২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:১৭:০৪ অপরাহ্ন
সর্বজনীন পেনশন বাধ্যতামূলক জুলাইয়ে, মূল বেতনের ১০ শতাংশ জমা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৩-২০২৪
সর্বজনীন পেনশন বাধ্যতামূলক জুলাইয়ে, মূল বেতনের ১০ শতাংশ জমা

অর্থনৈতিক চাপ কমাতে দেশের ৪০০ স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং এসবের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানে ‘প্রত্যয়’ নামে নতুন পেনশন স্কিম চালু হচ্ছে। আগামী ১ জুলাইয়ের পর যাঁরা এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে যোগ দেবেন তাঁদের জন্য এ স্কিম বাধ্যতামূলক করা হবে। বর্তমানে যাঁরা কর্মরত তাঁরা বিদ্যমান পদ্ধতিতেই পেনশন পাবেন। তবে কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্যে ৫০ বছরের কম বয়সীরা স্বেচ্ছায় কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড (সিপিএফ) প্রদেয় ভবিষ্য তহবিলের বদলে ‘প্রত্যয়’ স্কিমে যোগ দিতে পারবেন। অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনের পর এরই মধ্যে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবের সারসংক্ষেপে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থ বিভাগ শিগগিরই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে রাজি হননি।


জানা গেছে, এই স্কিমে প্রতি মাসে জমা দেওয়া যাবে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা অথবা মূল বেতনের ১০ শতাংশ। এর মধ্যে যেটি কম, সেই পরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সরকার দেবে। ওই অর্থের সমপরিমাণ টাকা সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর মাসিক বেতন থেকে কেটে তাঁর জন্য নির্ধারিত কর্পাস হিসাবে জমা রাখা হবে। জমা হওয়া অর্থ বিনিয়োগ করে প্রাপ্ত মুনাফাও জমা হবে। চাকরিজীবন শেষে সংশ্লিষ্ট কর্মী সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩-এর আওতায় আজীবন মাসিক পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন।


প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের অবসরকালীন আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে বর্তমানে ‘পেনশন স্কিম’ ও ‘আনুতোষিক স্কিম’ নামে দুটি পদ্ধতি চালু রয়েছে। উভয় ক্ষেত্রে অবসর সুবিধাপ্রাপ্তির জন্য কর্মচারীকে কোনো চাঁদা দিতে হয় না। সম্প্রতি দেশে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সর্বসাধারণের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের (মন্ত্রণালয় বা বিভাগ, অধিদপ্তর বা পরিদপ্তর ও তার অধীনস্থ অফিস) কর্মচারীরা সাধারণত ‘পেনশন স্কিম’-এর আওতাভুক্ত। তাঁরা চাকরি শেষে অবসরকালীন সুবিধা হিসেবে এককালীন আনুতোষিকসহ মাসিক পেনশন সুবিধা, চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ও নববর্ষ ভাতা পান। অন্যদিকে আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত এবং গভর্নিং বডি বা পরিচালনা পর্ষদ দ্বারা পরিচালিত বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের (স্বশাসিত, সংবিধিবদ্ধ, রাষ্ট্রায়ত্ত, ইনস্টিটিউট, করপোরেশন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, কর্তৃপক্ষ, বোর্ড, কমিশন, একাডেমি প্রভৃতি) কর্মচারীরা সাধারণত আনুতোষিক স্কিমের অন্তর্ভুক্ত। তাঁরা চাকরিজীবন শেষে অবসরকালীন সুবিধা হিসেবে এককালীন আনুতোষিক সুবিধা পান। স্কিম দুটির অবসরকালীন আর্থিক সুবিধার বড় পার্থক্য থাকায় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারীরা পেনশন স্কিমের অন্তর্ভুক্ত হতে আগ্রহী। সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের মতো পেনশন স্কিম পেতে অর্থ বিভাগে তাঁরা দেনদরবারও করছেন। অনেক প্রতিষ্ঠান নিজস্ব আয়ের মাধ্যমে স্বীয় কর্মচারীদের পেনশন স্কিম চালুর জন্য অর্থ বিভাগের সম্মতি নিয়েছে; কিন্তু নিজস্ব আয়ে চালাতে না পেরে অর্থ বিভাগের কাছে বাজেট দাবি করছে। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।


প্রধানমন্ত্রীকে আরও জানানো হয়েছে, দেশে বিদ্যমান ৩৯১টি স্বায়ত্তশাসিত বা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৫টি নিজস্ব আয়ে পেনশন স্কিম পরিচালনার শর্তে অর্থ বিভাগের সম্মতি নিয়ে স্কিম চালু করেছে। এর মধ্যে পেনশন স্কিম চালু রেখেছে ১৯টি। বাকি ১৬টি প্রতিষ্ঠান সরকারি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। এ ছাড়া ৫২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৬৬টি স্বশাসিত বা স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান অর্থ বিভাগের অনুমতি ছাড়াই পেনশন স্কিম চালু করে নিজস্ব আয়ে চালাতে না পেরে বাজেট বরাদ্দ দিতে অর্থ বিভাগকে অনুরোধ করেছে। ফলে ৩৯১টি স্বায়ত্তশাসিত বা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অবশিষ্ট ২৯০টিতে বর্তমানে আনুতোষিক স্কিম চালু আছে। এসব প্রতিষ্ঠানেও পেনশন স্কিম চালু করতে অর্থ বিভাগের ওপর চাপ আছে।


অর্থ বিভাগের প্রস্তাব থেকে জানা গেছে, গত পাঁচ অর্থবছরে পেনশন ও অবসর সুবিধা খাতে সরকারের ব্যয় গড়ে ১০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এ বিষয়টি উল্লেখ করে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ‘পেনশন ও অবসর সুবিধা’ খাতে মোট ৩৪ হাজার ১৭৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটি বর্তমান জিডিপির শূন্য দশমিক ৬৭ শতাংশ, মোট বাজেটের ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং পরিচালন বাজেটের ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিতে আনুতোষিক স্কিম চালু আছে, এমন ২৯০টি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্যও যদি সরকারি কর্মচারীদের মতো পেনশন স্কিম চালু করা হয়, তবে সরকারের আর্থিক বোঝা বাড়বে। বাজেটের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হবে এবং তা দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এ অবস্থায় প্রত্যয় স্কিম চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।


জানা গেছে, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দেশের বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় এনে তাঁদের বৃদ্ধকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি ছিল। এজন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩ প্রণয়ন করা হয়। গত বছরের ১৭ আগস্ট চারটি পেনশন স্কিম চালু করা হয়। স্কিমগুলো হলো প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘প্রবাস’; বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের জন্য ‘প্রগতি’; রিকশাচালক, কৃষক, শ্রমিক, কামার-কুমার, জেলে-তাঁতি ইত্যাদি স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য ‘সুরক্ষা’ এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ‘সমতা’।


বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এ অবস্থায় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভবিষ্যতে যাঁরা নতুনভাবে চাকরিতে যোগ দেবেন এবং আগামী দিনে নতুনভাবে সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় একটি স্কিম চালু হলে অবসর সুবিধা খাতে সরকারের আর্থিক সংশ্লেষ কমবে। 


শেয়ার করুন