২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ১১:৩৯:২২ অপরাহ্ন
গুলিস্তান পাতাল মার্কেট: অতি ঝুঁকিপূর্ণই ঘোষণার ১০ মাসেও কোনো ব্যবস্থা নেই
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৩-২০২৪
গুলিস্তান পাতাল মার্কেট: অতি ঝুঁকিপূর্ণই ঘোষণার ১০ মাসেও কোনো ব্যবস্থা নেই

রাজধানীর গুলিস্তান পাতাল মার্কেটকে ২০২৩ সালের এপ্রিলে অতিঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করেছিল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। কিন্তু ১০ মাস পেরোলেও এই মার্কেটে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। ব্যবসায়ীরাও বলেছেন, তাঁরা আগুনের মতো দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে আছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন অপরিকল্পিত মার্কেট থাকারই কোনো দরকার নেই। এখানে আগুন লাগলে আর সেই আগুনের ভয়াবহতা বাড়লে কাউকে বাঁচানো যাবে না।


জানা যায়, গত বছরের ১৩ এপ্রিল মার্কেট জরিপ শেষে ফায়ার সার্ভিস ঢাকা বিভাগের জোন-১-এর তখনকার উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ বজলুর রশিদ জানিয়েছিলেন, এই মার্কেট আগুনের দিক থেকে অতিঝুঁকিপূর্ণ একটি স্থাপনা। মার্কেটের নিচে পানির রিজার্ভার ও আগুন নেভানোর আধুনিক সরঞ্জাম নেই। আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ঢোকার মতো প্রশস্ত পথও নেই। যে পথটি আছে তা খুবই সংকীর্ণ। এ ছাড়া ফায়ার ডিটেক্টর ও অ্যালার্ম সিস্টেম নেই। মার্কেটের ভেতরে বাতাস চলাচলের অবস্থাও খুবই খারাপ।


ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালেও এই মার্কেট পরিদর্শন শেষে ‘অতিঝুঁকিপূর্ণ’ বলে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল। ২০২৩ সালে অভিযানের সময় মার্কেট কর্তৃপক্ষ কোনো অনাপত্তিপত্র দেখাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসকে।


ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা যায়, গুলিস্তানে আন্ডারপাসের সঙ্গে তৈরি ভূগর্ভস্থ এই মার্কেট মোবাইল ফোন মেরামত, মোবাইল ফোনের খুচরা যন্ত্রাংশ ও ইলেকট্রনিক পণ্যের জন্য পরিচিত। এখানে দোকান আছে ১০৪টি। ব্যবসায়ী ও মেকানিক আছেন ছয় শতাধিক।


সব মিলিয়ে মার্কেটে ১ হাজারের বেশি মানুষ সব সময় থাকেন। দুই ধরনের দোকান আছে মার্কেটটিতে। মোবাইল ফোনের অ্যাকসেসরিজ ও যন্ত্রাংশের দোকান। সব মিলিয়ে প্রায় ৭০ কোটি টাকার সম্পদ আছে।


গতকাল শনিবার মার্কেটটিতে গিয়ে দেখা যায়, মার্কেটে ঢোকা ও বেরোনোর জন্য চারপাশে দুটি করে আটটি গেট। ১ ও ২ নম্বর গেটে চারটি, ৩ ও ৪ নম্বর গেটে দুটি, ৫ ও ৬ নম্বর গেটে একটি এবং ৭ ও ৮ নম্বর গেটে তিনিটি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র আছে। এগুলোর মেয়াদ আগামী অক্টোবর পর্যন্ত। ১ নম্বর গেটে একটি পানির লাইন করা হয়েছে।


মার্কেটের আমানত টেলিকমের ব্যবসায়ী মো. সালাউদ্দিন বলেন, সম্পূর্ণ ঝুঁকির মধ্যে আছেন তাঁরা। গত বছরের অভিযানের পর তেমন কোনো পরিবর্তন তাঁরা লক্ষ করেননি।


ব্যবসায়ী মো. আব্দুর রহমান বলেন, এই মার্কেটের সবচেয়ে বড় সমস্যা পানি। মার্কেটটি যেহেতু মাটির নিচে, তাই সব জায়গায় ফায়ার ডিটেক্টর ও অ্যালার্ম সিস্টেম থাকা দরকার।


সাইফ টেলিকমের মো. জাহিদ বলেন, আগুনের ঝুঁকির জন্য গত পাঁচ মাস কোনো ব্যবস্থা নিতে তিনি দেখেননি। বেইলি রোডের মতো আগুন লাগলে তাঁরা এখান থেকে বেঁচে ফিরতে পারবেন না। মাঝেমধ্যে ক্রেতা বেশি হলে মার্কেটে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। 

তবে পাতাল মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সভাপতি সোহরাব হোসেন নান্নু বলেন, ওই সময় ফায়ার অধিদপ্তর কেন তাঁদের মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে, তা তাঁর জানা নেই। তিনি বলেন, তাঁদের পানির সমস্যার সমাধান করার কথা সিটি করপোরেশনের। এ বিষয়ে তাঁর কিছুই করার নেই। তাঁরা নিয়মিত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করেন। এর আগে দুবার আগুন লাগলেও তা একটি দোকানেই সীমাবদ্ধ ছিল।  


তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, মালিক সমিতি মাঝেমধ্যে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে। তবে সেই আলোচনায় কোনো ফল আসে না। পানির লাইনের কথা বললেও সেটির কোনো সমাধান হয়নি। অনেক আগে শুধু সিলিং রং করা হয়েছে।


ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মো. বজলুর রশিদ এখন অপারেশন বিভাগের মেকানিক্যাল ট্রান্সপোর্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত। তিনি বলেন, ‘আপনি যে পরিবর্তনের কথা বলছেন, তাতে এখন পর্যন্ত মার্কেটটি অতিঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়ই রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ওই মার্কেটে আগুন লাগলে পানি সংগ্রহ করতে সমস্যা হবে। শুধু অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র পরিবর্তন করে তেমন সুবিধা হবে না। এগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে কাজে লাগে। যদি আগুন পাঁচ মিনিটের বেশি সময় থাকে, তবে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।


বজলুর রশিদ বলেন, মার্কেটটিতে যে ধরনের সরঞ্জাম বিক্রি হয় তা খুবই দাহ্য। দোকানগুলো পাশাপাশি থাকায় আগুন ছড়িয়ে যাবে মাত্র ৫ সেকেন্ডে। বেইলি রোডের মতো যদি ৫ থেকে ৭ মিনিট পার হয়, তাহলে কেউ তাঁদের বাঁচাতে পারবে না। আর এসব সরঞ্জামে আগুন ধরলে বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড উৎপন্ন হয়। তাই বেশি ক্ষতি হবে ধোঁয়ার কারণে।


নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, সিটি করপোরেশন টাকা আয়ের জন্য মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।


ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহীর বক্তব্য জানতে ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তবে প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না।


শেয়ার করুন