অগ্নিঝরা মার্চের ১৫তম দিন আজ। ১৯৭১ সালের ১৫ মার্চ ছিল লাগাতার অসহযোগ আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ের অষ্টম দিন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে আরও উত্তপ্ত বাংলাদেশ। উত্তাল-অগ্নিগর্ভ পূর্ব পাকিস্তানে আসেন ইয়াহিয়া খান। তবে এদিন অফিস-আদালতে চলে পূর্ণ কর্মবিরতি। রাজধানী ঢাকায় দিনব্যাপী সভা ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারি-বেসরকারি অফিস ভবন এবং যানবাহনে ওড়ে কালো পতাকা। মুক্তিকামী বাঙালির কাছে এ আন্দোলন অস্তিত্বের লড়াইয়ে পরিণত হয়। ঢাকা শহরের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন শহরে সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিং চলতে থাকে।
১৩ মার্চ জারিকৃত ১১৫ নং সামরিক আইন আদেশে সরকারি কর্মচারীদের ১৫ মার্চ কাজে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হলেও তারা যোগ দেননি। বরং তারা সামরিক আদেশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেন এবং নাখালপাড়ায় এক প্রতিবাদ সভা করে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত অসহযোগ কর্মসূচির প্রতি পুনর্বার একাত্মতা ঘোষণা করেন। তোপখানা রোডে বেগম সুফিয়া কামালের সভাপতিত্বে পূর্ব পাকিস্তান মহিলা পরিষদের নারী সমাবেশ থেকেও বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত সব কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানানো হয়।
বিকালে বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের জনসভায় বলা হয়, বাংলাদেশে কেবল বাংলার সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই কোনো নির্দেশ জারি করতে পারেন এবং বাংলার জনসাধারণ কেবল সেই বিধিই মেনে চলবে। কেননা বঙ্গবন্ধু সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির নির্বাচিত নেতা।
এদিকে ঢাকা নগরীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভুয়া স্বেচ্ছাসেবকরা গোলযোগ তৈরির চেষ্টা করলে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান আব্দুর রাজ্জাক বিবৃতিতে বলেন, কিছুসংখ্যক দুষ্কৃতকারী আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর পোশাক ও টুপি নকল করে জনসাধারণের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে। এসব দুষ্কৃতকারীকে ধরে আওয়ামী লীগ অফিসে প্রেরণ করতে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।
১৯৭১ সালের ১৫ মার্চ সমঝোতার নাটক করতে ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানে এলেও মুক্তিকামী বাঙালি তাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি অব্যাহত রাখে। দেশবাসীকে অধিকার বঞ্চিত করার প্রতিবাদে শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীরা তাদের খেতাব বর্জন অব্যাহত রাখেন। শিল্পাচার্য জয়নুলের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে সাংবাদিক-সাহিত্যিক আবুল কালাম শামসুদ্দীন ও অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী রাষ্ট্রীয় খেতাব বর্জন করেন। বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে এ খেতাব বর্জনের বিষয়টি ব্যাপক সাড়া ফেলে। এদিন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সব শিল্পী, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীকে রাষ্ট্রীয় খেতাব বর্জনের আহ্বান জানায়।
দেশবাসী বেশি উৎসাহ ও উদ্দীপনা পেয়ে সংগ্রামের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে থাকে। এদিন ঢাকা শহরে শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক সবার সভা-সমাবেশ চলতেই থাকে। অধ্যাপক আবুল ফজলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান, সাংবাদিক নূর ইসলাম প্রমুখ। বুদ্ধিজীবীদের পাশাপাশি টেলিভিশন নাট্যশিল্পী সংসদ এদিন স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। তাদের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আবদুল মজিদ। বক্তব্য দেন সৈয়দ হাসান ইমাম, ফরিদ আলী, শওকত আকবর, আলতাফ হোসেন, রওশন জামিল, আলেয়া ফেরদৌস প্রমুখ।