে অনিয়ম ধরা পড়ে। পরদিন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করে দেওয়া চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শিব্বির আহমেদ আজমী। চিঠিতে বলা হয়, ২৭ জুলাই নওহাটা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে নিয়ে কাজ পরিদর্শন করেন। তখন কাজে ত্রুটি দেখা যায়।
চিঠিতে বলা হয়, ড্রেনের ভার্টিক্যাল ও বেস রড ১৫০ মিলিমিটার দূরত্বে স্থাপনের নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে তা ২০০ মিলিমিটার দূরত্বে স্থাপন করা হয়েছে। বেশি দূরত্বের রড ড্রেনের কাঠামোর স্থায়িত্বকে মারাত্মকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। মাটি খননের পর বালু দিয়ে সলিং করা হলেও তা সঠিক লেভেল অনুযায়ী হয়নি। ফলে ড্রেনের পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খনন করা মাটি রাস্তার পাশে ফেলে রেখেছে। এতে এই বর্ষায় পথচারীদের চলাচলে ব্যাপক অসুবিধা হচ্ছে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। এসব ত্রুটি দূর করতে ঠিকাদারকে তিন দিন সময় দেওয়া হয়েছে।
এদিকে নির্মাণকাজের শুরু থেকেই এই কাজে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা বলছেন, রাস্তার পাশে মাটি ফেলে রাখায় এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় শিশু ও বয়স্কদের চলাচল বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। স্থানীয় এক দোকানদার জানান, রাস্তার পাশে মাটির স্তূপের কারণে তার দোকানে ক্রেতাদের আনাগোনা কমে গেছে। তার ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে।
নওহাটা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শিব্বির আহমেদ আজমী বলেন, ‘সরকারি প্রকল্পে কোনো ধরনের অনিয়ম সহ্য করা হবে না। আমরা কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করতে চাই। এ কারণেই চিঠি দেওয়া হয়েছে। এরপরও কাজে গাফিলতির প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেব।’
চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে ঠিকাদার শামীম আহমেদ বলেন, ‘আমি আজই সকালে পৌরসভা থেকে চিঠি পেয়েছি। কাজে কোন ত্রুটি থাকলে আমাকে তো মৌখিকভাবে আগে জানানো উচিত ছিল। কাজে ত্রুটি থাকলে আমি ঠিক করে দিতাম। সেটা না করলে চিঠি দিত। কিন্তু কিছু না জানিয়েই সরাসরি চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর পেছনে অন্য কারণ আছে।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নওহাটা পৌরসভার প্রশাসক আরাফাত আমান আজিজ বলেন, ‘জনগণের টাকায় কোনো রকম নয়ছয় বরদাশত করা হবে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যদি নকশা অনুযায়ী সঠিকভাবে কাজ সম্পন্ন না করে, তাহলে তাদের একটি টাকাও বিল দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে কার্যাদেশ বাতিল করে প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে।